জাহাঙ্গীরনগরে নানা আয়োজনে বসন্তবরণ ও সরস্বতীপূজা উদ্‌যাপন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বসন্তবরণ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের আয়োজনে শোভাযাত্রা। বুধবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

নাচ, গান, শোভাযাত্রাসহ নানা আয়োজনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বসন্তবরণ ও সরস্বতীপূজা উদ্‌যাপিত হয়েছে। আজ বুধবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও হলের আয়োজনে বসন্তবরণ ও সরস্বতীপূজা উদ্‌যাপন করা হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলাভবন এলাকায় বাংলা বিভাগের ছাত্রসংগঠন বাংলা সংসদের উদ্যোগে বসন্তবরণ ১৪৩০ আয়োজন করা হয়। বেলা ১১টার দিকে কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক এ উৎসবের উদ্বোধন করেন। এরপর মহুয়ামঞ্চে বিভাগের শিক্ষার্থীরা নাচ ও গানের মাধ্যমে ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করে নেন। পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নতুন কলাভবনের সামনে থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিলে একটি শোভাযাত্রা বের করেন। শোভাযাত্রাটি কয়েকটি সড়ক ঘুরে আবার একই স্থানে এসে শেষ হয়।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এলাকার সপ্তম ছায়ামঞ্চে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের আয়োজনে নবীনবরণ ও বসন্ত উদ্‌যাপন করা হয়।

এদিকে ক্যাম্পাসে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব সরস্বতীপূজা উদ্‌যাপিত হয়েছে। বিদ্যা ও সংগীতের দেবী সরস্বতীর কাছে প্রার্থনা করেছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও বিভাগ মিলে অন্তত ১২টি জায়গায় সরস্বতীপূজার আয়োজন করা হয়।

আজ সরেজমিন দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলাভবন, পুরোনো কলাভবন, রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ এলাকা, সপ্তম ছায়ামঞ্চ এলাকা এবং বিভিন্ন হল এলাকায় শিক্ষার্থীরা লাল-হলুদসহ নানা বর্ণের শাড়ি ও পাঞ্জাবি পরে ঘুরছেন। নারী শিক্ষার্থীদের মাথায় ফুল শোভা পাচ্ছে। বসন্তবরণের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করছেন অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী। আবার কেউ কেউ বিদ্যাদেবীর কাছে আরাধনা করছেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগ ও হলের আয়োজনে বিদ্যাদেবী সরস্বতীপুজা উদ্‌যাপিত হয়েছে। বুধবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আকিব সুলতান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য দিনের তুলনায় আজকের পরিবেশ একটু ভিন্ন। বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে সবাই বাহারি পোশাকে ঘুরে বেড়াচ্ছি, খুব আনন্দ লাগছে। প্রকৃতিতে বসন্ত এসে গেছে। ক্যাম্পাসটাও ফুলে ফুলে সেজে উঠেছে।’

বাংলা সংসদের বসন্তবরণ অনুষ্ঠান উদ্বোধনকালে কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘বসন্ত প্রকৃতিকে নানাভাবে আন্দোলিত করে। নানাভাবে জেগে ওঠার প্রেরণা দেয়। মানুষের মনের মধ্যে বাঁচার একটি তাগিদ জোগায়। মানুষের মনের মধ্যে একটি রোমান্স তৈরি করে, ভালোলাগা তৈরি করে। বসন্তের আয়োজন পাখিদের মধ্যেও দেখা যায়। প্রকৃতিতে একটি মহাযজ্ঞ শুরু হয় বসন্তকালে। বাংলা বিভাগ প্রতিবছর এই বসন্তবরণের আয়োজন করে থাকে। তাদের এ আয়োজন অব্যাহত থাকবে বলে আশা করি।’

বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা বলেন, ‘বাংলা বিভাগ অনেক আগে থেকেই এ দিনটি পালন করে আসছে। বসন্তকালে চারপাশ যেমন নানা ফুলে রঙিন হয়ে থাকে, সেই রং সবার মনে লাগুক। এই চারপাশের সৌন্দর্য আমাদের সবাইকে আলোড়িত করুক। সেই দিক সামনে রেখে বাংলা বিভাগ এই দিন উদ্‌যাপন করে আসছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ একই সঙ্গে বসন্তবরণ, ভালোবাসা দিবস ও সরস্বতীপূজা। আমার মনে হয়, এর আগে কখনো একসঙ্গে তিনটি উৎসব হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ আজ অন্য রকম, খুবই ভালো লাগছে।’