সিলেটে তলোয়ার, কলের গানসহ পুরোনো জিনিসের প্রদর্শনী
স্টিলের একটি খাপে রাখা শত বছরের পুরোনো পিতলের তলোয়ার। তলোয়ারটির হাতলের দুই প্রান্তে দুটি প্রাণীর অবয়ব খোদাই করা। তলোয়ারের ঠিক কাছেই কলের গান (ফনোগ্রাফ)। এর পাশেই ছোট্ট একটি মুরগির খোঁয়াড়। আছে কৃষকের মাথান, টুকরি, মাছ ধরার কোকা, খলই, গাইল, ছিয়া, মই, পালকি, ঢেঁকিসহ নানা ঐতিহ্যবাহী জিনিসপত্র।
পুরোনো ও ঐতিহ্যবাহী এসব জিনিস দেখা যাচ্ছে সিলেট নগরের দাড়িয়াপাড়া এলাকায়। প্রকাশনা সংস্থা শ্রীহট্ট প্রকাশের উদ্যোগে সপ্তমবারের মতো মাসব্যাপী বইমেলা ও ঐতিহ্যবাহী জিনিসপত্রের প্রদর্শনী চলছে। প্রতিদিন বেলা ২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত। ১০ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এ প্রদর্শনী চলবে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রদর্শনীতে প্রায় ২০০ ঐতিহ্যবাহী জিনিসপত্র রাখা। এর মধ্যে বাঁশের সাঁকো, হুক্কা, টেপ রেকর্ডার, মাটির তৈরি থালা, জগ, গ্লাস, লাঙল, জোয়াল, টাইপ মেশিন, ভিডিও ক্যামেরা, কয়লার ইস্ত্রি, হাতপাখা, বিভিন্ন ধরনের মাছ ধরার জাল, কুপিবাতি, হারিকেন, হ্যাজাক লাইট, কুঁড়েঘর, পুরোনো টেলিভিশন, রাজসিংহাসন, আতরদানি, গোলাপজলদানি, দোলনা, রাজকীয় তৈজসপত্র, বাঁশের ঝাঁপি, একতারা, মাটির চুলা, পোস্ট বক্স, সিলেটের ঐতিহ্যবাহী কিনব্রিজের কাঠের রেপলিকা, প্রদীপদানি, কাঠের লাটিম, রিলের ক্যামেরা, গুলতি, দোয়াত-কলম উল্লেখযোগ্য। প্রদর্শনীর এক পাশে চলছে বইমেলা।
প্রদর্শনীতে আসা দুজন দর্শনার্থী বলেন, গ্রামীণ ঐতিহ্যের পাশাপাশি পুরোনো অনেক সামগ্রী রাখা হয়েছে। নতুন প্রজন্মের কাছে এসব অনেকটাই অচেনা। তাই যাঁরা এখানে আসছেন, তাঁরা ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হতে পেরে মুগ্ধ হচ্ছেন। বাংলাদেশের গৌরবময় ঐতিহ্য এবং কৃষ্টি সংরক্ষণ ও পৃষ্ঠপোষকতার ক্ষেত্রে এ প্রদর্শনী উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
গত শুক্রবার উদ্বোধনী দিনেই প্রদর্শনী দেখতে এসেছিলেন গ্রিন একাডেমি বিডি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিদ্দিক আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ধারণ করে শ্রীহট্ট প্রকাশ ধারাবাহিকভাবে সাত বছর ধরে যে প্রদর্শনীর আয়োজন করছে, এটা প্রশংসনীয়। অভিভাবকেরা বিলুপ্তপ্রায় ও হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যের সঙ্গে তাঁদের সন্তানদের পরিচয় করিয়ে দিতে প্রদর্শনীতে আসতে পারেন।
প্রদর্শনী ও বইমেলার আয়োজক প্রকাশক-গবেষক জিবলু রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ঐতিহ্য ও দায়বদ্ধতা থেকে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন। নতুন প্রজন্ম যেন তাঁদের পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হতে পারেন, সে জন্যই মূলত নিয়মিতভাবে প্রতিবছর এ আয়োজন করা হচ্ছে। একই সঙ্গে তাঁরা বিভিন্ন ধরনের সৃজনশীল ও মননশীল বই প্রকাশের পাশাপাশি পাঠাভ্যাস বাড়াতেও বছরব্যাপী নানা কর্মসূচি নিয়ে থাকেন।