ফরিদপুরে ডেঙ্গুতে শিশু, নারীসহ চারজনের মৃত্যু
ফরিদপুরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ডেঙ্গু জ্বরে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু, নারীসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ফরিদপুরে ৩৮ জনের মৃত্যু হলো। আর গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ২৮৪ জন। আজ বুধবার জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র এই তথ্য জানিয়েছে।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, গতকাল মঙ্গলবার সকাল আটটা থেকে আজ বুধবার সকাল আটটা পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ২৮৪ জন ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ৮২১ জনের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া চারজন হলেন ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার চতুল গ্রামের মো. মোস্তফার স্ত্রী শিউলী (৩৫), ফরিদপুরের ভাঙ্গার পীরের চর এলাকার সেকেন মাতুব্বরের ছেলে ওয়াসিম (২৩), ফরিদপুরের সালথার মো. জুয়েলের ছেলে মো. কাথান (৩২) এবং নগরকান্দা উপজেলার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলীর মেয়ে সাবিহা (১০)।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত রোববার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে সাবিহাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার বেলা তিনটার দিকে সে মারা যায়।
শিউলী গতকাল মঙ্গলবার বেলা পৌনে দুইটার দিকে ভর্তি হন। ওই দিন রাত সোয়া ১০টার দিকে তিনি মারা যান। ভাঙ্গার পীরের চর এলাকার ওয়াসিমকে মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই দিন দিবাগত রাত দুইটার দিকে তিনি মারা যান। এ ছাড়া ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া সালথার মো. কাথান (৩২) গত শনিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে হাসপাতালে ভর্তি হন। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মারা যান তিনি।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ৮ আগস্ট ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে মারা যান মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কবিরাজপুর গ্রামের শহীদুল্লা মিয়ার ছেলে মাহাবুব মিয়া (৩৫)। তিনি ৭ আগস্ট ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। একই হাসপাতালে ১১ সেপ্টেম্বর মারা যান ফরিদপুরের নগরকান্দার ওমানউল্লার ছেলে মোমরেজ (৬৬)।
ফরিদপুরের সিভিল সার্জন মো. ছিদ্দীকুর রহমান বলেন, ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে যে দুজন মারা গেছেন, তাঁদের নাম মৃত্যুর তালিকায় এত দিন অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি। এখন তাঁদের নামও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সিভিল সার্জন আরও বলেন, গত ২১ জুলাই থেকে আজ বুধবার সকাল আটটা পর্যন্ত ফরিদপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মোট ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ফরিদপুরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ২৮৪ জন। এ নিয়ে ফরিদপুরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৯ হাজার ২৭৩। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৮ হাজার ৪১৪ জন। চিকিৎসাধীন ৮২১ জন। এর মধ্যে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৪৫, ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে ৮৫ জন এবং ফরিদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালে ৬৬ জন।
রিদপুরের বাইরে বেশিসংখ্যক রোগী চিকিৎসাধীন আছেন বোয়ালমারী ও মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ওই দুটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৭৩ জন করে রোগী চিকিৎসাধীন।
ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচালক এনামুল হক জানান, ‘ফরিদপুরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে আমরা ভালো অবস্থানে নেই। যে স্যালাইন আছে, তাতে এক সপ্তাহ চলতে পারে। তবে ১২ হাজার স্যালাইনের চাহিদা দেওয়া আছে। স্যালাইন আনার জন্য ঢাকায় প্রতিনিধি পাঠানো হয়েছে। তিনি কী পরিমাণ স্যালাইন আনতে পারেন, তার ভিত্তিতে জানাতে পারব কত দিন কীভাবে চলতে পারব।’