ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামকে আতঙ্কের জনপদে পরিণত করা হয়েছে

সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ এনে বিএনপি নেতা ফজলুর রহমানের সংবাদ সম্মেলন। আজ সোমবার দুপুরে কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির কার্যালয়ে
ছবি: প্রথম আলো

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা ফজলুর রহমান অভিযোগ করেছেন, জেল-জুলুম আর নির্যাতনের মধ্য দিয়ে ভাটি এলাকাকে এখন এক আতঙ্কের জনপদে পরিণত করা হয়েছে। যেন কোনরকমে প্রাণটা নিয়ে ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় বেঁচে আছে ভাটি এলাকার সহজ–সরল আর নিরীহ মানুষজন।

আজ সোমবার সকালে কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। ফজলুর রহমান বলেন, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের জনগণ ১০ বছর ধরে এক প্রকার জিম্মি অবস্থায় নিজ বাসভূমে পরাধীন জীবন যাপন করছেন। ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার দূরে থাক, তাঁদের কথা বলার স্বাধীনতা পর্যন্ত নেই। মুখ খুললেই তাঁদের ১৪ শিকের বাসিন্দা হতে হয়। গায়েরি মামলা, অত্যাচার আর নির্যাতনে জর্জরিত বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত। এ রকম অবস্থা যেন এই এলাকা রাষ্ট্রের মধ্যেই আরেকটি রাষ্ট্র। আর সেই রাষ্ট্রের একচ্ছত্র অধিপতি একটি পরিবার। প্রশাসনযন্ত্র থেকে শুরু করে সবকিছু পরিবারটির নিয়ন্ত্রণে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ফজলুর রহমানের এই অভিযোগ তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ, বিশেষ করে সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ফজলুর রহমানের গ্রামের বাড়ি ইটনায়। তিনি এবার ঈদ করেছেন গ্রামের বাড়িতে। নির্বাচনী এলাকায় তিনি ঈদ–পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় ও একাধিক সভা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। গত শনিবার অষ্টগ্রামে সভা করতে গিয়ে বিএনপির সঙ্গে ছাত্রলীগের সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের দায়ের করা মামলায় বিএনপির ছয়জন গ্রেপ্তার হন। পুলিশ প্রতি রাতে নেতা-কর্মীদের বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছে বলে অভিযোগ বিএনপির। এই অবস্থায় পরবর্তী সব কর্মসূচি স্থগিত করেন।

আরও পড়ুন

এই পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান বলেন, পুলিশ ও প্রশাসনের বিধিনিষেধের কারণে গত ১০ বছর তিনি নেতা–কর্মীদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে পারেননি। এবার ঈদের আগে এলাকায় যান তিনি। বিভিন্ন কর্মসূচি চূড়ান্ত হওয়ার পর তিন উপজেলার নেতা–কর্মী ও জনসাধারণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করেন। কিন্তু আবারও শুরু হয় দমন-পীড়নের পুরোনো খেলা।

ফজলুর রহমান বলেন, পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিতে অংশ নিতে ১ জুলাই সকাল থেকে নেতা-কর্মীরা বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস নিয়ে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্টে সমবেত হতে থাকেন। সেখান থেকে শান্তিপূর্ণভাবে গণমিছিলটি উপজেলা বিএনপি কার্যালয়ের দিকে যাওয়ার সময় অতর্কিত হামলা চালায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। তারা রামদা, হকিস্টিক, লোহার রড ইত্যাদি নিয়ে নেতা-কর্মীদের ওপর চড়াও হয়। পুলিশ উপস্থিত থেকে বিএনপি নেতা-কর্মীদের পেটানোর নির্দেশ দেয়। ঘৃণ্য এ হামলায় বিএনপির ৩০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। এরপর উল্টো বিএনপি নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। এ মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেপ্তার নেতা–কর্মীদের মুক্তির দাবি জানান ফজলুর রহমান।

সংবাদ সম্মেলন ফজলুর রহমানের স্ত্রী জেলা বিএনপির সহসভাপতি উম্মে কুলসুম, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

দলীয় সূত্র জানায়, কিশোরগঞ্জ-৪ সংসদীয় আসনটি জেলার হাওর উপজেলা অষ্টগ্রাম, মিঠামইন ও ইটনা নিয়ে গঠিত। এই আসন থেকে ফজলুর রহমান একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হয়ে হেরে যান। সে সময় ফজলুর রহমানের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ। এর আগে এই আসন আবদুল হামিদের সঙ্গে তাঁর দুবার নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। দুটিতেই হেরে যান।

ফজলুর রহমানের অভিযোগ বিষয়ে মুঠোফোনে কথা হয় কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদের সঙ্গে। তিনি বলেন, হাওর শান্তির জায়গা। এখানে শান্তি বজায় রয়েছে। বিএনপির কর্মসূচি নিয়ে বাধা নেই। নেতিবাচক মানসিকতা থাকলে ফজলুর রহমান এলাকায় আসতে পারতেন না। অথচ নেতা-কর্মীদের প্রতি আবদুল হামিদ ও তাঁর নির্দেশ ছিল ফজলুর রহমানের কর্মসূচির প্রতি সহনশীল থাকার। কিন্তু পরিস্থিতি ঘোলাটে করেছেন ফজলুর রহমান নিজেই। তিনি তাঁর কর্মসূচি থেকে মিছিল নিয়ে আওয়ামী লীগের লোকজনের ওপর হামলা চালিয়েছেন। হামলায় তাঁদের ২০ জন আহত হন।

অষ্টগ্রাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আলী মোহাম্মদ রাশেদ বলেন, অষ্টগ্রামের ঘটনায় ছাত্রলীগের দায়ের করা মামলায় নতুন করে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। ফজলুর রহমান কিংবা তাঁর দলের কারও প্রতি পুলিশের বিরূপ আচরণ নেই।