অবহেলা আর নানা সংকটে বীরশ্রেষ্ঠদের স্মরণে বানানো জাদুঘর ও গ্রন্থাগার
মহান মুক্তিযুদ্ধে সর্বোচ্চ বীরত্বের স্বীকৃতি পাওয়া বীরশ্রেষ্ঠদের স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় গড়ে তোলা হয়েছে গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও বীরশ্রেষ্ঠদের আত্মত্যাগ তুলে ধরার উদ্দেশে প্রতিষ্ঠানগুলো গড়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ জায়গায় এসব প্রতিষ্ঠান চলছে অবহেলা, জনবলসংকট ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে।
কোথাও ভবন জীর্ণ, কোথাও নেই পর্যাপ্ত বই কিংবা প্রদর্শনী, কোথাও আবার নিয়মিত খোলা থাকছে না জাদুঘর। এ কারণে দর্শনার্থী ও পাঠকের সংখ্যা দিন দিন কমছে। জেলা পরিষদ কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে থাকা এসব প্রতিষ্ঠান কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না বলে অভিযোগ স্থানীয় লোকজনের।
বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর
নানা সমস্যা নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার রুহুল আমিননগরে (সাবেক বাঘপাচড়া গ্রাম) প্রতিষ্ঠিত বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করার মতো নেই কোনো বিশেষ উদ্যোগ। নেই পর্যাপ্ত জনবল। একমাত্র কেয়ারটেকার প্রতিষ্ঠানটির সবকিছু। এ কারণে প্রতিষ্ঠার প্রায় দেড় যুগেও পূর্ণতা পায়নি স্মৃতি জাদুঘরটি। এ কারণে দিন দিন কমছে দর্শনার্থীর সংখ্যাও।
সরেজমিন দেখা যায়, গ্রন্থাগার ও জাদুঘরের ভেতরের দেয়ালের রং বিবর্ণ হয়েছে গেছে। ৯টি বৈদ্যুতিক পাখার মধ্যে ৫টিই অচল। জানালার কাচ ভাঙা, দরজা নষ্ট, চেয়ার ভাঙাচোরা। গ্রন্থাগার থাকলেও কোনো সংবাদপত্র বা মাসিক পত্রিকা নেই। তাকের ওপর মুক্তিযুদ্ধের বইসহ বিভিন্ন বই সাজানো থাকলেও লাইব্রেরিয়ান না থাকায় সেগুলো পড়ে আছে অনেকটা অযত্ন-অবহেলায়।
জেলা সদর থেকে জাদুঘর দেখতে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নারী কর্মকর্তা সানজিদা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাদুঘরে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের ব্যক্তিগত বা কর্মজীবনের ব্যবহৃত জিনিসপত্র বা পর্যাপ্ত স্মৃতিচিহ্ন নেই। এখানে শুধু কিছু ছবি, সরকারি-বেসরকারি পদক ও কিছু মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বই রয়েছে, যা একজন বীরশ্রেষ্ঠের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য কোনোভাবেই যথেষ্ট নয়।’
আরেক বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা বলেন, ২০০৮ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে স্মৃতি জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। তখনকার উদ্যোগটি যথাযথ ছিল। কারণ, স্বাধীনতার পর দীর্ঘ সময় পার হলেও কেউ বীরশ্রেষ্ঠদের স্মৃতি রক্ষায় তেমন কিছুই করেনি। কিন্তু পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক সরকার দীর্ঘ ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকলেও জাদুঘরটিকে পূর্ণতা দেওয়ার বিষয়ে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।
কেয়ারটেকার নাছির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, জাদুঘরে তিনিই একমাত্র কর্মচারী। প্রায় প্রতিদিনই দেশের দূরদূরান্ত থেকে দর্শনার্থীর জাদুঘরটি দেখতে আসেন। তবে সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার দর্শনার্থীর সংখ্যা বেশি থাকে। দর্শনার্থীরা এলে তাঁদের পরিদর্শনের সুযোগ করে দেওয়া, জাদুঘরের ধোয়া-মোছা, ঝাড়ু দেওয়া, টয়লেট পরিষ্কার করাসহ সবকিছুই তাঁকে একা করতে হয়। তাই দর্শনার্থীদের সেবা দেওয়ার সুবিধার্থে একজন লাইব্রেরিয়ানসহ আরও জনবল নিয়োগ দিলে ভালো হতো।
বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর
ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার সালামতপুরে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরটি ২০০৮ সালে উদ্বোধন করা হয়। প্রায় ৫ হাজার ১৭৯টি বই নিয়ে গ্রন্থাগারটি সমৃদ্ধ হলেও স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে এটি কার্যত গুরুত্বহীন।
বীরশ্রেষ্ঠের ব্যবহৃত স্মৃতিচিহ্ন বলতে আছে মাত্র দুটি প্লেট ও একটি বাটি। পাঠক উপস্থিতি খুবই কম। যোগাযোগব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় দর্শনার্থীও আসেন না। একজন লাইব্রেরিয়ান ও একজন দারোয়ান কাম কেয়ারটেকারের মাধ্যমে পরিচালিত হয় প্রতিষ্ঠানটি। দুজনের জন্য এই ভবনেই আলাদা দুটি কক্ষ আছে। তবে তাঁদের কাউকে স্থায়ীভাবে চাকরি দেওয়া হয়নি, তাঁরা কাজ করছেন মজুরিভিত্তিক (মাস্টাররোল)। বারবার আবেদন–নিবেদন করে চাকরি স্থায়ী না হওয়ায় কাজের ব্যাপারে তাঁদের মধ্যে আগ্রহ কম।
লাইব্রেরির পাঠকদের রেজিস্টার নথিভুক্ত করার জন্য একটি খাতা আছে। সেই খাতা ঘেঁটে দেখা যায় পাঠকের সর্বশেষ নিবন্ধন আছে ২০২৪ সালের ১১ জানুয়ারি। এর আগে নিবন্ধন আছে ২০২৩ সালের ২০ ডিসেম্বর, তার আগের তারিখ ২০১৮ সালের ১৩ আগস্ট। একটি আলমারিতে উইপোকা ধরার কারণে পাঁচ থেকে সাত শ বই নষ্ট হয়ে গেছে। নষ্ট হওয়া বইয়ের প্রকৃত সংখ্যা জানা সম্ভব হয়নি, একই কারণে পাওয়া যায়নি নষ্ট হওয়া বইয়ের তালিকা।
ফরিদপুর শহর থেকে সালামতপুরের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের কামারখালী বাজার থেকে এ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরের দূরত্ব চার কিলোমিটার। সড়কটি বারবার নদীভাঙনে বিপর্যস্ত এবং চলাচলের অনুপযুক্ত। বর্তমানে নদীভাঙন রোধে কাজ চলমান থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি পড়ে আছে বেহাল অবস্থায়। সড়ক দিয়ে মাইক্রোবাস কিংবা বাস চলাচলের কোনো সুযোগ নেই।
কামারখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রাকিব হোসেন চৌধুরী বলেন, এ প্রতিষ্ঠানে পাঠক ও দর্শক যাওয়ার পথে প্রধান অন্তরায় যাতায়াত। হেঁটেও কোনো মানুষ এ সড়কে চলাচল করতে চান না। এখানে একটি উন্নত মানের লাইব্রেরি আছে, যেখানে অনেক মূল্যবান বই আছে, তা জানানোর জন্য এলাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রচারণা চালানো যেতে পারে। প্রতিষ্ঠান ঘিরে বীরশ্রেষ্ঠের মৃত্যুদিন ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে যে আয়োজন করা হয়, তার কলেবর বাড়ানো যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহি মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর
ভোলার আলীনগরে বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহি মোহাম্মদ মোস্তফা কামালের নামে নির্মিত গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর চরম অবহেলায় পড়ে আছে। চারপাশে বনজঙ্গল, ভেতরে ভাঙাচোরা আসবাব। নেই পর্যাপ্ত বই, নেই কোনো স্মারক। জাদুঘরে সাত বছর ধরে লাইব্রেরিয়ান নেই। একজন কেয়ারটেকার দিনমজুরি ভিত্তিতে কাজ করছেন। স্থানীয় শিক্ষার্থীরা জানান, দর্শনার্থী না থাকায় জাদুঘরটি কার্যত অকেজো হয়ে পড়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, তিন বছর আগে রং করলেও ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। স্মৃতি পাঠাগারের সামনে বনজঙ্গল হয়ে আছে। আগে মালি গিয়ে বাগান সংস্কার করলেও এখন তা বন্ধ আছে। জাদুঘরে সাত বছর ধরে লাইব্রেরিয়ান নেই। আছেন একজন কেয়ারটেকার। তিনিও খোলার ২২ দিন ৭০০ টাকা করে দিনমজুরি পান। পাঠাগারে ১৭টি বুকশেলফের মধ্যে ৯টি ঠিক আছে এখন। উদ্বোধনী সময়ে শিশুসাহিত্য, বিজ্ঞান, রচনাবলিসহ নানা বিষয়ের যে বই দেওয়া হয়েছে সেগুলোর শেলফ ভাঙা ও খালি পড়ে আছে। গত ১০ বছরে নতুন কোনো বই দেওয়া হয়নি। মোস্তফা কামালের জীবনী বা বীরত্বগাথা নিয়ে কোনো বই বা নথির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি পাঠাগারে।
