সকালের শুরু কিছুটা কড়া রোদে। ঘড়িতে ৯টা বাজতেই চট্টগ্রাম নগরের ফয়’স লেক অ্যামিউসমেন্ট পার্কের সামনে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের ভিড়। নিবন্ধন বুথে নিবন্ধনের তথ্য যাচাই শেষে ব্যান্ড হাতে পার্কে প্রবেশের অপেক্ষা। ভেতরে ঢুকেই কেউ মেতে উঠেছেন বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা ও সেলফি তোলায়, আবার কেউ ব্যস্ত হয়ে পড়েন রাইডে চড়ায়। প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি–প্রথম আলো কৃতী শিক্ষার্থী উৎসবের চিত্র ছিল এমন।
‘স্বপ্ন থেকে সাফল্যের পথে, একসাথে’ স্লোগান নিয়ে প্রথমবারের মতো আজ সোমবার অনুষ্ঠিত হলো উচ্চমাধ্যমিক ও সমমান পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ‘প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি–প্রথম আলো কৃতী শিক্ষার্থী উৎসব–২০২৫’। প্রথম আলোর আয়োজনে ও প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজনের সহযোগী ছিল কনকর্ড গ্রুপ। অনুষ্ঠানে নিবন্ধন করেছেন ছয় হাজার শিক্ষার্থী।
পার্কে ঢুকেই শিক্ষার্থীরা হয়ে যান অনেকটা বাঁধনহারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কোচিং ও পড়াশোনার চাপ থেকে খানিক বিরতি পেয়ে মেতে ওঠেন আড্ডা, ঘোরাঘুরি ও সেলফি তোলার আনন্দে। মূল অনুষ্ঠান শুরুর আগেই পার্ক শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুখর হয়ে যায়। তাঁদের কেউ কেউ আবার প্রথমবারের মতো ফয়’স লেকে এসেছেন। তাঁদের আনন্দ ছিল দ্বিগুণ।
পার্কের প্রবেশমুখে একটি সবুজ বোর্ড। তার সামনে বিশাল জটলা। কাছে যেতে জানা গেল, সেখানে নিজেদের তিনটি করে লক্ষ্য রঙিন কাগজে লিখে টানিয়ে দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। তাসলিম উদ্দিন নিজের প্রথম লক্ষ্য হিসেবে লিখেছেন, নিজেকে ভিন্নভাবে তৈরি করা। তাসনিয়া তালুকদার লিখেছেন, একজন ভালো চিকিৎসক হতে চান তিনি। ফাতেমাতুজ জাহান চান একজন পরিপূর্ণ মানুষ হতে।
আরেকটু এগিয়ে গেলেই প্রথম আলো এক্সপেরিয়েন্স সেন্টার। এখানে বিভিন্ন ধরনের অংশগ্রহণমূলক খেলাধুলা, ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটিসহ বিভিন্ন গেমের আয়োজন করা হয়েছে। পাশের সেলফি বুথ ও ৩৬০ ডিগ্রি ফটো বুথে সারা দিনই ছিল শিক্ষার্থীদের ভিড়। এর পাশে নিজেদের স্টলে ডার্ট গেমের আয়োজন করেছে প্রথম আলো বন্ধুসভা।
জীবন কখনো ব্যর্থ হয় না
দুপুর সাড়ে ১২টায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। শুরুতেই মঞ্চে আসেন প্রথম আলোর ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ও যুব উন্নয়ন কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক মুনির হাসান। উপস্থাপনায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নানা ধরনের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন তিনি।
মঞ্চে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরী। এরপর আসেন এভারেস্টজয়ী বাবর আলী ও কনকর্ড গ্রুপের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা (সিএমও) অনুপ কুমার সরকার। বাবর আলী চিকিৎসা পেশার পাশাপাশি নিজের স্বপ্নের পেছনে ছুটে চলার গল্প শোনান। মা–বাবার অবদান ও সামনের জীবনের জন্য পরামর্শ দেন অনুপ কুমার সরকার।
প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন সুযোগ–সুবিধা তুলে ধরে শিক্ষার্থীদের সামনে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক আনোয়ারুল কবির, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক যাহেদুর রহমান ও বিবিএ বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ জুলফিকার আলী। তাঁরা বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য দেন। অভিভাবকদের আমন্ত্রণ জানান বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখার।
বক্তব্য শুনতে শুনতে শিক্ষার্থীরা কিছুটা ঝিমিয়ে পড়ার আগেই মঞ্চে জাদুশিল্প প্রদর্শন করে চট্টগ্রাম বন্ধুসভার অর্থ সম্পাদক ফয়সাল হাওলাদার। জাদুর পর মঞ্চে বন্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইটির পরিচালক বি এম মইনুল হোসেন ও প্রথম আলোর হেড অব ডিজিটাল বিজনেস জাবেদ সুলতান পিয়াস। তাঁরা ডিজিটাল মাধ্যমে শিষ্টাচার ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নিয়ে বক্তব্য দেন।
শেষে বক্তব্য দেন প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক। তিনি বলেন, ‘বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেছেন, জীবন হলো সাইকেল চালানোর মতো। আপনার ভারসাম্য বজায় রাখতে আপনাকে অবশ্যই চলতে হবে। জীবন কখনো ব্যর্থ হয় না। জীবন হলো শিল্প, গান, নাটক আর মানুষ।’
অনুষ্ঠানের শেষে মঞ্চে আসেন উপস্থাপক ও অভিনেত্রী মৌসুমী মৌ। মঞ্চে ডেকে নেন ১২০টি দেশের জাতীয় সংগীত গেয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা প্রিয়াংশু রায় চৌধুরীকে। মঞ্চে এসে কয়েকটি দেশের জাতীয় সংগীত গেয়ে শোনান তিনি। এরপর গানের তালে তালে মঞ্চে আসেন অভিনেতা তৌসিফ মাহবুব, অভিনেত্রী সাবিলা নূর ও মেহজাবীন চৌধুরী। নাচে–গানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন তাঁরা। সবশেষে গানে গানে মঞ্চ মাতায় ব্যান্ড দল তীরন্দাজ ও শিরোনামহীন।