পলাশে নির্মাণাধীন ভবনে নিয়ে সাংবাদিককে পেটানোর অভিযোগ কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে

নির্যাতনের শিকার ফারদিন হাসানকে পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে
ছবি: সংগৃহীত

নরসিংদীর পলাশে এক সাংবাদিককে সড়ক থেকে ধরে একটি নির্মাণাধীন ভবনের ভেতরে নিয়ে গিয়ে পিটিয়েছেন জাহিদ হাসান নামের এক কাউন্সিলর। সোমবার বেলা একটার দিকে উপজেলা পরিষদের নির্মাণাধীন একটি ভবনের ভেতরে এ ঘটনা ঘটে।

অভিযুক্ত জাহিদ হাসান একই এলাকার মৃত শামছুল হকের ছেলে। তিনি ঘোড়াশাল পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর।

নির্যাতনের শিকার সাংবাদিকের নাম ফারদিন হাসান (২০)। তিনি আলোকিত প্রতিদিন নামের একটি দৈনিক পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি ও উপজেলা প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী সদস্য।

ফারদিন হাসান উপজেলার ঘোড়াশাল পৌরসভার দড়িহাওলাপাড়া এলাকার প্রবাসী নূর মোহাম্মদের ছেলে এবং স্থানীয় একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্সিলর জাহিদ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডেকে আনার পর সে আমার সঙ্গে বেয়াদবি করেছিল। সে একজন সাংবাদিক, তার এই পরিচয় আমার জানা নেই। এলাকার ছেলে বেয়াদবি করায় তাকে শাসন করা হয়েছে। এখানে অন্য কোনো বিষয় নেই।’

পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ইলিয়াছ প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় ওই সাংবাদিকের মা আফিয়া বেগম বাদী হয়ে কাউন্সিলর জাহিদ হাসানসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৩-৪ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফারদিন হাসানের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, সোমবার বেলা একটার দিকে উপজেলার পরিষদের পুকুরপাড়-সংলগ্ন সড়কে দাঁড়িয়ে এলাকার পরিচিত এক স্কুলছাত্রীর সঙ্গে কথা বলছিলেন ফারদিন। এ সময় পাশের একটি নির্মাণাধীন ভবন থেকে কাউন্সিলর জাহিদ হাসান তাঁকে দেখতে পেয়ে ডেকে নেওয়ার জন্য দুজন লোক পাঠান। এ সময় তিনি ‘কথা শেষ করে আসতেছি’ বললে তাঁরা দুজন গিয়ে কাউন্সিলরকে এ কথা জানান।

এতে কাউন্সিলর ক্ষিপ্ত হয়ে ফারদিনকে জোর করে তুলে নিতে অন্য দুই ব্যক্তিকে পাঠান। তাঁরা তাঁকে টেনে ওই নির্মাণাধীন ভবনে নিয়ে যান।

সেখানে কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই কাউন্সিলর ফরদিনকে চড়থাপ্পড় ও কিলঘুষি মারতে থাকেন। কেন তাঁকে মারা হচ্ছে, সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে তা জানতে চাইলে কাউন্সিলর বলেন, ‘তুই বেয়াদব, তোকে আমি ডেকেছি, তবু তুই আসলি না’, এ কথা বলেই নির্মাণকাজে ব্যবহৃত বেলচা দিয়ে তাঁকে উপর্যুপরি পিটিয়ে আহত করা হয়।

একপর্যায়ে তাঁকে ২০ বার কানে ধরে ওঠবস করানো ও পায়ে ধরে মাফ চাওয়ানো হয়। পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হলে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিকের মুঠোফোনে কল দিয়ে ঘটনা জানান তিনি। এরপর তাঁরা ফারদিনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করেন।

পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, পিঠে আঘাতের জখম নিয়ে ফারদিন হাসান নামের এক তরুণকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাঁকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

ফারদিন হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট করতে কী কী লাগে, তা আমার কাছে জানতে চেয়েছিল স্থানীয় এক স্কুলছাত্রী। তাকে তথ্য জানানোর সময় কাউন্সিলর আমাকে ডেকে পাঠান। আমি শুধু বলেছিলাম, কথা শেষ করেই আসছি। বিষয়টি তিনি বেয়াদবি হিসেবে নিয়ে আমাকে এভাবে পেটালেন। সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর আরও রেগে অকথ্য ভাষায় কথা গালিগালাজ করছিলেন। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’