অসুস্থ বাবাকে দেখতে বাইকে যাচ্ছিলেন বাড়িতে, পথেই প্রাণ গেল পুলিশ সদস্যের

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত পুলিশ সদস্য রিয়াজ উদ্দিন
ছবি: সংগৃহীত

বাড়ির আঙিনায় পিছলে পড়ে একটি হাত ভেঙেছে বাবার। খবর পেয়ে অসুস্থ বাবাকে দেখতে মোটরসাইকেলে বাড়ি যাচ্ছিলেন পুলিশ সদস্য (কনস্টেবল) রিয়াজ উদ্দিন (৩১)। কিন্তু তাঁর আর দেখা হলো না বাবাকে। সড়ক দুর্ঘটনায় পথেই তিনি মারা যান।

গতকাল শনিবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে লালমাই উপজেলার বাগমারা উত্তর ইউনিয়নের পশ্চিম চেঙ্গাহাটা এলাকায় বাগমারা-মগবাড়ি সড়কে দুর্ঘটনায় মারা যান রিয়াজ উদ্দিন। তিনি কুমিল্লার লালমাই থানায় কর্মরত ছিলেন। গত ১৫ আগস্ট রিয়াজ উদ্দিন লালমাই থানায় যোগ দেন। থানায় কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন তিনি।

রিয়াজ উদ্দিন চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার ঘড়িমণ্ডল গ্রামের বেলাল হোসেনের ছেলে। ২০১৩ সালের ২৯ মার্চ তিনি পুলিশে কনস্টেবল হিসেবে যোগদান করেন। দাম্পত্য জীবনে এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক রিয়াজ উদ্দিন।

লালমাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছুটি নিয়ে পুলিশ কনস্টেবল রিয়াজ উদ্দিন বাড়ি যাচ্ছিলেন। কিন্তু নিজের মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। আমরা তাঁর মাগফিরাত কামনা করছি এবং সহকর্মীর মৃত্যুতে আমাদের সব পুলিশ সদস্য শোকাহত। মাত্র কয়েক দিন হলো ছেলেটা এখানে যোগদান করেছে। এই কয়েক দিনেই তাঁকে একজন ভালো মানুষ মনে হয়েছে আমার কাছে।’

নিহত ব্যক্তির পরিবার ও থানা–পুলিশ সূত্র জানায়, পুলিশ সদস্য রিয়াজ উদ্দিনের বাবা বেলাল হোসেন গত শুক্রবার বিকেলে বাড়ির আঙিনায় পিছলে পড়লে তাঁর একটি হাত ভেঙে যায়। বিষয়টি জানার পর ছুটি নিয়ে রিয়াজ গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে মোটরসাইকেলে বাগমারা-মগবাড়ি সড়ক দিয়ে বাড়ি রওনা হন। কর্মস্থল থেকে দুই কিলোমিটার দূরে পশ্চিম চেঙ্গাহাটা মোড়ে পৌঁছালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তিনি সড়কের পাশের ডোবায় পড়ে যান। মাথায় হেলমেট পরা থাকলেও সড়কের পাশের একটি পিলারে আঘাত লেগে তাঁর থুতনি ফেটে যায়। তাৎক্ষণিক স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে রিয়াজ উদ্দিনের বাবা বেলাল হোসেন বলেন, ‘আমার অসুস্থতার কথা শুনে ছেলেটা ছুটি নিয়ে বাড়ি আসতে চেয়েছিল। কিন্তু আল্লাহ পাক তাঁকে চিরদিনের ছুটি দেবেন, ভাবতে পারিনি। আমার ছেলেটার পরিবারই শেষ হয়ে গেল। আমার নাতি-নাতনি এখন কাকে বাবা বলে ডাকবে?’