কলমাকান্দা ও দুর্গাপুরে পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণার অভিযোগ এমপির বিরুদ্ধে

উপজেলা দুটিতে চেয়ারম্যান পদে ৭ জন করে ১৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নেত্রকোনা-১ (কলমাকান্দা-দুর্গাপুর) আসনের সংসদ সদস্য মোশতাক আহমেদ ওরফে রুহী এবং আওয়ামী লীগের কয়েকজন পদধারী নেতার বিরুদ্ধে পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণার অভিযোগ উঠেছে। কলমাকান্দায় কয়েকজন প্রার্থী অভিযোগ করেছেন, এই উপজেলায় পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে প্রভাব বিস্তার করছেন সংসদ সদস্যরা। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, জেলা রির্টানিং কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ জমা ও সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে।

জেলা রির্টানিং কর্মকর্তার কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আগামী ৮ মে কলমাকান্দা ও দুর্গাপুরে প্রথম ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। উপজেলা দুটি জাতীয় সংসদের নেত্রকোনা-১ আসনের আওতায়। উপজেলা দুটিতে চেয়ারম্যান পদে ৭ জন করে ১৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

দলীয়ভাবে কাউকে মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত থাকায় ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতাই প্রার্থী হয়েছেন। কিন্তু স্থানীয় সংসদ সদস্য মোশতাক আহমেদসহ দলের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নেওয়ার অভিযোগ করেছেন তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। এ নিয়ে দুর্গাপুরে মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী নাজমুল হাসান ও কলমাকান্দায় ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী মুহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান সংসদ সদস্যকে অভিযুক্ত করে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন। গত শনিবার জমা দেওয়া অভিযোগে তাঁরা সংসদ সদস্যের ক্ষমতার অপব্যবহার, পক্ষপাতিত্ব, আচরণবিধি লঙ্ঘনসহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করেছেন।

এ ছাড়া দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে প্রায় একই অভিযোগ এনে গত রোববার বিকেলে কলমাকান্দায় কৈ মাছ প্রতীকের প্রার্থী মো. রফিকুজ্জামান খোকন সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি জানান, দলীয় প্রধান উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সাংগঠনিক প্রতীক তুলে দিয়ে উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। এমনকি সাংগঠনিক পরিচয় দিতে পারবেন না কোনো প্রার্থী। রফিকুজ্জামান বলেন, ‘আমি নিজেও উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক দায়িত্বে থাকা সত্ত্বেও পরিচয় দিচ্ছি না। কিন্তু কলমাকান্দায় দোয়াত কলম প্রতীকের প্রার্থী আবদুল কুদ্দুছ আওয়ামী লীগের ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মোশতাক আহমেদের প্রার্থী দাবি করে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাঁর সঙ্গে দলীয় পদধারী নেতারাও প্রকাশ্যে অংশ নিচ্ছেন। দলীয় প্রভাবের কারণে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কায় আছি।’

ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের অভিযোগ, তফসিল ঘোষণার পর থেকেই সংসদ সদস্য তাঁকে নানাভাবে হয়রানি ও নির্বাচনী প্রচারে বাধা সৃষ্টি করছেন। তিনি প্রকাশ্যে সভায় বক্তব্য দিয়ে তাঁকে (মোস্তাফিজুর) ও তাঁর শুভানুধ্যায়ীদের হাত-পা ভেঙে দেবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। চার দিন আগে সংসদ সদস্যের ছেলেও অশোভন ভাষায় গালমন্দ করেছেন বলে দাবি মোস্তাফিজুরের।

এসব ঘটনার ভিডিও রয়েছে দাবি করে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে সংসদ সদস্য ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাঁর পছন্দের প্রার্থী আবদুল কুদ্দুছের পক্ষে অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগের পদধারী নেতাদের ব্যবহার করছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ নেতারা দলীয় কার্যালয়ে বসে ওই প্রার্থীর পক্ষে দলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের ভোট দিতে চাপ দিচ্ছেন। এতে ভোটাররা দ্বিধা-বিভক্তিতে আছেন।’

সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে প্রায় একই অভিযোগ করেছেন দুর্গাপুরের মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী নাজমুল হাসান। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যেখানে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন, সেখানে সংসদ সদস্য ক্ষমতার অপব্যবহার করে আমাকে হুমকি দিয়ে নানাভাবে হয়রানি করছেন।’

দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে একজন প্রার্থীর পক্ষে সরাসরি অবস্থান নেওয়ায় চেয়ারম্যান পদে অন্য প্রার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেনের কাছে জানতে চাইলে প্রথম আলোকে মুঠোফোনে তিনি বলেন, ‘তিনি (প্রার্থী আবদুল কুদ্দুছ) মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। তিনি উপজেলা কমিটিতে সাবেক মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। কয়েকবার ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন। তাই আমরা আওয়ামী লীগ তাঁকে সমর্থন দিয়েছি। এমপি সাবও তাঁকে সমর্থন দিয়েছেন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য মোশতাক আহমেদের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা আওয়ামী লীগের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, এবারের নির্বাচন উন্মুক্ত থাকায় দলীয় মন্ত্রী-এমপি ও নেতাদের কারও পক্ষে কাজ না করতে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধানের নির্দেশনা দিয়েছেন। সংসদ সদস্যের প্রভাবে নেতাদের ওই চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালানো দলীয় সিদ্ধান্তের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।