গুপ্তধনের লোভে ভাগনেকে হত্যার অভিযোগ, তরুণী গ্রেপ্তার

গ্রেপ্তার
প্রতীকী ছবি

গুপ্তধনের লোভে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের মধ্যম সুরাজপুর গ্রামে মাতামুহুরি নদীতে তিন মাস বয়সী ছেলে মোহাম্মদ আনাছকে ফেলে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে তাঁর খালা আঁখি রহমানের (১৮) বিরুদ্ধে।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে এমন অভিযোগে চকরিয়া থানায় আঁখি রহমানকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন নিহত শিশু আনাছের বাবা হোসাইন আলী। সেই মামলায় আঁখিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল ৮টার দিকে মাঝের ফাঁড়ি সেতুসংলগ্ন মাতামুহুরি নদী থেকে আনাছের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

চকরিয়া থানা-পুলিশ জানায়, গত মঙ্গলবার রাতে হোসাইন আলীর ঘরের দুটি কক্ষের মধ্যে একটি কক্ষে শিশু আনাছ, তাঁর মা সাকিলা বেগম, ফুফু খাদিজা বেগম ও খালা আঁখি রহমান এবং অন্য কক্ষে হোসাইন আলী একা ঘুমান। গতকাল ভোর পাঁচটার দিকে মায়ের বুক থেকে শিশু আনাছকে কোলে তুলে নিয়ে প্রায় ২০০ মিটার দূরে মাতামুহুরি নদীতে ফেলে দিয়ে তাকে হত্যা করেন আঁখি। পরে ঘরে ফিরে ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। সকাল ছয়টার দিকে শিশুর মা সাকিলার ঘুম ভাঙলে তাঁর বুকে ছেলেকে দেখতে না পেয়ে কান্না শুরু করেন।

নিহত শিশুর বাবা হোসাইন আলী বলেন, ফজরের নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বাড়ি ফেরার পথে কয়েকজন মুসল্লি মাঝের ফাঁড়ি সেতুর নিচে আনাছের লাশ ভাসতে দেখেন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে সকাল ৮টার দিকে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় আনাছের লাশ উদ্ধার করে। পরে লাশের ময়নাতদন্ত শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।

চকরিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) তফিকুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা ধরে নিই, এটি হত্যাকাণ্ড। এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটনে নিহত শিশুর  মা, বাবা, খালা ও ফুফুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে শিশুটির খালা হত্যার কথা স্বীকার করেন। এ ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে।’

অভিযুক্ত আঁখি রহমানের বরাত দিয়ে পুলিশের একটি সূত্র জানায়, আঁখি ঝাড়ফুঁক করেন। তাঁর জিন তাঁকে স্বপ্নে দেখায় যে একজন পছন্দের শিশুর জান কবচ করতে পারলে গুপ্তধন পাওয়া যাবে। এই উদ্দেশ্যে তিনি ৫ নভেম্বর তাঁর বোনের বাড়িতে বেড়াতে যান। সুযোগ বুঝে হত্যার জন্য মঙ্গলবার রাত ভাগনেকে বেছে নেন। আঁখি নানা গল্প-গুজব করে কৌশলে সবাইকে নিয়ে ওই রাতে দেরি করে ভাত খান, যাতে ভোর রাতে সবাই গভীর ঘুমে থাকেন। পরে ভোরের দিকে ভাগনেকে নদীতে ফেলে হত্যা করেন আঁখি।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আঁখি রহমান কবিরাজি করেন। মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে ঘরের একটি কক্ষে আসন পেতে মন্ত্রতন্ত্র পড়া শুরু করলে আঁখিকে বাধা দেন শিশু আনাছের মা সাকিলা। এত অল্প বয়সে এসবে না জড়ানোর জন্য বারণ করেন আনাছের মা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আঁখি শিশু আনাছকে নদীতে ফেলে হত্যা করেন।

আজ দুপুরে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, আঁখি রহমানকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।