ভর্তি পরীক্ষার পাঁচ মাস পর ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত, তা–ও অনলাইনে

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
ফাইল ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের (৫২তম ব্যাচ) স্নাতক সম্মান প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের হলের আসন নিশ্চিত করে শুরু হবে ক্লাস। এই অজুহাতে পাঁচ মাস দেরি করা হলেও নিশ্চিত করা হয়নি আসন। এর মধ্যে ৩০ নভেম্বর থেকে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে সশরীর নয়, অনলাইনে। এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।

আজ মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সভায় প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরুর তারিখ নির্ধারণ করা হয়। প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার ও কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সদস্যসচিব সৈয়দ মোহাম্মদ আলী রেজা।

চলতি বছরের ১৮ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়, চলে ২২ জুন পর্যন্ত। সে হিসাবে ভর্তি পরীক্ষার পাঁচ মাস পর প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতে যাচ্ছে। দেরিতে ক্লাস শুরুর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে বলা হয়েছিল, গণরুম দূর করে নবনির্মিত হলগুলো চালু করে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর আসন নিশ্চিত করে ক্লাস শুরু করা হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অনলাইনেই ক্লাস শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার সৈয়দ মোহাম্মদ আলী রেজা বলেন, শিক্ষার্থীদের নতুন হলগুলোতে আসন নিশ্চিত করে ক্লাস শুরু করার পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু হলগুলোতে যে প্রক্রিয়ায় জনবল নিয়োগের কথা ছিল, সেটা সম্ভব হয়নি। এদিকে ক্লাস শুরু না হলে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়বে। সবদিক বিবেচনা করে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শুধু চলতি শিক্ষাবর্ষে নয়, প্রতিবছরেই বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষাবর্ষে ক্লাস শুরু হয় অপেক্ষাকৃত দেরিতে। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে নবীন শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হওয়ার অন্তত তিন থেকে পাঁচ মাস পর ক্লাস শুরু করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রতিবারই হলে আসন বরাদ্দের অজুহাত দেওয়া হয়, কিন্তু কোনো বছরেই শুরুতে শিক্ষার্থীদের আসন দিতে পারেনি তারা। এবারও ব্যতিক্রম ঘটেনি।

আসন দেওয়ার নাম করে ভর্তি পরীক্ষার পাঁচ মাস পর অনলাইনে ক্লাস শুরুর ঘোষণা দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের (একাংশ) আহ্বায়ক আলিফ মাহমুদ বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গাফিলতিতে প্রতিবছর শিক্ষার্থীরা ভর্তির শুরুতে সেশনজটে পড়েন। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে একই শিক্ষাবর্ষে ক্লাস শুরুর অনেক পর এখানে ক্লাস শুরু হয়। প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে আসন নিশ্চিত করে শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অনলাইনেই যদি ক্লাস শুরু হবে, তাহলে আগে থেকে শুরু করা যেত। কিন্তু এই প্রশাসনের গাফিলতি এবং সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে ভোগান্তিতে পড়েন শিক্ষার্থীরা। হলের নিয়োগ বাণিজ্যের রমরমা ব্যবসাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে নবীন শিক্ষার্থীদের আজ এই দুর্দশা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলী বলেন, ‘পাঁচ মাস আগে ভর্তি পরীক্ষা শেষ হয়েছে, কিন্তু আজও প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু করতে পারল না বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন। এটাকে আমি সদিচ্ছার অভাব বলেই মনে করি। আর অনলাইনেই যদি ক্লাস শুরু করবে, তাহলে তো অনেক আগেই শুরু করা যেত। করোনা শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও অনলাইনে প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু করার পাঁয়তারা বন্ধ হচ্ছে না কেন, সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার।’

এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. নূরুল আলম ও সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজের কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা মিটিংয়ে আছেন বলে জানান তাঁদের ব্যক্তিগত সহকারীরা। পরে উপাচার্য মো. নূরুল আলমের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।