একরের পর একর জমিজুড়ে আবাদ করা হয়েছে ভুট্টা, গম, বাদাম, আলু, মরিচ, মিষ্টি আলু, মিষ্টিকুমড়া, মরিচসহ বিভিন্ন শাকসবজি। ফসলের এসব খেতে কাজ করছেন কৃষক ও কয়েক শ শ্রমিক। কেউ সেচযন্ত্রে (শ্যালো মেশিন) খেতে পানি দিচ্ছেন। কেউ খেতে নিড়ানি দিচ্ছেন। আবার কেউ আগাছা তুলছেন।
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা নদীর বিস্তৃত চরে এখন আবাদ হচ্ছে রবি ফসল। অথচ কয়েক বছর আগেও অবস্থা এ রকম ছিল না। মাঠের পর মাঠ পরে থাকত ধু ধু বালুচর। এসব জমিতে এখন নানা রকমের শাকসবজি ফলিয়ে আয় করছেন স্থানীয় কৃষকেরা। গত কয়েক বছরের চেয়ে এবার দুই উপজেলায় সর্বাধিক রবিশস্যের আবাদ হয়েছে। কারণ, গত বছরের বন্যার পর এবার চরে পলি পড়েছে বেশি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রমতে, ‘তিস্তা ও ধরলা নদী বাংলাদেশ-ভারতের আন্তসীমান্ত নদী। এ নদী দুটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলা হয়ে প্রবাহিত। গতিপথ পরিবর্তন করে উপজেলা দহগ্রাম ইউনিয়নের বৃহত্তর অংশ জুড়ে বয়ে চলেছে তিস্তা। আবার ভারত হয়ে চলে গেছে পাশের হাতীবান্ধায়। অপরদিকে ভারতের চ্যাংড়াবান্দা হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে ধরলা নদী। পাটগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আবারও ভারতে ঢুকেছে।
প্রতিবছর বর্ষায় ভারত ওপার থেকে পানি ছেড়ে দেয়। এতে দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। গত বছরের ৪ অক্টোবর ছেড়ে দেওয়া তিস্তা নদীর পানিতে দহগ্রামে প্রবল বন্যা দেখা দেয়। প্রতিবছর দহগ্রামের জমি ভেঙে বিলীন হয় তিস্তায়। জেগে ওঠে মাইলের পর মাইল বালুচর। এসব বালুচরে এবারের বন্যায় ঘোলা (মাটি) মিশ্রিত পানি আসায় চরে অধিক পলি পড়েছে। ফলে জমি ও বালুচরের দাবিদার স্থানীয় গ্রামবাসীরা এ বছর অনেক বেশি চাষাবাদ করছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্র জানায়, হাতীবান্ধা উপজেলায় ২৩ হাজার ৫২৭ হেক্টর আবাদযোগ্য জমি আছে। শুধু তিস্তার চরে ভুট্টার চাষ হয়েছে ১ হাজার ৮৯৭ হেক্টর জমিতে। এ ছাড়া গম ১৫ হেক্টর, আলু ১৫ হেক্টর, মরিচ ১০ হেক্টর, চিনাবাদাম ৭৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হচ্ছে। আর পাটগ্রাম উপজেলায় ২১ হাজার ২৬০ হেক্টর চাষযোগ্য আবাদি জমি রয়েছে। এবার উপজেলার দহগ্রাম তিস্তার চর ও জগতবেড় এবং জোংড়া ইউনিয়নের ধরলা নদীর চরাঞ্চলে ভুট্টা আবাদ হচ্ছে ৬৫ হেক্টর জমিতে। একই সঙ্গে গম ২৫ হেক্টর, আলু ১৫ হেক্টর, মিষ্টিকুমড়া ৮ হেক্টর জমিতে চাষ করা হচ্ছে।
দহগ্রামের চরের মহিমপাড়া গ্রামের কৃষক মজিবর রহমান (৫৫) বলেন, তিস্তা নদী যখন ভাঙে, তখন ধু ধু বালু পড়ে ছিল। এতে এবারের শেষ বন্যায় ঘোলা পানিতে মাটি আসায় বালুতে পলিমাটি পড়ে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই এই বালুচরের হাজার হাজার বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ করা হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে। এতে তাঁরা খুব খুশি। বন্যার ক্ষতি এবার পুষিয়ে যাবে।
কৃষক মইনুল ইসলাম (৬০) বলেন, তিস্তা নদী দীর্ঘদিন ধরে ভাঙছে। এবার পলি বেশি পড়েছে। সবাই বিভিন্ন ফসল আবাদ করেছে, খেতও ভালো হয়েছে।
পাটগ্রামের কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবদুল গাফ্ফার ও হাতীবান্ধা কৃষি কর্মকর্তা মো. সুমন মিয়া বলেন, বর্ষার শেষ মৌসুমের বন্যায় নদীর চরগুলোতে বেশি পলিমাটি পড়েছে। এতে স্থানীয় কৃষকেরা সবাই চাষাবাদ করছেন। ফসলও বেশ ভালো হয়েছে। ফলনও ভালো হবে। তাঁরা অনুমান করছেন, এসব চরে উৎপাদিত ফসলের মূল্য সাড়ে ছয় কোটি টাকা হবে। উপজেলা কৃষি কার্যালয় থেকে চরাঞ্চলে চাষাবাদে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।