পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেন চালিয়ে ইতিহাসে নাম লেখালেন রবিউল আলম

পদ্মা সেতু দিয়া চলা প্রথম ট্রেনের চালক রবিউল আলম
ছবি: প্রথম আলো

ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশন থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চালিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করলেন রবিউল আলম (৪৩)। পদ্মা নদীর ওপর দিয়ে ট্রেনটি অপর পাড়ের মাওয়া স্টেশনে যায়।

জানতে চাইলে রবিউল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাত দিন আগে নিশ্চিত হই, পদ্মা সেতু দিয়ে যাওয়া প্রথম ট্রেনের চালক হতে যাচ্ছি আমি। এর পর থেকে উত্তেজনার মধ্য দিয়ে সময় কাটছে। প্রথম চালক হিসেবে পদ্মা নদীর ওপর দিয়ে ট্রেন চালিয়ে ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকব। আমার পরের প্রজন্ম এ নিয়ে গর্ব বোধ করবে। ভাবতেই শিহরিত হচ্ছি।’

আজ মঙ্গলবার বেলা ১টা ২১ মিনিটে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলামসহ অন্য অতিথিদের নিয়ে ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতুর উদ্দেশে পরীক্ষামূলকভাবে সাত বগির বিশেষ ট্রেনটি ছেড়ে যায়। এরপর ট্রেনটি বিকেল সোয়া ৩টায় মাওয়া স্টেশনে পৌঁছায়।

রবিউল আলম বলেন, ‘আমরা ঈশ্বরদীতে মোট ৭৩ জন ট্রেনচালক কর্মরত রয়েছি। এর মধ্যে থেকে আমাকে বেছে নেওয়ায় বিস্ময়ের পাশাপাশি প্রচণ্ড আবেগ কাজ করেছে। মাঝেমধ্যে নিজেকে প্রশ্ন করেছি, আমি পারব তো।’

রবিউল আলমের বাড়ি সিরাজগঞ্জ সদরে। ১৯ বছর আগে সহকারী ট্রেনচালক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। রবিউল আলম বলেন, ‘চাকরি পাওয়ার পর এ পর্যন্ত দেশের ৪৩টি জেলার ট্রেন চালানোর সুযোগি পেয়েছি। তবে আজকের অনুভূতি ভাষায় ব্যক্ত করা যাবে না।’

আরও পড়ুন

যে ট্রেন আজ পদ্মা সেতু অতিক্রম করেছে, সেটি চীন থেকে আমদানি করা। সাত বগির ট্রেনটির মধ্যে একটি খাবারের বগি। এ ছাড়া একটি ভিআইপি এসি চেয়ার কামরা, একটি এসি স্লিপার কামরা, বাকিগুলো শোভন চেয়ার কোচ। ট্রেনটিতে যাত্রীর ধারণক্ষমতা ৪৪৯ জন।

ট্রেনের এসি ভিআইপি কামরাটি ৯৬ আসনবিশিষ্ট। প্রথম যাত্রায় এ কামরায় যাত্রী হয়েছেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম, চিফ হুইপ নূর এ আলম চৌধুরী, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক, সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন, মজিবুর রহমান চৌধুরী, নাহিম রাজ্জাক, সাগুফতা ইয়াসমিন ও আবদুস সোবাহান। রেলমন্ত্রী ছাড়া অন্যরা ফরিদপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও মুন্সিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন আসনের সংসদ সদস্য।

আরও পড়ুন

পরীক্ষামূলক বিশেষ এই ট্রেন নিয়ে গতকাল সোমবার সকাল নয়টার সৈয়দপুর থেকে রওনা হন চালক রবিউল আলম। বিকেল সোয়া চারটায় ঈশ্বরদী থেকে আবার ভাঙ্গার উদ্দেশে রওনা দেন। গতকাল রাত সাড়ে নয়টার দিকে ট্রেনটি ভাঙ্গা রেলস্টেশনে এসে পৌঁছায়।

পদ্মা সেতুর রেল লিংক প্রকল্প সূত্র জানায়, যাত্রীদের ট্রেনে চলাচলের জন্য ভাঙ্গা হতে পদ্মা সেতু হয়ে মাওয়া পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার রেলপথ প্রস্তুত করা হয়েছে। নির্মাণ করা হচ্ছে চারটি স্টেশন ও একটি জংশন। স্টেশনগুলো হলো—ভাঙ্গা স্টেশন, ভাঙ্গা জংশন স্টেশন, শিবচর স্টেশন, পদ্মা স্টেশন ও মাওয়া স্টেশন। ৪২ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে ট্রেনটির সময় লাগবে দুই ঘণ্টা। পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলের জন্য পাঁচটি স্টেশন সাজানো হয়েছে।