স্বামীর পরকীয়া দেখে ফেলায় স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ, প্রতিবাদে মানববন্ধন

কুষ্টিয়ায় গৃহবধূ হত্যার প্রতিবাদ ও আসামীদের শাস্তির দাবিতে এলাকাবাসির মানববন্ধন। শুক্রবার দুপুরে খোকসার কলমিপাড়া গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় স্বামীর পরকীয়া দেখে ফেলায় জহুরা খাতুন (২৫) নামের এক গৃহবধূকে শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগ উঠেছে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি উপজেলার জয়ন্তী হাজরা ইউনিয়নের গোসাইডাঙ্গী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনার প্রতিবাদে ও হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে আজ শুক্রবার মানববন্ধন করেছেন এলাকার বাসিন্দারা। দুপুর ১২টার দিকে ইউনিয়নের জয়ন্তী গ্রামের কলমিপাড়া এলাকায় এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে অভিযোগ করা হয়, যৌতুক না পেয়ে ও ভাবির সঙ্গে স্বামীর পরকীয়া দেখে ফেলায় ৮ মার্চ সন্ধ্যায় গৃহবধূ জহুরাকে তাঁর স্বামী ইমরান বিশ্বাস, শ্বশুর আজগর বিশ্বাস, ভাশুর শহিদুল বিশ্বাস ও তাঁর স্ত্রী নাজমা খাতুন মিলে শ্বাস রোধ করে হত্যা করেছেন।

মানববন্ধনে এলাকার বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে জড়ো হন। তাঁরা স্লোগান দিয়ে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান। এ ঘটনায় ৯ মার্চ নিহত জহুরার ভাই মনিরুজ্জামান বাদী হয়ে চারজনকে আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। পুলিশ ইতিমধ্যে শ্বশুর আজগর বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করেছে। অন্য আসামিরা পলাতক।

খোকসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আশিকুর রহমান বলেন, গৃহবধূ জহুরাকে শ্বাসরোধে হত্যার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। থানায় মামলার পর শ্বশুরকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিন বছর আগে পারিবারিকভাবে গোসাইডাঙ্গী গ্রামের ইমরান বিশ্বাসের সঙ্গে কলমিপাড়া এলাকার জহুরা খাতুনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন মোটা অঙ্কের যৌতুক দাবি করে আসছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। একপর্যায়ে ১৫ লাখ টাকা দিয়ে ইমরানকে কসমেটিকসের একটি দোকান করে দেন জহুরার বাবার বাড়ির লোকজন। এর মধ্যে ভাবির সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন ইমরান। সেটি দেখে ফেলায় ৮ মার্চ সন্ধ্যায় জহুরাকে হত্যা করা হয় বলে তাঁর স্বজনেরা অভিযোগ করেছেন।

মামলার বাদী মনিরুজ্জামান বলেন, বিয়ের পর থেকেই তাঁর ভগ্নিপতি ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন যৌতুক দাবি করে আসছিলেন। যৌতুক না পেয়ে জহুরাকে নির্যাতন করেন তাঁরা। একপর্যায়ে একটি কসমেটিকসের দোকান করে দেওয়া হয়। তবু নির্যাতন বন্ধ হয়নি। এরই মধ্যে বড় ভাইয়ের স্ত্রীর সঙ্গে ইমরানের পরকীয়া ধরা পড়ে। পরকীয়া দেখে ফেলায় তাঁর বোনকে তাঁরা হত্যা করেছেন। থানায় মামলা করা হয়েছে। আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান তিনি।

অভিযুক্ত ব্যক্তিরা সবাই এলাকা থেকে গা ঢাকা দিয়েছেন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে তাঁদের মুঠোফোনে কল করা হলেও তাঁদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

জয়ন্তী হাজরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুস শকীব খান বলেন, মেয়েটিকে শ্বাস রোধ করে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন হত্যা করেছেন বলে তিনি জেনেছেন। এ ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে জন্য দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।