কিশোরগঞ্জ পাগলা মসজিদে এবার পাওয়া গেল সর্বোচ্চ ৮ কোটি ২১ লাখ টাকা

টাকা গণনার কাজ চলছে। শনিবার সকালে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পাগলা মসজিদেছবি: তাফসিলুল আজিজ

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদে সারা দিন গণনা করার পর ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪ টাকা পাওয়া গেছে। এটি মসজিদের এযাবৎকালের সর্বোচ্চ টাকা পাওয়ার রেকর্ড। এর আগে গত আগস্টে ৭ কোটি ২২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬ টাকা পাওয়া গিয়েছিল।

সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ১০ ঘণ্টাব্যাপী প্রায় ৩৫০ জন টাকা গণনার কাজ করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক মিজাবে রহমত। তিনি বলেন, গণনা শেষে সব টাকা রূপালী ব্যাংকের কিশোরগঞ্জ শাখায় জমা দেওয়া হয়েছে। আর দানবাক্স থেকে পাওয়া বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকারগুলো জেলা প্রশাসনের ট্রেজারিতে গচ্ছিত রাখা হয়েছে।

৩ মাস ১৩ দিন পর আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে পাগলা মসজিদের ১১টি দানসিন্দুক খুলে পাওয়া গেছে ২৯ বস্তা টাকা, বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার ও বৈদেশিক মুদ্রা। জেলা শহরের নরসুন্দা নদীতীরের ঐতিহাসিক এ মসজিদে লোহার দানসিন্দুকগুলো তিন থেকে চার মাস পরপর খোলা হয়। এর আগে ৯টি সিন্দুক থাকলেও এবার আরও ২টি দানসিন্দুক বাড়ানো হয়েছে।

টাকা গণনা করে বান্ডিলগুলো সাজিয়ে রাখা হয়েছে। শনিবার দুপুরে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পাগলা মসজিদে
ছবি: তাফসিলুল আজিজ

পাগলা মসজিদ কর্তৃপক্ষ জানায়, সাধারণত তিন থেকে চার মাস পরপর দানসিন্ধুক খোলা হয়। এবার গতবারের তুলনায় কয়েক দিন আগেই দানসিন্দুক খোলা হয়েছে। এরপরও রেকর্ড পরিমাণ টাকা পাওয়া গেছে। প্রথমে টাকাগুলো লোহার সিন্দুক থেকে বস্তায় ভরা হয়। পরে মসজিদের মেঝেতে ঢেলে গণনার কাজ শুরু করা হয়।  কিশোরগঞ্জের আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়া ও পাগলা মসজিদের এতিমখানার প্রায় আড়াই শ শিক্ষার্থী, ব্যাংকের ৭০ কর্মকর্তা-কর্মচারী, মসজিদ কমিটি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ ৩৫০ জন টাকা গণনার কাজ করছেন।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরীর নেতৃত্বে সকাল সাড়ে ৭টায় ১১টি দানসিন্দুক খোলা হয়।

দানসিন্দুক খোলার সময় কিশোরগঞ্জ সেনাক্যাম্পের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিয়াজুল করিমসহ অন্য সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া এ সময় এখানে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. এরশাদ মিয়াসহ কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলাম, মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শওকত উদ্দিন ভূইয়া, পাগলা মসজিদের খতিব মাওলানা আশরাফ আলী প্রমুখ ছিলেন।

টাকা গণনার কাজ চলছে। শনিবার সকালে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পাগলা মসজিদে
ছবি: তাফসিলুল আজিজ

জেলা প্রশাসক ও মসজিদ কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান বলেন, পাগলা মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্সের খরচ চালিয়ে দানের বাকি টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়। এ থেকে জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানায় অনুদান দেওয়ার পাশাপাশি অসহায় ও জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সহায়তাও করা হয়ে থাকে।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, সকাল থেকে টাকার সিন্দুক খোলা, বস্তায় ভরে এনে গণনা শেষে ব্যাংকে সব টাকা নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত সার্বিক নিরাপত্তার কাজে তিনিসহ পুলিশ সদস্যরা যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন। গণনার দিন ছাড়াও বাকি দিনগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন সিন্দুকের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করেন।

কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মসজিদটি স্থাপিত। কথিত আছে, খাস নিয়তে এ মসজিদে দান করলে মানুষের মনের আশা পূরণ হয়। সে জন্য দূরদূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ এখানে এসে দান করে থাকেন। মানুষ টাকাপয়সা ছাড়াও স্বর্ণালংকার দান করেন। গবাদিপশু, হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্রও মসজিদটিতে দান করা হয়।

আরও পড়ুন