রাজশাহী-২ (সদর) আসনে নৌকার পক্ষে আওয়ামী লীগসহ অন্য শরিকদের মাঠে নামানোর জন্য গতকাল সোমবার রাতে ১৪ দলের একটি বৈঠক হয়েছে। কিন্তু এক ঘণ্টার ওই বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় পরে তা মুলতবি ঘোষণা করা হয়।
রাজশাহী–২ আসনে নৌকার প্রতীক নিয়ে ১৪–দলীয় জোটের প্রার্থী হয়েছেন বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। কিন্তু রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে ২২ ডিসেম্বর থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নেমে গেছে। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শফিকুর রহমান বাদশা। তবে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার নৌকার পক্ষে মাঠে রয়েছেন।
নৌকা প্রতীকের পক্ষে যাতে আওয়ামী লীগসহ শরিক দলগুলো মাঠে কাজ করে, সে জন্য ফজলে হোসেন বাদশা বেশ কয়েক দিন ধরেই ১৪ দলের বৈঠক হবে বলে জানিয়ে আসছিলেন। গতকাল রাতে রাজশাহী নগরের রানিবাজার এলাকায় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়রের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সেই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। রাত সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত এক ঘণ্টার বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
বৈঠকের একটি সূত্র জানিয়েছে, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল কিছুতেই নমনীয় হননি। তাঁরা বলেছেন, গত ১৫ বছরে ফজলে হোসেন বাদশা তিন মেয়াদে নৌকার প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য হয়েছেন। কিন্তু তিনি আওয়ামী লীগের জন্য কিছুই করেননি।
ওই সভায় ১৪ দলের পক্ষ থেকে জাসদের প্রার্থী আবদুল্লাহ আল মাসুদ শিবলী উপস্থিত ছিলেন। তিনি সভায় জ্বালাময়ী বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি কিছুতেই ফজলে হোসেন বাদশার সমর্থনে নৌকার পক্ষ নিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে রাজি হননি। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, দলীয় প্রার্থী থাকবেন, এর পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীও থাকবেন। এবারের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে হবে। এই কারণে তাঁর সরে দাঁড়ানোর প্রশ্নই ওঠে না। এ ছাড়া এই আসনে তাঁর সঙ্গেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এবার জনপ্রিয়তা যাচাই হোক, এটাই তিনি চান।
জানতে চাইলে ফজলে হোসেন বাদশা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর সমর্থনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী মাঠে নামার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। এ জন্য বৈঠক মুলতবি ঘোষণা করা হয়েছে। দ্রুত আবার ১৪–দলীয় জোটের বৈঠক আহ্বান করা হবে। এ অবস্থায় তাঁদের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত হলো তাঁরা তাঁদের মতো নৌকার প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাবেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ১৪–দলীয় জোটের সমন্বয়কারী রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন প্রথম আলোকে বলেন, বৈঠকে জাসদের প্রার্থী কিছুতেই নমনীয় হননি। কেন্দ্র থেকে তাঁকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে না বললে তিনি নির্বাচন থেকে কিছুতেই সরে দাঁড়াবেন না।
খায়রুজ্জামান আরও বলেন, ১৪ দলের শরিক হিসেবে জাসদের প্রার্থীই যদি সরে না দাঁড়ান, তাহলে কীভাবে সম্ভব। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতিও ফজলে হোসেন বাদশার পক্ষে মাঠে নামতে সম্মত হননি। তিনি বলেন, এক ঘণ্টার আলোচনার পর তিনি দলের নেতাদের সম্মত করতে পারেননি। এ জন্য বৈঠক মুলতবি ঘোষণা করা হয়েছে।
এ অবস্থায় রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার নৌকার প্রার্থীর পক্ষে মাঠে রয়েছেন। ফজলে হোসেন বাদশার পক্ষে গতকাল তিনি নৌকার স্লোগান দিয়েছেন। জানতে চাইলে ডাবলু সরকার প্রথম আলোকে বলেন, তিনি তো ঘোষণা দিয়েই মাঠে নেমেছেন। তিনি রাজশাহীর ছয়টি আসনে নৌকার পক্ষে রয়েছেন। বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় যাচ্ছেন। রাজশাহী সদর আসনে তাঁর কর্মীরাও কাছ করছেন। তিনি দলের প্রতীকের সঙ্গে বেইমানি করবেন না বলে জানিয়েছেন। তা ছাড়া সবাইকে মাঠে নামানোর একটা প্রক্রিয়া চলছে। কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো আওয়ামী লীগের সবাই মাঠে নেমে যাবেন।