২০৪৪ গাছ কাটার সিদ্ধান্ত বন বিভাগের, যশোর রোড উন্নয়ন কমিটির প্রতিবাদ

সড়কের দুপাশে সামাজিক বনায়নের গাছফাইল ছবি

টানা তাপপ্রবাহে যশোরসহ আশপাশের কয়েকটি জেলা পুড়ছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৪৪টি বড় গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সামাজিক বন বিভাগ। ইতিমধ্যে গাছ বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছে।

এর প্রতিবাদ জানিয়ে উষ্ণ আবহাওয়ার মধ্যে গাছ কাটার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্য বন বিভাগের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যশোর রোড উন্নয়ন ও শতবর্ষী গাছ রক্ষা কমিটি। তবে বন বিভাগ বলছে, এই সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসার আপাতত কোনো সুযোগ নেই।

গত ২৫ এপ্রিল সামাজিক বন বিভাগ যশোরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম স্বাক্ষরিত দরপত্র বিজ্ঞপ্তি অচেনা দুটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সামাজিক বনায়নের আবর্তকাল উত্তীর্ণ বাগান ও অন্যান্য উৎসের বনজ দ্রব্য বিক্রির লক্ষ্যে নির্ধারিত শর্তানুসারে দরপত্র আহ্বান করা যাচ্ছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যশোর সদর উপজেলার নরেন্দ্রপুর থেকে আন্দুলিয়া পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার সড়কের ২৪৩টি, চাঁচড়া-ভাতুড়িয়া-সাড়াপোল হয়ে তেঁতুলিয়া গ্রাম পর্যন্ত ৯ কিলোমিটারে ৯৭৯টি, কেশবপুর উপজেলার বড়েঙ্গা বাজার থেকে পাচারই বাজার পর্যন্ত ৪ কিলোমিটারে ৫০২টি ও বাঘারপাড়া উপজেলার ধোয়াখোলা বাজার থেকে তালবাড়িয়া পর্যন্ত ২ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশের ৩১০টি বর্ষীয়ান গাছ বিক্রি করা হবে।

এসব গাছের মধ্যে রেইনট্রি, বকাইন, মেহগনি, সেগুন, বাবলা, খৈয়েবাবলাসহ বিভিন্ন ধরনের গাছ রয়েছে। এসব গাছে অসংখ্য পাখির বাসা রয়েছে।

বন বিভাগের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে আজ বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়েছে যশোর রোড উন্নয়ন ও শতবর্ষী গাছ রক্ষা কমিটি। কমিটির আহ্বায়ক খন্দকার আজিজুল হক ও সদস্যসচিব জিল্লুর রহমান ওই বিবৃতিতে বলেন, তাঁরা গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ করছেন, বন বিভাগ সামাজিক বনায়নের দুই হাজারের বেশি বর্ষীয়ান গাছ বিক্রির দরপত্র আহ্বান করেছে। তাঁরা বন বিভাগের এই অপরিণামদর্শী উদ্যোগের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। অবিলম্বে দরপত্র আহ্বান বাতিল করার দাবি জানাচ্ছেন। একই সঙ্গে পরিবেশ ও গাছবিধ্বংসীদের বিরুদ্ধে সচেতন মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

গাছ কাটার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে সামাজিক বন বিভাগ যশোরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম বলেন, ‘আমার যা বলার তা লিখিতভাবে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বলে দিয়েছি। এর বাইরে আর কিছু বলার নেই।’ বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তির প্রতিবাদের বিষয়ে তিনি বলেন, দু–একটি সংগঠন তাদের কথা বলতেই পারে। গাছ কাটার তফসিল প্রকাশ করা হয়েছে। সেখান থেকে পিছিয়ে আসার আপাতত কোনো সুযোগ নেই।

যশোর সদর উপজেলার ভাতুড়িয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক নিতাই বিশ্বাস প্রতিদিন মোটরসাইকেল চালিয়ে চাঁচড়া–ভাতুড়িয়া সড়ক দিয়ে কর্মস্থলে যান। তিনি বলেন, সড়কের দুই পাশে মেহগনি, বাবলা, কড়ইসহ বিভিন্ন গাছের কী যে নয়নাভিরাম দৃশ্য। এসব গাছপালার কারণেই ওই এলাকার পরিবেশ তুলনামূলক শীতল থাকে। সড়কের দুই পাশের এই গাছ কাটা হলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে। কোনোভাবেই এসব গাছ কাটতে দেওয়া যাবে না।