কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিকে বহিষ্কারের দাবি

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মাহবুবুর রহমানকে বহিষ্কারের দাবিতে কুয়াকাটায় মানববন্ধন
ছবি: প্রথম আলো

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুবুর রহমানকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবিতে কুয়াকাটা পৌর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় কুয়াকাটা প্রেসক্লাবসংলগ্ন সড়কে এসব কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

কর্মসূচি চলাকালে কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র মো. আনোয়ার হাওলাদার, কুয়াকাটা পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক অনন্ত মুখার্জী, পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ আলম হাওলাদার, পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহে আলম আকন, মহিপুর থানা শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. জামাল হোসেন ও মহিপুর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি শোয়াইব খান প্রমুখ বক্তব্য দেন। তাঁরা দলীয় শৃঙ্খলাপরিপন্থী মন্তব্য করার জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মাহবুবুর রহমানকে দ্রুত দল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনের সংসদ সদস্য মো. মহিব্বুর রহমানকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাতে ভোট হয়েছে– বিএনপির সুরে এ কথা বলে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এবং সভাপতি হিসেবে তাঁর কাছ থেকে সার্টিফিকেট ছাড়া কেউ আওয়ামী লীগ বা করতে পারবে না, এমন সব কথা বলেছেন মাহবুবুর রহমান। তাঁর এমন বক্তব্যে সংসদ সদস্য মো. মহিব্বুর রহমানের অনুসারী নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ হন। এর প্রতিবাদে কুয়াকাটা পৌর এলাকায় আজ রোববার মানববন্ধন ও সমাবেশ কর্মসূচি পালিত হয়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার উপজেলার ডালবুগঞ্জ ইউনিয়ন শাখা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক রুমান হাসনাতের সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মাহবুবুর রহমান মুঠোফোনে কথা বলেন। কথোপকথনের একপর্যায়ে মাহবুবুর রহমান উত্তেজিত হয়ে বর্তমান সংসদ সদস্য মো. মহিব্বুর রহমানকে নিয়ে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দেন। মুঠোফোনের সে কথোপকথনের অডিও গত শুক্রবার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। মুঠোফোনের ওই অডিওতে মাহবুবুর রহমানকে বলতে শোনা যায়, ‘বর্তমান সংসদ সদস্য মহিব্বুর রহমান রাতের ভোটে এমপি হইছে। তাকে শেখ হাসিনা মনোনয়ন দেয়নি।’ এ ছাড়া ওই অডিওতে তিনি রুমান হাসনাতকে হুমকি দিয়ে আরও বলেন, আওয়ামী লীগ করতে হলে তাঁর কাছ থেকে সার্টিফিকেট নিতে হবে।

ডালবুগঞ্জ ইউনিয়ন শাখা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক রুমান হাসনাত বলেন, ‘আমি এমপি মহিব্বুর রহমানের ছবি দিয়ে ফেসবুকে “মানবতার ফেরিওয়ালা” লিখে পোস্ট দিয়েছিলাম। এটা দেখে মাহবুব তালুকদার ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে মুঠোফোনে কল করেন এবং হুমকি-ধমকি দেন। এমনকি বর্তমান সংসদ সদস্যকে নিয়েও তিনি বাজে মন্তব্য করেন।’

এদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মাহবুবুর রহমান গতকাল তাঁর ফেসবুক আইডি থেকে পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনের সংসদ সদস্য মো. মহিব্বুর রহমানের বাবাকে নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন। ওই পোস্টে তিনি মহিব্বুর রহমানের বাবা উপজেলার ধুলাসার ইউনিয়নের শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন বলে উল্লেখ করেন।

স্থানীয় সংসদ সদস্যকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করার অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মাহবুবুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে গতকাল তিনি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বলেছেন, দলীয় এক কর্মীর সঙ্গে তাঁর কথোকপথন হয়। সেই বক্তব্য সুপার এডিট করে এমপি মহিব্বুর রহমানের নির্দেশে কিছু লোক প্রকাশ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে এসব ষড়যন্ত্র হয়েছে। এসব ষড়যন্ত্র কোনোভাবেই সফল হবে না। শিগগিরই এসব কলঙ্কিত অধ্যায়ের অবসান হবে।

কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব তালুকদার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলের সভাপতি হয়ে মাহবুবুর রহমান দলকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বক্তব্য দিয়েছেন। সবচেয়ে আপত্তিকর কথা হলো, তিনি একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। দলের দায়িত্বশীল পদে থেকে তিনি তা মোটেই করতে পারেন না। এতে দলের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। আমরা বিষয়টি জেলা কমিটিকেও জানিয়েছি। এ নিয়ে সোমবার দলীয় সভা আহ্বান করা হয়েছে। সে সভায় আমরা বিস্তারিত আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’