দেখা গেছে, পাঠাগারের ফ্যান ভালো, কিন্তু তিনটি বাল্ব জ্বলে, অন্যগুলো বিকল। রিডিং টেবিল নষ্ট হচ্ছে, ৪০টি চেয়ারের ৩০টি আছে। বাকিগুলো ভাঙা। ফুলবাগানটি পরিষ্কার করা দরকার। ভবনের দেওয়ালে শেওলা পড়েছে। মাঠের মধ্যে গরু চরে। পতাকাস্ট্যান্ড নেই।
মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, বীরশ্রেষ্ঠের স্মৃতি সংরক্ষণে কোনো পরিকল্পিত উদ্যোগ নেই। ফলে নতুন প্রজন্ম তাঁর সম্পর্কে জানতে পারছে না। প্রাথমিকের বই ছাড়া কোথাও তাঁর বীরত্ব যথাযথভাবে উপস্থাপিত নেই। অনেক শিক্ষার্থী এমনকি তাঁর জন্মস্থান কোথায় তা–ও জানে না।
ভোলা নাজিউর রহমান ডিগ্রি কলেজের ইংরেজি প্রভাষক কামাল হোসেন শাহিন বলেন, বীরশ্রেষ্ঠের নামের গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরের জনপ্রিয়তা বাড়াতে সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত। সরকারি দিবস, মেলা, সাহিত্য মেলাসহ সব অনুষ্ঠান, প্রতিযোগিতার আয়োজন করা উচিত।
গ্রন্থাগার ও জাদুঘরটি দেখভালের দায়িত্ব ভোলা জেলা পরিষদের। পরিষদের প্রশাসক ও ভোলার জেলা প্রশাসক শামীম রহমান বলেন, তিনি নতুন এসেছেন। খোঁজ নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন।
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর
নড়াইল সদর উপজেলার মহিষখোলা (বর্তমান নূর মোহাম্মদ নগর) গ্রামে স্থাপন করা হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। এটি নূর মোহাম্মদ শেখের জন্মস্থান। নড়াইল জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই প্রতিষ্ঠানটিতে বীরশ্রেষ্ঠের ব্যবহৃত জিনিসপত্র ছাড়াও রয়েছে প্রায় ৬ হাজার বই। ২০০৮ সালের ১৮ মার্চ উদ্বোধন করা হয় এই প্রতিষ্ঠানটি।
সম্প্রতি সরেজমিন প্রতিষ্ঠানটি তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। বাইরে থেকে দেখা যায়, কয়েকটি জানালার কাচ ভাঙা পড়ে আছে। আশপাশে কেউ নেই। এরপর গ্রন্থাগারের কেয়ারটেকার ইউনুস শেখের মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করে তাঁকে ফোন দিলে তিনি জানান, দাপ্তরিক কাজে তিনি নড়াইল জেলা পরিষদে গেছেন। এ কারণে গ্রন্থাগারটি বন্ধ আছে।
এ সময় এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বীরশ্রেষ্ঠের স্মরণে ও এলাকাবাসীর জ্ঞানের প্রসার ঘটানোর লক্ষ্যে কোটি টাকা খরচ করে গ্রন্থাগার ও জাদুঘরটি নির্মাণ করে হলেও কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলছে না। জনবলসংকটে মাঝেমধ্যে এটি বন্ধ থাকে। দূরদূরান্ত থেকে অনেক অতিথিরা এসেও ফিরে যান কখনো কখনো। এ ছাড়া লাইব্রেরিতে ছয় হাজার বই থাকা সত্ত্বেও লাইব্রেরিয়ানের অভাবে এর সুষ্ঠু ব্যবহার হচ্ছে না।
