কাপ্তাই হ্রদের পানি আবার বাড়ছে, পানিবন্দী ৬০০ পরিবার
উজানের পাহাড়ি ঢল আর টানা বৃষ্টিতে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানি আবারও বেড়েছে। এতে পানিবন্দী চার উপজেলার প্রায় ৬০০ পরিবার। হ্রদের পানির উচ্চতা বিপৎসীমায় পৌঁছে যাওয়ায় খুলে দেওয়া হয়েছে বাঁধের ১৬টি গেট। গতকাল বুধবার রাতে এ সিদ্ধান্ত নেয় কর্ণফুলী পানিবিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী, আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত হ্রদের পানির উচ্চতা ছিল ১০৮ দশমিক ৩৫ ফুট (গড় সমুদ্রপৃষ্ঠ উচ্চতা)। এই উচ্চতা ১০৮ ফুট হলেই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ধরা হয়। এই হ্রদের বাঁধের সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা ১০৯ ফুট।
চলতি আগস্টে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার কাপ্তাই বাঁধের গেট খুলে পানিনিষ্কাশন করেছে বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। এর আগে ৫ আগস্ট হ্রদের পানি বেড়ে যাওয়ায় টানা এক সপ্তাহ ১৬টি গেট খুলতে হয়েছিল। পানি কমে যাওয়ায় ১২ আগস্ট সব গেট বন্ধ করা হয়। তবে দ্বিতীয় দফায় গত শনিবার আবার পানি বাড়তে শুরু করে। মঙ্গলবার দুপুরেই পানির উচ্চতা ছিল ১০৮ দশমিক ২১ ফুট হয়ে যায়। পরে গতকাল রাতে বাঁধের গেট ছয় ইঞ্চি খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
পানিবন্দী মানুষ
হ্রদের পানি বাড়ায় রাঙামাটি সদর, লংগদু, বাঘাইছড়ি ও বিলাইছড়ি উপজেলার নিম্নাঞ্চল ডুবে গেছে। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের হিসাবে এসব উপজেলায় ছয় শতাধিক পরিবার পানিবন্দী। এর মধ্যে লংগদু উপজেলায় দুই শতাধিক, বাঘাইছড়ির আমতলীতে দুই শতাধিক, বিলাইছড়িতে শতাধিক এবং সদরে আরও ১০০ পরিবার হ্রদের পানিতে আটকা পড়েছে। এর মধ্যে লংগদু উপজেলার ১১ পরিবারের বসতঘরে পানি উঠেছে। এসব পরিবারের সদস্যরা আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন।
বাঘাইছড়ি উপজেলার আমতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের দুই ওয়ার্ডে অন্তত দুই শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অনেক বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
লংগদু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ১১টি পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে। পানিবন্দী বাকি পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় জেলেরাও। এই হ্রদ ঘিরে প্রায় ২৬ হাজার জেলে জীবিকা নির্বাহ করেন। পানি থাকায় তাঁদের জালে এখন মাছ ধরা পড়ছে না। স্থানীয় জেলে দেব কুসুম চাকমা ও বেলাল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণ সময়ের তুলনায় এখন অর্ধেকেরও কম মাছ ধরা পড়ছে। এর প্রভাব জীবিকা নির্বাহে পড়ছে।
কর্ণফুলী পানিবিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মাহমুদ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, হ্রদের পানি বেড়ে যাওয়ায় বাঁধের গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী আরও পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা তাঁরা করবেন।