ছুটি ছাড়াই বিদেশে বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজের ফিন্যান্স বিভাগের একমাত্র শিক্ষক

প্রভাষক তোফায়েল আহমেদ ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের একমাত্র শিক্ষক হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন এই বিভাগের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী।

তোফায়েল আহমেদ

গাজীপুরের কালিয়াকৈরের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের প্রভাষক তোফায়েল আহমেদ। তিনি তিন দিনের ছুটি নিয়ে প্রায় ৪০ দিন ধরে কলেজে অনুপস্থিত। এতে বিপাকে পড়েছেন ওই বিভাগের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, প্রভাষক তোফায়েল স্ত্রী-সন্তানসহ যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন। তিনি বিভাগের একমাত্র শিক্ষক হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারিকৃত পরিপত্র অনুযায়ী, একজন সরকারি কর্মকর্তার বিদেশভ্রমণের ক্ষেত্রে কয়েকটি নির্দেশনা মেনে চলার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে ব্যক্তিগত কারণ। এর আওতায় তিনি চিকিৎসা, পারিবারিক আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যেতে পারেন। ধর্মীয় কারণের আওতায় তিনি তীর্থস্থান পরিদর্শনের জন্য বিদেশ সফরে যেতে পারেন।

বিদেশভ্রমণের জন্য যে কাউকে কলেজ কর্তৃপক্ষের ছুটি এবং মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু এসবের কোনোটারই তোয়াক্কা করেননি প্রভাষক তোফায়েল। তিনি কলেজ কর্তৃপক্ষ বা সংশ্লিষ্ট বিভাগের কারও কাছ থেকে ছুটির অনুমতি না নিয়ে ভ্রমণ ভিসা নিয়ে চলে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রে।

কলেজ কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় অবস্থিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজ। কলেজটি ২০১৬ সালে জাতীয়করণ করা হয়। কলেজের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগে প্রথম বর্ষে ২০০, দ্বিতীয় বর্ষে ১৫০ এবং ডিগ্রিতে ১৫০ শিক্ষার্থী রয়েছেন। ওই বিষয়ের একমাত্র প্রভাষক তোফায়েল। তিনি গত ২০ জানুয়ারি কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তিন দিনের ছুটি নেন। পরে তিন দিনের ছুটি নিয়ে স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। কিছুদিন তিনি অনুপস্থিত থাকার পর কলেজের অন্য শিক্ষকেরা তাঁর খোঁজ করে স্বজনদের কাছে জানতে পারেন, তিনি দেশে নেই। বিষয়টি কলেজের অধ্যক্ষ জানলেও দৃশ্যমান ও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা এখন নেননি।

অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে জানান, ‘ওই শিক্ষক কোথায় আছেন, আমরাও জানি না। তিনি কলেজে অনুপস্থিত আছেন, এটাই দেখতে পাচ্ছি।’

কলেজ কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, কলেজের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগে দুজন শিক্ষকের পদ থাকলেও একটি পদ খালি থাকায় তোফায়েলকেই সব ক্লাস নিতে হতো। প্রায় ৪০ দিন হয়ে গেলেও তিনি ফিরে না আসায় ওই বিষয়ে ক্লাসও করতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা।

কলেজের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ছাত্র মুজাম্মেল হোসেন জানান, ‘প্রায় দেড় মাস ধরে তাঁদের ওই বিষয়ে ক্লাস হচ্ছে না। ক্লাস না হওয়ায় তাঁদের লেখাপড়ায় ব্যাঘাত ঘটছে। শুনেছি তোফায়েল স্যার নাকি পরিবারসহ আমেরিকায় চলে গেছেন।’ একই সমস্যার কথা জানান ওই বিভাগের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন ও সজীব সরকার।

কলেজের কম্পিউটার অপারেটর মো. রিপন হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তোফায়েল স্যার ২১, ২২ ও ২৩ জানুয়ারি ছুটি নিয়েছিলেন। এরপর ছুটি শেষ হলেও তিনি আর কলেজে আসেননি।

অধ্যক্ষ সুফিয়া বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘৩৮ দিন ধরে তোফায়েল অনুপস্থিত। তিনি ছুটি নেননি, তবে আবেদন করেছিলেন। আমি বিষয়টি ডিজি অফিসে জানিয়েছি এবং নতুন শিক্ষক চেয়েছি। তোফায়েলের বাড়িতে শোকজ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।’

শিক্ষার্থীরা ক্লাস কীভাবে করছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিকল্পভাবে চালানোর চেষ্টা করছি। তবে সেটা যথেষ্ট নয়।’

প্রসঙ্গত, কলেজটির অন্যান্য বিভাগেও শিক্ষক–সংকট রয়েছে। সমাজকর্ম বিভাগে একজন, অর্থনীতিতে একজন, ভূগোলে একজন, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিংয়ে দুজন, আইসিটি বিভাগে একজনসহ মোট ৬টি পদ ফাঁকা রয়েছে। এতে গুরুতরভাবে ব্যাহত হচ্ছে সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রম।