পরে জেলা পরিষদের গিয়ে আবার কথা হয় কেয়ারটেকার ইউনুস শেখের সঙ্গে। তিনি বলেন, মাঝেমধ্যে লাইব্রেরিয়ান নিয়োগ দেওয়া হলেও তাঁরা থাকেন না। প্রতিষ্ঠানের শুরু থেকেই তিনি এখানে কেয়ারটেকার হিসেবে কাজ করছেন। পুরো প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে তিনি একাই কর্মরত। এর ফলে দাপ্তরিক কোনো কাজকর্মে তিনি বাইরে থাকলে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ পড়ে থাকে। এ ছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সময় অনেক মানুষের সমাগম হয়, সে সময় একার পক্ষে সামাল দেওয়া কঠিন হয়। তিনি আরও বলেন, ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করার ফলে ভবন, বই ও আলমারিগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সেখান একজন করে লাইব্রেরিয়ান, আয়া ও প্রহরী নিয়োগ দিলে ভালো হয়।
এ ব্যাপারে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আছাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি অল্প কিছুদিন আগে এখানে যোগদান করেছেন। দ্রুতই ওই প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শনে যাবেন। সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহি হামিদুর রহমান গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার হামিদনগরে অবস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহি হামিদুর রহমান গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর তুলনামূলক ভালো অবস্থায় আছে। প্রতিদিন দেড় শতাধিক পাঠক আসেন। তবে এখানেও স্থায়ী জনবল নেই।
মহেশপুর উপজেলার খোর্দ্দখালিশপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান। তাঁর নাম অনুসারে গ্রামের নামকরণ করা হয় ‘হামিদনগর’। ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর।
সম্প্রতি ওই গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরে গিয়ে কথা হয় এটির লাইব্রেরিয়ান ও হামিদুর রহমানের ভাতিজা মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, বর্তমানে এই লাইব্রেরিতে পাঁচ হাজারের বেশি বই আছে। প্রতিদিন ১৫০ থেকে ১৬০ জন পাঠক ও দর্শনার্থী এখানে আসেন। প্রতিদিন ২টি করে পত্রিকা রাখা হয়, বইয়ের পাশাপাশি পাঠকেরা পত্রিকাও পড়েন।
জাদুঘরে হামিদুর রহমানের তেমন কোনো স্মৃতিচিহ্ন দেখা যায়নি, তবে বেশ কিছু ছবি ও ম্যুরাল চিত্র আছে। গ্রন্থাগারে ঢুকে দেখা গেল কয়েকজন ছাত্রী বই পড়ছেন। তাঁরা জানান, মাঝেমধ্যেই এখানে আসেন বই পড়তে। বাইরে সময় নষ্ট না করে তাঁরা লাইব্রেরিতে সময় পার করেন বলে জানান। এই লাইব্রেরিতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস–সংশ্লিষ্ট বই পাওয়া যায়, এ কারণে তাঁরা বেশি আগ্রহ নিয়ে এখানে আসেন।
স্থানীয় বাসিন্দা কামরুল ইসলাম বলেন, লাইব্রেরিটির জনপ্রিয়তা ক্রমেই বাড়ছে। পাশে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের নামে কলেজ থাকায় শিক্ষার্থীরা সব সময় এখানে আসছেন। কিন্তু লাইব্রেরিটি বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা রাখা হয়। শুক্র ও শনিবার বন্ধ থাকে। এর ফলে পাঠক ও দর্শনার্থীরা প্রকৃত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তিনি বলেন, স্থানীয় লোকজনের কথা চিন্তা করে সন্ধ্যা পর্যন্ত এবং সপ্তাহে সাত দিনই খোলা রাখা প্রয়োজন।
লাইব্রেরিয়ান মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তিনি ছাড়াও মুকুল জোয়ার্দ্দার নামে আরেকজন কেয়ারটেকার আছেন। তাঁরা সকাল-সন্ধ্যা খোলা রাখতে চান। কিন্তু মাসে মাত্র ১৫ হাজার টাকা চুক্তিতে তাঁদের কাজ করতে হচ্ছে। এই টাকায় জীবনধারণ করা কঠিন। জেলা পরিষদ থেকে তাঁদের বেতন দেওয়া হয়। ২০০৮ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করলেও আজও তাঁদের চাকরি স্থায়ী করা হয়নি। তিনি লাইব্রেরি আরও জনপ্রিয় ও পাঠকপ্রিয় করতে তাঁদের চাকরি স্থায়ীকরণের দাবি করেন।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক: নোয়াখালী, ফরিদপুর, ঝিনাইদহ এবং প্রতিনিধি: ভোলা ও নড়াইল]