মরা বাবলাগাছে ভোগান্তি

গাছগুলো বিক্রির জন্য বন বিভাগের কাছে একাধিকবার জানানো হয়েছে, কিন্তু সেগুলো বিক্রি করা হয়নি। 

গাছগুলো বিক্রির জন্য বন বিভাগের কাছে একাধিকবার জানানো হয়েছে, কিন্তু বিক্রি করা হয়নি। গাছগুলো শুকিয়ে নষ্ট হচ্ছে। সম্প্রতি তোলা
ছবি: প্রথম আলো

মাঠের মধ্যে কাঁচা রাস্তার পাশে সারি সারি গাছ, যার বেশির ভাগ মরা। এসব গাছের অধিকাংশ গোড়ার দিকে কাটা। কোথাও কোথাও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে সরু করে ফেলা হয়েছে। খইয়া বাবলা জাতের এই গাছ ভেঙে মাঝেমধ্যে সড়কের ওপর পড়ে। তখন ওই রাস্তা দিয়ে চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

এ অবস্থা ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার কুশনা ইউনিয়নের। সেখানে কুশনা ও  বহরমপুর গ্রামের সড়কে ৭ কিলোমিটারে লাগানো ছিল ১২ হাজার গাছ। এখন মাত্র চার হাজার গাছ আছে। বাকি গাছগুলো চুরি হয়ে গেছে।

স্থানীয় কয়েকজন বলেন, গাছগুলো বিক্রির জন্য বন বিভাগের কাছে একাধিকবার জানানো হয়েছে, কিন্তু বিক্রি করা হয়নি। গাছগুলো শুকিয়ে নষ্ট হচ্ছে। কিছু লোক গাছগুলো মেরে ফেলতে গোড়ার অংশ কেটে দিচ্ছে। পরে সেগুলো মারা যাওয়ার পর চুরি করে নেওয়া হচ্ছে।

কুশনা গ্রামের নাড়িখালী মাঠের মাঝ থেকে কুশনা বোর্ড অফিস পর্যন্ত, বহরমপুর গ্রামের মাঠে এবং গ্রামের সাইফুল ইসলামের বাড়ি থেকে কারি সাহেবের বাড়ি পর্যন্ত মোট ৭ কিলোমিটার দূরত্ব। রাস্তার ধারে ওই গাছ রয়েছে। যার মধ্যে বেশির ভাগ মারা গেছে।

গ্রামের বাসিন্দা জয়নাল আবেদিন বলেন, ২০০২ সালে উপকারভোগীদের আর-বি-কে বনায়ন সমিতি ও কোটচাঁদপুর বন বিভাগ যৌথভাবে গাছগুলো লাগিয়েছিল। সে সময় ৭ কিলোমিটার রাস্তায় ১২ হাজার গাছের চারা রোপণ করা হয়। যার মধ্যে ছয় হাজার ছিল খইয়া বাবলাগাছের চারা। বাকিগুলো অন্যান্য গাছের চারা। গাছগুলো বড় হওয়ার পর চুরি শুরু হয়।

জয়নাল আবেদিন আরও বলেন, খইয়া বাবলাগাছগুলো বড় হলে গাছের ডালে ও পাতার নিচে অসংখ্য কাঁটা তৈরি হয়। এই কাঁটা পায়ে ফুটলে আর বের হতে চায় না। এ কারণে গাছগুলোর প্রতি এলাকার মানুষের ভালোবাসা নেই। উল্টো গাছগুলো যাতে মারা যায়, সে জন্য গাছের গোড়া কেটে রাখছে কেউ কেউ।

ওই রাস্তার পাশে চাষের জমি আছে মনিরুল ইসলামের। তিনি বলেন, এ গাছ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাবলাগাছের কাঁটার কারণে তাঁরা জমি চাষ করতে পারেন না। তাঁদের এলাকার অনেকের পায়ে এই কাঁটা ফুটেছে। একবার ফুটলে তার কষ্ট সহ্য করা খুবই কষ্টকর। কৃষকেরা মরা গাছগুলোর কারণে বছরের পর বছর কষ্ট করে চলেছেন। অনেকে ঠিকমতো জমি চাষ করতে পারছেন না। তা ছাড়া মরা গাছের ডাল ও কাঁটা মাটির রাস্তার ওপর পড়ছে।

এ বিষয়ে আর-বি-কে বনায়ন সমিতির সভাপতি আলতাফ হোসেন মোল্লা বলেন, সমিতির সদস্য সংখ্যা ৮০। জনপ্রতি তিন হাজার টাকা খরচ করে তাঁরা এই গাছ লাগান। এখন পর্যন্ত এক টাকাও পাননি সদস্যরা। অথচ ১২ হাজার গাছের মধ্যে ৮ হাজারের কোনো হদিস নেই। আম্পান ঝড়ে কিছু গাছের ডাল ভেঙে পড়েছিল, সেগুলো বিক্রি করে ৩৫ হাজার টাকা তাঁরা ব্যাংকে রেখেছেন। তিনি বলেন, এখন যে গাছ আছে, সেগুলো বিষাক্ত খইয়া বাবলাগাছ। এ গাছগুলো এলাকার লোকজন মেরে ফেলছেন, কিন্তু তাঁরা প্রতিবাদ করতে পারছেন না। কারণ, গাছগুলো খুবই ক্ষতিকর। 

আলতাফ হোসেন মোল্লা আরও বলেন, সমিতির পক্ষ থেকে গাছ লাগানোর সময় বলা হয়েছিল, ১৫ বছর পর গাছ বিক্রি করা হবে, যার একটি অংশ সদস্যরা পাবেন। কিন্তু ২০ বছর বয়স হলেও বিক্রির কোনো ব্যবস্থা নেই। তাঁরা ক্ষতিকর ও মরা গাছগুলো বিক্রির জন্য অনেক আবেদন করেছেন, কিন্তু কোনো ফল হয়নি।

এ বিষয়ে কোটচাঁদপুর উপজেলা বন কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি এ উপজেলায় নতুন এসেছেন। বিষয়টি তাঁর বিস্তারিত জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান। খইয়া বাবলাগাছে কাঁটা বেশি হয়। এই কাঁটা মানুষের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এ কারণে এখন এই গাছ আর লাগানো হয় না।