ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী
জলকপাটের সঙ্গে জলধারার আড়ি, ২ কোটি টাকা জলে
জলকপাটটি খালের যে পাশে পড়েছে, সেটিকে শুকিয়ে একেবারে চৌচির। জলকপাট থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে জলধারা চলে গেছে অন্য পাশ দিয়ে।
দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ। মাঝখানে এঁকেবেঁকে বয়ে গেছে নহনা খাল। সেই খালে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে একটি জলকপাট (স্লুইসগেট)। জলকপাটটি খালের যে পাশে পড়েছে, সেদিকে শুকিয়ে একেবারে চৌচির। জলকপাট থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে জলধারা চলে গেছে অন্য পাশ দিয়ে। এ যেন জলকপাটের সঙ্গে জলধারার আড়ি।
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীর উপজেলার জাউনিয়া গ্রামে এমন দৃশ্যের দেখা মেলে। শুষ্ক মৌসুমে কৃষকদের সেচসুবিধার জন্য নির্মিত জলকপাটটি এখন কাজেই আসছে না। দীর্ঘদিন ব্যবহৃত না হওয়ায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত জলকপাটটি নষ্ট হতে বসেছে। চুরি হয়ে গেছে অধিকাংশ লৌহজাত সামগ্রী। নির্জন জলকপাটে এখন নিয়মিত অসামাজিক কার্যকলাপ চলে।
উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শুষ্ক মৌসুমে কৃষিজমিতে সেচসুবিধার জন্য জাউনিয়া গ্রাম দিয়ে বয়ে যাওয়া নহনা খালের ওপর একটি জলকপাট নির্মাণের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। অংশগ্রহণমূলক ক্ষুদ্রাকার পানিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২ কোটি ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ে ২০১৬ সালের ৩০ এপ্রিল জলকপাটটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। তার আগেই সেটি উদ্বোধন করেন ঠাকুরগাঁও-২ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলাম।
গত বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, খালের যে পাশে জলকপাটটি দাঁড়িয়ে আছে, সেই পাশে পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। খালের পানির গতিপথ পরিবর্তন করে জলকপাটটির পাশ কাটিয়ে অন্য পাশ দিয়ে বইছে। জলকপাটে ব্যবহার করা অধিকাংশ লৌহজাত যন্ত্রাংশ নেই। জলকপাটের ওপর খড়ি ও সিগারেটের প্যাকেটের পোড়া ছাই। দেখে বোঝা যায়, সেখানে নিয়মিত মাদকসেবীদের আড্ডা জমে।
জলকপাট পরিদর্শনের সময় খালের পাড় দিয়ে যাচ্ছিলেন স্থানীয় কাশীডাঙ্গা গ্রামের কৃষক রজনীকান্ত। তিনি বলেন, শুরুতে শুকনা মৌসুমে এই জলকপাটের জমা পানি দিয়ে তাঁরা জমিতে সেচ দিয়েছেন; কিন্তু খালের পানি জলকপাটের দূর দিয়ে ঘুরে যাওয়ায় এখন সেটি কৃষকদের কাজে আসছে না। পাঁচ বছর ধরে এভাবে পড়ে আছে। ঠিকও করা হচ্ছে না।
স্থানীয় কৃষক খসিউর রহমান বলেন, ‘কৃষকের ভালোরতানে গেটখান তৈরি করা হইছিল। অ্যালা কৃষকের কাজত লাগছেনি। সরকারের টাকালাই যাই (গচ্চা) গেইছে।’
কলেজশিক্ষক খাদেমুল ইসলাম বলেন, সন্ধ্যা নামলেই এখানে অসামাজিক কার্যকলাপ চলে। ৫ আগস্টের পর প্রশাসনের গাছাড়া ভাবের সুযোগে চোরের দল জলকপাটের লোহার যন্ত্রাংশ চুরি করে নিয়ে গেছে।
সরকারি সম্পদ নষ্ট না করে কৃষকদের জন্য উপযোগী করে তোলার দাবি জানিয়ে ছোট সিংগিয়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির বলেন, জলকপাটটি সচল করতে তাঁরা নিয়মিত এলজিইডির সঙ্গে যোগাযোগ করে যাচ্ছেন। পানি স্লুইসগেটের দিকে ফিরিয়ে আনতে খালের পাড় ব্লক দিয়ে বেঁধে দিলে তাঁরা সুফল পাবেন। এটা না করলে জলকপাটটি তাঁদের কোনো কাজে আসবে না।
যোগাযোগ করলে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা প্রকৌশলী মাইনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আকস্মিক বন্যায় পলি এসে জলকপাট দিয়ে খালের পানি যাওয়ার পথ বন্ধ করে ফেলেছে। ফলে খালের পানি অন্যদিকে প্রবাহিত হচ্ছে। এ জন্য এখন জলকপাটটি কৃষকদের সেচসুবিধায় আসছে না। খালটি খনন করার পর যন্ত্রপাতি আবার লাগালেই সেটি সচল হবে।
এলজিইডির ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন বিশ্বাস বলেন, জলকপাটটি সচল করতে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলেই তাঁরা কাজ শুরু করবেন। কাজ শেষ হলে কৃষকেরা সুফল পেতে শুরু করবেন।