বরিশালে বিনা-২৫ ধানের পরীক্ষামূলক আবাদে বাম্পার ফলন

বিনা-২৫ জাতের ধান কাটার উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত সচিব রুহুল আমিন তালুকদার ও জাতটির উদ্ভাবক কৃষিবিজ্ঞানী সাকিনা খানম। আজ বৃহস্পতিবার বরিশালের দপদপিয়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

বরিশাল বিভাগে এবার বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) উদ্ভাবিত প্রিমিয়াম কোয়ালিটির বোরো ধানের জাত বিনা ধান-২৫ (শেখ রাসেল) পরীক্ষামূলক আবাদ করে ব্যাপক সাফল্য পাওয়া গেছে। এতে এবার প্রতি হেক্টরে ৭ দশমিক ৬২ টন ধান উৎপাদিত হয়েছে।

বিভাগীয় কৃষি বিভাগের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এবার পরীক্ষামূলক জাতটির আবাদ করে সাফল্য পাওয়ায় এর বীজ সংরক্ষণ করে আগামী মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপকভাবে মাঠপর্যায়ে এ ধানের আবাদ করা হবে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বরিশাল নগরের সীমান্তবর্তী ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার দপদপিয়ায় একটি প্রদর্শনী খামারে ধান কর্তন এবং এ ধান আবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণে আলোচনা সভা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. রুহুল আমিন তালুকদার।

মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘বিনা-২৫ ধান বোরোর উন্নত একটি নতুন জাত। এর চালের আকার চিকন ও লম্বা। আমরা বিদেশ থেকে যে বাসমতী চাল আমদানি করি, এটা সেই চালের মতো। এ জন্য এই চালের চাহিদা ক্রেতাদের কাছে বেশি। এর বাজারমূল্যও ভালো। উৎপাদন ব্যয় অন্য ধানের মতোই। কিন্তু ফলন অন্য ধানের চেয়ে ভালো হওয়ায় কৃষকেরা লাভবান হবেন।’

মো. রুহুল আমিন আরও বলেন, ‘জাতটি আমাদের দেশে বাসমতী চালের বিকল্প পণ্য হতে পারে। এর ফলন বেশি। রোগব্যাধি কম হওয়ায় বীজ সংরক্ষণ করার সুবিধা রয়েছে। কৃষিকে বহুমুখীকরণ এবং কৃষকদের ভালো লাভের মাধ্যমে কৃষিকাজে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে এই জাত আবাদে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।’ তিনি জাতটি ব্যবহার করে কৃষকদের আয় বৃদ্ধি এবং তা ছড়িয়ে দিতে কৃষক ও কৃষি বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের আহ্বান জানান।

সভাপতিত্ব করেন বিনার মহাপরিচালক মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) বরিশাল বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালক মো. শওকত ওসমান, ঝালকাঠির উপপরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম, বরিশালের উপপরিচালক মো. মুরাদুল হাসান, বিনা ধান-২৫-এর উদ্ভাবক ও বিনার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সাকিনা খানম।

কৃষি তথ্য সার্ভিসের বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তা নাহিদ বিন রফিক অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে তিন শতাধিক কৃষক উপস্থিত ছিলেন।

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, চলতি মৌসুমে প্রথম বরিশাল বিভাগের ৪২ উপজেলার মধ্যে ৩৬ উপজেলায় প্রতিটিতে এক বিঘা করে ৩৫ বিঘা (প্রতি বিঘা সমান ৩৩ শতাংশ) জমিতে বিনা ধান-২৫ আবাদ করা হয়েছে। এতে প্রতি বিঘায় ২২ মণ এবং প্রতি হেক্টরে ৭ দশমিক ৬২ মণ ধান উৎপাদিত হয়েছে। এবার উৎপাদিত ধান বীজ হিসেবে কৃষকেরা সংরক্ষণ করবেন এবং আগামী মৌসুমে তা ব্যাপক আকারে চাষ করবেন। পরীক্ষামূলক আবাদে এবার সুবিধাভোগী কৃষকদের মধ্যে বিনা মূল্যে এ ধানের বীজ সরবরাহ করা হয়েছিল।

সারা দেশে ৩৯৬টি উপজেলায় এবার পরীক্ষামূলকভাবে ৩৯৬ বিঘা জমিতে এ ধানের আবাদ করা হয়। পরে অতিরিক্ত সচিব মো. রুহুল আমিন তালুকদার বরিশালের বাকেরগঞ্জের বোয়ালিয়া গ্রামে বিনা কৃষিপ্রযুক্তি পল্লি উদ্বোধন করেন।