টেকনাফের অপহৃত শিশুকে ২২ দিন পর কুমিল্লা থেকে উদ্ধার

কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে অপহরণের ২২ দিন পর কুমিল্লার লালমাই থেকে উদ্ধার করা হয় শিশু ছোয়াদ বিন আবদুল্লাহকে। আজ রোববার দুপুরে টেকনাফ থানায় মায়ের সঙ্গেছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে অপহৃত সৌদিপ্রবাসীর ছয় বছর বয়সী শিশুসন্তানকে ২২ দিন পর উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার রাতে কুমিল্লার লালমাই এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। শিশুটিকে অপহরণের এ ঘটনায় টেকনাফ থানার পুলিশ এ পর্যন্ত ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

অপহৃত শিশু ছোয়াদ বিন আব্দুল্লাহ টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের সৌদিপ্রবাসী মোহাম্মদ আবদুল্লাহর ছেলে। সে পূর্ব পানখালী এলাকার আবু হুরাইরা (রা.) মাদ্রাসার প্রথম শ্রেণির ছাত্র।

শিশুটিকে উদ্ধারের পর আজ রোববার দুপুরে টেকনাফ থানায় সংবাদ সম্মেলন করেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) মোহাম্মদ রাসেল ও টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ওসমান গণি। সংবাদ সম্মেলনে শিশুটির মা নুরজাহান বেগম উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল বলেন, অপহরণ চক্রের প্রধান আনোয়ার সাদেকের পরিকল্পনায় রোহিঙ্গা উম্মে সালমা সৌদিপ্রবাসী মোহাম্মদ আবদুল্লাহর বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ নিয়েছিলেন। তিনি শিশু ছোয়াদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। এরপর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ৯ মার্চ অপহরণ করা হয় শিশু ছোয়াদকে। ওই দিন দুপুরে ক্লাস শেষে মাদ্রাসা থেকে বাড়ি ফেরার পথে ছোয়াদকে দুর্ঘটনায় মায়ের মাথা ফেটে গেছে এবং হাসপাতালে মাকে দেখতে যাওয়ার কথা বলে শিশুটিকে অটোরিকশায় তুলে অপহরণ করেন উম্মে সালমা। একই দিন সন্ধ্যায় শিশুটির মা নুরজাহান বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে টেকনাফ থানায় এজাহার করেন। পুলিশ মামলাটি নথিভুক্ত করে তদন্ত শুরু করে।

পুলিশ ঘটনাস্থল ও আশপাশের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রাখে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওসমাণ গণি। তিনি বলেন, ১০ মার্চ সন্ধ্যায় কক্সবাজার শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে অটোরিকশাসহ চালক নাসির উদ্দিনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তাঁর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ১২ মার্চ টেকনাফ উপজেলার মোচনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে পুলিশ উম্মে সালমাসহ আরও চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার পাঁচজনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য নিয়েই পুরো চক্রটিকে শনাক্ত করে পুলিশ।

ওসি মুহাম্মদ ওসমান গণি বলেন, এর মধ্যে শিশুর মা নুরজাহান বেগমকে ফোন করে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণ চক্রের সদস্যরা। মুক্তিপণ না দিলে শিশুকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। মুক্তিপণ আদায়ের লক্ষ্যে অপহৃত শিশুকে বিভিন্ন সময়ে নির্মমভাবে মারধর করে কান্নাকাটির শব্দ শোনানো হতো। গ্রেপ্তারের ভয়ে শিশুটির স্থান পরিবর্তন করা হতো।

পুলিশ জানায়, কয়েক আগে টেকনাফ থেকে শিশুটিকে কক্সবাজারের ঈদগাঁও এলাকায় রাখা হয়। পুলিশ হানা দিলে সেখান থেকে শিশুকে নেওয়া হয় মহেশখালীর কালারমারছড়ার গহিন পাহাড়ে। সেখানে পুলিশ অভিযান শুরু করলে শিশুকে নেওয়া হয় কুমিল্লার লালমাই এলাকার একটি ভাড়া বাসায়। এর মধ্যে মুক্তিপণের ৪ লাখ টাকা পরিশোধের কথা বলে পুলিশ কৌশলে গতকাল শনিবার দুপুরে কুমিল্লার লালমাই এলাকা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে। এ সময় মুক্তিপণের ৪ লাখ টাকা ফেরত আনাসহ অপহরণে ব্যবহৃত সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশা ও চারটি মোবাইল উদ্ধার করা হয়।

অপহরণের ২২ দিন পর শিশুকে ফেরত পেয়ে কান্নাকাটি শুরু করেন মা নুরজাহান বেগম। পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে নুর জাহান বলেন, টেকনাফের মানুষ অপহরণ আতঙ্কে ভুগছেন। শিক্ষার্থীরা বাড়ি থেকে স্কুলে যেতে সাহস পাচ্ছে না। প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ অপহরণের শিকার হচ্ছে।

পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১১৭ জনকে অপহরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৯ জন স্থানীয় বাসিন্দা, বাকিরা রোহিঙ্গা নাগরিক। অপহৃত পরিবারের তথ্য বলছে, অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৫১ জন মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছে।