প্রশিক্ষণের জ্ঞান কাজে লাগিয়ে সফল কৃষক ইসমাইল হোসেন 

উদ্যোক্তা হিসেবে শেভরনের প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর মো. ইসমাইল হোসেন অংশ নেন ব্যবসা পরিকল্পনা প্রশিক্ষণে। এভাবে বদলে যায় তাঁর জীবন।

খেত থেকে সবজি তুলছেন মো. ইসমাইল হোসেন। সম্প্রতি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার বাল্লারপার গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

৫০ শতক জমিতে মৌসুমি শাকসবজির চাষাবাদ করতেন মো. ইসমাইল হোসেন (৩৪)। পরিবারের প্রয়োজন মিটিয়ে অল্প কিছু শাকসবজি বাজারে বিক্রি করতে পারতেন। এতে সামান্যই আয় হতো, যা দিয়ে সংসার চালাতে বেগ পেতে হতো তাঁকে। এভাবে ১০ বছর ধরে পরিবার নিয়ে দারিদ্র্যে কাটিয়েছেন জীবন।

২০২০ সালের আগস্টে বহুজাতিক তেল ও গ্যাস কোম্পানি শেভরনের পৃষ্ঠপোষকতায় ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এন্টারপ্রাইজ (আইডিই) পরিচালিত উদ্যোক্তা প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ নিয়ে আগাম শাকসবজি উৎপাদনে সফলতা পেয়েছেন তিনি। এখন সারা বছর আগাম জাতের শাকসবজি চাষাবাদ করা ইসমাইল হোসেনের নেশা। এতে তাঁর মাসে আয় প্রায় ২০ হাজার টাকা। ইসমাইলের এ সফলতা দেখে গ্রামের অন্য কৃষকেরাও আগাম জাতের শাবসবজি চাষে আগ্রহী হয়েছেন।

বাল্লারপার গ্রামের সবজিচাষি বজলুর রহমান ও মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ইসমাইল হোসেনকে দেখে তাঁরাও আগাম জাতের শাকসবজি চাষে আগ্রহী হয়েছেন। তাঁকে এ গ্রামের মডেল কৃষক বা উদ্যোক্তা বলা যায়।

ইসমাইল হোসেনের বাড়ি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার বাল্লারপার গ্রামে। উদ্যোক্তা হিসেবে শেভরনের প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর তিনি অংশ নেন ব্যবসা পরিকল্পনা প্রশিক্ষণে। এভাবে বদলে যায় তাঁর জীবন। এসব প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তিনি জেনেছেন আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের মাধ্যমে অধিক ফসল উৎপাদনের পদ্ধতি, যথাযথ নিয়মে বাজারজাতকরণ ও পণ্যের সঠিক দাম পাওয়ার উপায়।

অন্য ছয় ভাইয়ের সঙ্গে যৌথ পরিবারে থাকেন ইসমাইল হোসেন। তাঁর অন্য ভাইয়েরা ব্যবসা ও চাকরি করেন। ইসমাইল হোসেন বলেন, প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর ১৫০ শতক জমিতে আগাম জাতের টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি চাষ শুরু করেন। সঙ্গে মৌসুমি শিম, বরবটি, চিচিঙ্গা, পটল, লাউসহ অন্য শাকসবজির চাষও অব্যাহত রাখেন। চাষাবাদে জৈব সার ব্যবহার করেছেন। বিশেষ করে নিজে কেঁচো সার উৎপাদন করে তা জমিতে ব্যবহার করেছেন। এভাবে প্রতিবছর সবজিখেতের পরিধি বেড়েছে। সব খরচ বাদে বছরে এখন তাঁর আয় প্রায় দুই লাখ টাকা।

উদ্যোক্তা প্রকল্পের সহায়তা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ সফলতা পেয়েছেন জানিয়ে সফল এ কৃষক বলেন, তাঁর পরিবারে এখন সচ্ছলতা এসেছে। এলাকায় তাঁকে অনুসরণ ও তাঁর সঙ্গে পরামর্শ করে আরও ৮ থেকে ১০ জন এভাবে চাষাবাদ শুরু করেছেন। এখন তাঁর উৎপাদিত ফসল ভানুগাছ, শমশেরনগর ও শ্রীমঙ্গল আড়তে সঠিক দামে বিক্রি করতে পারছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন নতুন নতুন আড়তে যোগাযোগ বেড়েছে তাঁর। বীজ কোম্পানির প্রতিনিধিরা তাঁর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা এসে চাষাবাদ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন।

একাধিকবার ইসমাইল হোসেনের সবজিখেত পরিদর্শন করেছেন কমলগঞ্জ উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অশ্বিনী কুমার সিংহ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, তাঁকে কৃষি বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান কাজে লাগিয়ে ও পরিশ্রম করে শাকসবজি চাষে সফলতা পেয়েছেন ইসমাইল হোসেন।