চট্টগ্রামের পাহাড়ে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন, মাটি খুঁড়তেই বেরিয়ে এল দেয়াল ও মেঝে
স্থানীয় লোকজনের কাছে পাহাড়টি পরিচিত ছিল দেয়াঙ পাহাড় নামে। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বড় উঠান ইউনিয়নের বিশ্বমুড়া এলাকার এ পাহাড় জঙ্গল ও গাছপালা ঢাকা আর পাঁচটি পাহাড়ের মতোই। কিন্তু পাহাড়ের জঙ্গল ও গাছপালা সরিয়ে মাটি খুঁড়তেই বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে চাপা পড়া ইতিহাস—ইটের দেয়াল ও মেঝেসদৃশ স্থাপনার অবয়ব।
১৬ সেপ্টেম্বর থেকে দেয়াঙ পাহাড়ে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও অনুসন্ধানকাজ শুরু করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগীয় আঞ্চল। কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মামুনুর রশীদের সভাপতিত্বে খননকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক চন্দন কুমার দে। স্বাধীনতা–পরবর্তীকালে চট্টগ্রাম জেলায় প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ এটি। প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত খননকাজ ও বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গবেষণা চলে এখানে।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ জানায়, জনশ্রুতি অনুযায়ী কর্ণফুলী উপজেলার বড় উঠান ইউনিয়নের দেয়াঙ পাহাড়ের বিশ্বমুড়া নামক স্থানে আরাকান রাজা বিক্রমের বাড়ি ছিল। গবেষণায় উঠে এসেছে আনোয়ারা উপজেলার ঝিওরি, হাজীগাঁও, বটতলী ও কর্ণফুলী উপজেলার বড় উঠান, জুলধা এলাকাজুড়ে সপ্তম-অষ্টম শতকে পণ্ডিত বিহার নামে একটি জ্ঞানচর্চা কেন্দ্রও গড়ে ওঠে। ষোড়শ শতকের দিকে সেটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। বর্তমানে সেখানে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও অনুসন্ধানকাজ শুরু হয়েছে। খনন ও অনুসন্ধান শেষে বোঝা যাবে আসলে কী ছিল।
গতকাল শনিবার দুপুরে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, খননশ্রমিকেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ সুতা ধরে মাটি খুঁড়ছেন, কেউ মাটি থেকে এবড়োখেবড়ো ইট সরিয়ে নিচ্ছেন। কেউ দেয়াল থেকে মাটি খুলে নিচ্ছেন। কেউ ভাঙা ইট স্তূপ করে রাখছেন।
খনন করা অংশে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনের কাঠামো। তবে এটি আসলে কী, কোন সময়কার, তা এখনো জানা যায়নি।
কাজ শুরুর এক সপ্তাহের মধ্যে তিনটি চওড়া দেয়াল ও তিনটি মেঝের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে বলে জানান প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক এ কে এম সাইফুর রহমান। তিনি বলেন, দুজন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে মহাস্থানগড় থেকে আসা ১০ জন অভিজ্ঞ শ্রমিক খননকাজ করছেন। আগামী দুই মাস এ কার্যক্রম চলবে বনে জানান তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা ও কলেজছাত্র মো. রাসেল বলেন, ‘আমাদের বাড়ির পাশে এ রকম ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ছিল, তা ভাবতে ভালো লাগছে। আমরা খননকাজ দেখতে যাই প্রতিদিন।’
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘দেয়াঙ পাহাড় প্রত্নতত্ত্বের খনি। তাই চট্টগ্রামের পুরাকীর্তি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কথা চিন্তা করে প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান ও গবেষণাকাজে আমরা পুরোপুরি সহায়তা করছি।’