রূপসার বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন সড়কে পানি জমে হাজারো মানুষের ভোগান্তি

রূপসা উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন সড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সংস্কার না করায় এটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

খুলনার রূপসা উপজেলার বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন সড়কের খানাখন্দে বৃষ্টি হলেই পানি জমে থাকে। এতে এই সড়ক দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে যানবাহন
ছবি: প্রথম আলো

‘এই রাস্তার দুর্ভোগ বইলে বোঝানি যাবে না। বর্ষা পড়লি রাস্তা দিয়ে চলাই যায় না। আর শুকনোর সময় তো ধুলোয় পাগল হইয়ি যাতি হয়। এখন এইরম খারাপ হইছে ভ্যান পুরো পথে যাচ্ছে না। কিছুটা পথে ভ্যান চলছে; তাতে উঠলি শরীলির বারোটা বাইজে যায়।’

কথাগুলো রূপসা উপজেলার চর রূপসার ছাদভাঙা বরফকল এলাকার মুদিদোকানি মুজিবর মোল্লার। তাঁর দোকানের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন সড়কের দুরবস্থার বিষয়ে শনিবার তিনি এসব কথা বলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রূপসা খেয়াঘাটের পূর্বপারের বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন ও বীর বিক্রম মহিবুল্লাহর সমাধি কমপ্লেক্সের ঠিক পাশ দিয়ে রূপসা সেতুর দিকে চলে যাওয়া সড়কটিই বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন সড়ক। বীরশ্রেষ্ঠের নামের এই সড়ক এখন বেহাল। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় যানবাহন চলাচল, এমনকি হেঁটে চলাচলও কষ্টকর হয়ে পড়েছে। বর্ষাকালে সড়কটির অবস্থা আরও খারাপ হয়ে উঠেছে। সড়কে যাত্রীরা যেমন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন, তেমনি চালাকেরাও হচ্ছেন নাস্তানাবুদ। ভাঙাচোরা থাকায় প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা।

সড়কটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীন। তবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা সড়কটি কাগজপত্রে ‘গ্রামীণ সড়ক-এ’ শ্রেণির। গ্রামীণ সড়কের নকশায় তৈরি এই সড়কে মাছবাহী বড় বড়  অনেক ট্রাক, পিকআপ ভ্যান। এতেই সড়কটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গেছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) রূপসা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রায় ২০ বছর আগে সড়কটি যখন নির্মাণ করা হয়, তখন তেমন গুরুত্ব ছিল না। নামে গ্রামীণ সড়ক হলেও এখন গুরুত্ব অনেক। ওই সড়কের সর্বোচ্চ ২০ টন ধারণক্ষমতার যানবাহন চলাচল করার কথা। কিন্তু সড়কটি দিয়ে নিয়মিত দীর্ঘদিন ধরে সার, বালু, পাথর ও কয়লাবোঝাই ১০ চাকার ট্রাক চলাচলের কারণে সড়কটি নষ্ট হয়ে গেছে।

জানা গেছে, সড়কটির দুই পাশে ছোট-বড় অসংখ্য শিল্পকারখানা। এর মধ্যে দেশের অন্যতম রপ্তানি খাত চিংড়ি হিমায়িত করে প্রক্রিয়াজাতকরণের অন্তত ১৭টি কারখানা,  বরফকল, অসংখ্য মাছের ডিপো, ৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কোস্টগার্ড কার্যালয়, পুলিশ ক্যাম্পসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। চর রূপসা, বাগমারা, জাবুসা এলাকার মানুষ যাতায়াতের জন্য সড়কটি ব্যবহার করে। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় সড়কের বিভিন্ন স্থান ভাঙাচোরা। সড়কের পাশের বিভিন্ন কোম্পানির কয়েক হাজার শ্রমিক ঝুঁকি নিয়ে এই সড়ক দিয়ে চলাচল করছেন।

একটি চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানার শ্রমিকদের সুপারভাইজার মো. সালাম বলেন, ‘সবারই দুর্ভোগ। বিশেষ করে যাঁরা এই এলাকার বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজ করেন, তাঁদের চলাচলে ভোগান্তির শেষ নেই। বৃষ্টি হলে খালি মানুষই হাঁটা যায় না। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় আগস্ট মাসের প্রথম দিকে বাধ্য হয়েই সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী, রিকশা-ভ্যানচালকেরা খানাখন্দ মেরামতের চেষ্টা করেছেন। ’

এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, প্রায় সাত কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি রূপসা ফেরিঘাটের পূর্ব পার থেকে শুরু হয়ে চর রূপসা, বাগমারা হয়ে জাবুসা বাজারে গিয়ে শেষ হয়েছে। সড়কটির প্রায় তিন কিলোমিটার এখনো পুরোটাই কাঁচা। আর সড়কের ওরিয়ন পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে রূপসা সেতুর নিচ দিয়ে রূপসা ফেরিঘাট পর্যন্ত চার কিলোমিটার পাকা অংশে ২০১৭ সালের পর কোনো ধরনের কাজই হয়নি।

গত শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কের পাকা অংশের প্রায় পুরোটাই ভাঙাচোরা। রূপসা সেতু থেকে পাওয়ার প্ল্যান্ট পর্যন্ত প্রায় বেশ কয়েক জায়গায় নদীভাঙন আছে। সড়কের বেশির ভাগ জায়গায় পিচের চিহ্নমাত্র নেই। নেই খোয়া। মাটি বেরিয়ে আসায় সেগুলোকে কাঁচা রাস্তা বলে মনে হচ্ছে। অসংখ্য ছোট ছোট গর্তের পাশাপাশি আছে ভয়ংকর সব বড় গর্ত। সড়কের নানা জায়গায় কাদাপানি জমে আছে। এই ভাঙা, খানাখন্দে ভরা রাস্তায় ১০ চাকার বালু ও পাথরবোঝাই ট্রাক চলাচল করছে।

সড়কটির সবচেয়ে খারাপ অংশটুকু নিউ ফুডস লিমিটেডের সামনে থেকে কোস্টগার্ড স্টেশন অফিসের সামনে হয়ে জেমিনি সি ফুডস পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকা। ওই অংশ এতটাই খারাপ, কোনো ভ্যানচালকই ওই অংশে যেতে পারেন না। এখন ফেরিঘাট মোড় থেকে নিউ ফুডসের সামনে পর্যন্ত ভ্যান চলছে। যদিও এই পথটুকু বেহাল।

রাস্তার একজন ভ্যানচালক মো. রুবেল বলেন, ‘বর্ষাকালে অবস্থা বেশি খারাপ। পুরো পথ যেতে না পারায় ব্রিজের প্রায় এক কিলোমিটার আগে ভ্যান থামাতে হয়। তাতেই যাত্রী ও আমাদের অবস্থা কাহিল হয়ে যায়।’

এসব বিষয়ে রূপসা উপজেলা প্রকৌশলী এস এম ওয়াহিদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, সড়কটির ধারণক্ষমতা বাড়ানো দরকার। রাস্তাটি সম্প্রসারিত করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে আরসিসি রাস্তা নির্মাণ করতে হবে। সেই সঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে নদীতে ভেঙে যাওয়া প্রায় ১ হাজার ২০০ মিটার জায়গা স্থায়ী নদীশাসন করতে হবে। এ জন্য কম করে হলেও ১০০ কোটি টাকা দরকার। নতুন একটা প্রকল্প তৈরি হচ্ছে। সেটা চালু হলে এই সড়কটা করা সম্ভব হবে।