পরিষ্কার হয় না আবর্জনা, বাড়ছে মশার উৎপাত

নালা-নর্দমা ও সড়কের পাশে জমে থাকা আবর্জনা নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। বৃষ্টি হলেই বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে থাকে, যেখানে মশার লার্ভা সৃষ্টি হয়। 

সিলেট নগরের আখালিয়া নতুনবাজার এলাকায় মূল সড়কের পাশে আবর্জনা স্তূপাকারে পড়ে থাকলেও তা অপসারণে কোনো উদ্যোগ নেই। গতকাল বিকেল পৌনে চারটায়
ছবি: প্রথম আলো

সিলেট নগরের ৪২টি ওয়ার্ডে মশার উৎপাত বেড়েছে। দিনরাত সমানতালে মশা কামড়াচ্ছে। জেলায় গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২৬৫ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। নগরবাসীর অভিযোগ, নগরের নালা-নর্দমা ও সড়ক আশপাশ নিয়মিত পরিষ্কার না করায় মশা বংশবিস্তার করছে। নগরে মশক নিধন করতেও সে রকম কোনো কার্যক্রম দেখছেন না তাঁরা। 

তবে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম দাবি করেছেন, মশকনিধনে নগরে ব্যাপকভাবে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। ১২ জন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিদিন নগরের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে মশার লার্ভা অনুসন্ধান করছেন। এ ছাড়া দৈনিক ৪০ জন কর্মী নগরের বিভিন্ন এলাকায় ওষুধ ছিটাচ্ছেন। আজ শনিবার থেকে এ কার্যক্রম আরও ব্যাপকভাবে চালানো হবে।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সিলেটে ২৬৫ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩৭ জন। গত মঙ্গলবার ৪ জন, বুধবার ৫ জন এবং বৃহস্পতিবার ১৩ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন।

সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন জন্মেজয় দত্ত প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক দিন আগে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমে গিয়েছিল। তবে গতকাল আবার বাড়তে শুরু করেছে। এখন উপজেলা পর্যায়ে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের উপশহর, কদমতলী, ভার্থখলা, পুরোনো রেলস্টেশন, আখালিয়া, মদিনা মার্কেট, পাঠানটুলা, আখালিয়া নতুনবাজার, হাওলদারপাড়া, পনিটুলা, বাগবাড়ি, ঘাসিটুলা, বেতের বাজার, কালীঘাট, কাজিরবাজার এলাকায় যত্রতত্র আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এসব এলাকার অধিকাংশ নালা-নর্দমাও দীর্ঘদিন ধরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে না। সেখানে মশা ভনভন করছে। 

কালীবাড়ি এলাকার বাসিন্দা সুবিমল সরকার বলেন, কালীবাড়ি থেকে মদিনা মার্কেট সড়কের পাশ দিয়ে যে ছড়াটি প্রবাহিত হয়েছে, এর পারেই স্থানীয় লোকজন আবর্জনা স্তূপাকারে ফেলে রেখেছেন। অন্তত দুই মাসের ভেতরে এসব আবর্জনা অপসারণ করা হয়নি। এ কারণে এখানে মশার বংশবিস্তার হচ্ছে।

উপশহর এলাকার গৃহিণী মাহবুবা বেগম বলেন, সন্ধ্যার পর শান্তিমতো বসে থাকার জো নেই। মশা সারাক্ষণ কামড়ায়। কয়েল জ্বালিয়েও নিস্তার পাওয়া যায় না। দিনেও সমানতালে মশা কামড়ায়। এর মধ্যে ডেঙ্গুর আতঙ্ক তো আছেই। অথচ মশকনিধনে এলাকায় সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে সেভাবে ওষুধ ছিটাতেও দেখা যায় না। 

আখালিয়া নতুন বাজার এলাকার মূল সড়কের পাশেই ময়লা-আবর্জনা, উচ্ছিষ্ট খাদ্যদ্রব্যসহ নানা ধরনের বর্জ্য স্তূপাকারে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, সড়কটি দিয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনের ফটকে যেতে হয়। এ ছাড়া আশপাশের এলাকার বাসিন্দা এ সড়ক দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করেন। সড়কের পাশে আবর্জনা স্তূপাকারে পড়ে থাকলেও সিটি কর্তৃপক্ষ তা অপসারণ করছে না। এমনকি এলাকাটিতে মশকনিধনের কোনো ওষুধও ছিটানো হয়নি।

নগরবাসীর অভিযোগ, নালা-নর্দমা নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। এ ছাড়া বৃষ্টি হলেই বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে থাকে, যেখানে মশার লার্ভা সৃষ্টি হয়। এসবের সমাধানে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ।  

সিলেট সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারেক উদ্দিন বলেন, পরিচ্ছন্নতাকর্মীর তীব্র সংকট রয়েছে। এ কারণে যথাযথভাবে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে মশার উপদ্রব বাড়ছে। তবে লোকবলসংকট সত্ত্বেও মশকনিধনে প্রত্যেক কাউন্সিলর ও সিটি কর্তৃপক্ষ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন। 

সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা শাখার প্রধান হানিফুর রহমান বলেন, ৭০০ জনের চাহিদা থাকলেও সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী রয়েছে ৪৭৬ জন। প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল লোকবল থাকলেও নিয়মিত ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করা হচ্ছে। তবে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম আরও জোরদার করতে আগামী সোমবার সাধারণ পরিষদের সভা ডাকা হয়েছে।