বিএনপির আমলের স্তম্ভ ভেঙে করা হলো নতুন স্মৃতিস্তম্ভ

অভিযোগ রয়েছে, আগের স্তম্ভটি নিজের ইকোনো বলপেনের প্রচারণার জন্য নির্মাণ করেছিলেন তৎকালীন সংসদ সদস্য সালিমুল হক।

মাগুরা শহরের ভায়নার মোড়ে নবনির্মিত ‘বিজয় স্মৃতিস্তম্ভ’। গতকাল সন্ধ্যায়
ছবি: প্রথম আলো

মাগুরা শহরের গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি রাস্তার মিলনস্থল ভায়না মোড়ে নতুন ‘বিজয় স্মৃতিস্তম্ভের’ উদ্বোধন করা হয়েছে। এর আগে একই জায়গায় ‘স্বাধীনতা বিজয়স্তম্ভ’ নামে একটি স্তম্ভ ছিল। বিএনপির আমলে নির্মিত কলম আকৃতির ওই স্তম্ভ স্বাধীনতার তাৎপর্য বহন করে না বলে সেটি ভেঙে ফেলে নতুন স্মৃতিস্তম্ভ তৈরির সিদ্ধান্ত নেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা ও প্রশাসন। নতুন স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাণকাজ শেষ হলে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় উদ্বোধন করেন মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর।

জেলা পরিষদের অর্থায়নে নবনির্মিত বিজয় স্মৃতিস্তম্ভে একসঙ্গে ভিন্ন উচ্চতার সাতটি স্তম্ভ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, এ নকশায় সাতটি স্তম্ভের মাধ্যমে সাত বীরশ্রেষ্ঠ, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ এবং ৭ ডিসেম্বর মাগুরামুক্ত দিবসের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে।

স্থপতি শরিফউদ্দিন আহমেদ এ নকশার রূপকার। প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে এটি নির্মিত। সাতটি স্তম্ভের সবচেয়ে ছোটটার উচ্চতা ১৭ ফুট। আর সবচেয়ে উঁচু স্তম্ভের উচ্চতা ৪৩ ফুট।

জেলা পরিষদ থেকে পাওয়া নথিতে দেখা গেছে, এর আগে একই জায়গায় ‘স্বাধীনতা বিজয়স্তম্ভ’ নামে কলম আকৃতির স্তম্ভ ছিল, সেটিও তৎকালীন জেলা পরিষদের অর্থায়নে নির্মিত হয়েছিল। এতে শহীদদের নাম লেখা ছিল।

স্থপতি রাফিউল আলম এর নকশাকার ছিলেন। এটির পরিকল্পনায় ছিলেন মাগুরা-২ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক। ২০০৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর এর উদ্বোধন করেন তিনি। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছর সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির এই ব্যবসায়ী নেতা এখন কারাগারে।

জেলা পরিষদ সূত্র ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুরু থেকেই এটিকে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় বলে দাবি করে আসছিলেন স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগের নেতারা। তাঁদের অভিযোগ ছিল, এটি মূলত কাজী সালিমুল হকের মালিকানাধীন ‘ইকোনো’ ব্র্যান্ডের বলপেনকে তুলে ধরছে।

২০১৮ সালের ২৮ মার্চ স্মৃতিস্তম্ভটি সরেজমিন পরিদর্শন করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি উপকমিটি। পাঁচ সদস্যের ওই কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য। উপকমিটি পর্যবেক্ষণে বলে, স্মৃতিস্তম্ভটি নিজের ইকোনো বলপেনের প্রচারণার জন্য এটি নির্মাণ করেছিলেন তৎকালীন সংসদ সদস্য সালিমুল হক।

এমন পরিস্থিতিতে ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বরে ভায়না মোড়ের স্মৃতিস্তম্ভ ইস্যুতে সর্বদলীয় একটি সভা করেন সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর এবং জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ কুমার কুণ্ডু। সেখানেই নতুন নকশায় স্মৃতিস্তম্ভ তৈরির সিদ্ধান্ত হয়।

এ ব্যাপারে মাগুরা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন মুঠোফোনে বলেন, ‘এটা যদি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশে করা হয়, তবে সেটির নিন্দা জানাই আমরা।’