পায়রাবন্দে আলোচনা সভা
রোকেয়ার জন্মবার্ষিকী শুধু স্মরণের অনুষ্ঠান নয়, সমতার পথে এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার
রংপুরের পায়রাবন্দে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, রোকেয়ার জন্মবার্ষিকী পালন শুধু স্মরণের অনুষ্ঠান নয়। এটি নারীর আত্মমর্যাদা, অধিকার সমতা ও মানবমুক্তির পথে নতুন করে এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার।
রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রোকেয়ার জন্মস্থান রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দে গত শনিবার শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। দিনব্যাপী কর্মসূচির সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম।
নারী জাগরণের পথিকৃত রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের স্মৃতিবিজরিত অনুষ্ঠানকে ঘিরে ছিল উৎসব মুখর পরিবেশ। রোকেয়ার মানবমুক্তির চিন্তা, নারীমুক্তির শিক্ষা, অধিকার ও স্বপ্নের স্বাধীনতা আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক, সেই বার্তা সমাজে ছড়িয়ে দিতে আয়োজনের গুরুত্ব অনেক বলে মন্তব্য করেন বক্তারা।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের রংপুর জেলা কমিটির সভাপতি মাহবুবা আরা লীনা। এ ছাড়া বক্তব্য দেন মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম ও মাসুদা রেহানা বেগম, প্রকাশনা সম্পাদক সারাবান তহুরা, শিক্ষাবিদ নাসিমা আক্তার, রংপুরের রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী খাদিমুল সরদার এবং রংপুরের রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী নাসরিন আক্তার তুলি।
ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘গত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যখন সরকার পরিবর্তন হলো; তখন রোকেয়ার ওপর আঘাত এল। শিক্ষাবিদ বলে পরিচয় দিলে শিক্ষাবিদ হয়ে যায় না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষক রোকেয়া সম্পর্কে অগ্রহণযোগ্য মন্তব্য করেছেন। আমার কাছে অবাক লাগে, সরকারের নীতির বিরুদ্ধে একজন শিক্ষক দাঁড়াচ্ছে, সরকার কিছু বলছে না। সরকার নিশ্চুপ। পরশু দিন গান শুনতেছিলাম, “হে মাধবী, ভীরু মাধবী, দ্বিধা কেন?” আমার সরকারের কাছে প্রশ্ন, তারা কি ভীরু মাধবী? তাদের কি পদক্ষেপ নিতে অসুবিধা হয়?’
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, নারীর অধিকারহীনতা, মর্যাদাহীনতা, অসম্মান ও নারীকে অবরোধে আটকিয়ে রাখার যে সামাজিক প্রবণতা, তার বিরুদ্ধে বেগম রোকেয়া আজীবন চিন্তা করে গেছেন, প্রতিবাদ জানিয়ে গেছেন, কাজ করে গেছেন—কীভাবে এই নারীসমাজকে মানুষের অধিকার ও মর্যাদা দেওয়া যায়।
নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক একটি অসাম্প্রদায়িক যে সমাজ, সেই সমাজ গঠনের লক্ষ্যে এ দেশের নারীসমাজ কীভাবে চিন্তা করবে, তা রোকেয়া তাঁর লেখনী ও কাজের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন মালেকা বানু। তিনি বলেন, রোকেয়া সুলতানার স্বপ্ন লিখেছেন। সুলতানার যে স্বপ্ন, সে স্বপ্নে তিনি কাউকে প্রতিপক্ষ নয়, তিনি নারীকে যোগ্য হিসেবে প্রমাণ করে সেখানে নারীস্থানের স্বপ্ন দেখিয়েছেন।
‘বেগম রোকেয়া শুধু আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে নয়, রোকেয়া সুলতানার স্বপ্ন ইউনেসকোর আন্তর্জাতিক মেমোরি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে’ বলে উল্লেখ করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম। তিনি বলেন, ‘পশ্চাৎপদতাকে সামনে নিয়ে আসার জন্য বিভিন্ন রকম অপতৎপরতা চলছে। আজকে ১২৫ বছর পরে আমরা যাঁরা নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করছি, আমাদের বারবার রোকেয়ার কাছে ফিরে যেতে হচ্ছে।’
এর আগে রোকেয়া দিবস উপলক্ষে শনিবার সকালে একটি শোভাযাত্রা বের করা হয়। পরে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হওয়া নারী সমাবেশে সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করা হয়। এ ছাড়া অনুষ্ঠান মঞ্চে রোকেয়ার প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন মহিলা পরিষদের নেত্রীরা।