শাহীনুজ্জামান প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ায় জামালপুর-২ আসন ভোটের মাঠে উত্তাপ

প্রার্থিতা ফিরে পেয়েই ভোটের মাঠে প্রচারে নেমে পড়েছেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম শাহীনুজ্জামান ও তাঁর কর্মী–সমর্থকেরা। শুক্রবার বিকেলে ইসলামপুর উপজেলার থানা মোড় এলাকায়ছবি: সংগৃহীত

হাইকোর্টে রিট করে প্রার্থিতা ফিরে পেয়ে জামালপুর-২ (ইসলামপুর) আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম শাহীনুজ্জামান পুরোদমে ভোটের মাঠে প্রচারে নেমেছেন। এতে স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচনী উত্তাপ ছড়িয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানের নির্বাচনী প্রচার অব্যাহত আছে। এই দুই প্রার্থীর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ ভোটাররা।

গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের আদেশে প্রার্থিতা ফিরে পান এস এম শাহীনুজ্জামান। আজ শনিবার দুপুরে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ইসলামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় থেকে তাঁকে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়। কাঁচি প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়ছেন তিনি। শাহীনুজ্জামান ছাড়াও এ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য জিয়াউল হক ও শাজাহান আলী মণ্ডল স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন।

এস এম শাহীনুজ্জামান বলেন, ‘ষড়যন্ত্র করে আমার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছিল। ষড়যন্ত্রের সব জাল ছিন্ন করে অবশেষে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছি। আমার প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ায় নির্বাচনী এলাকার ভোটার ও নেতা-কর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস ফিরে এসেছে। গত শুক্রবার নির্বাচনী এলাকায় আসার পর হাজার হাজার নেতা-কর্মী ও ভোটার আমাকে স্বাগত জানিয়েছেন। এতেই প্রমাণ হয় যে তাঁরা (ভোটার) আমাকেই চান। দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকার মানুষের পাশে রয়েছি। আমার প্রতি মানুষের যে উৎসাহ ও ভালোবাসা দেখছি, তাতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হলে আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।’

স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বলেন, নির্বাচনের শুরু থেকেই এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরিবর্তনের জন্য খোদ দলের প্রথম সারির নেতারাই ছিলেন। মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার আগপর্যন্ত প্রকাশ্যে সব নেতা ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হকের বিরুদ্ধে মিছিল, সভা ও সমাবেশ করেন। আর মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পর স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে কাজ করছেন অনেক নেতা-কর্মী। দলের নেতারা তো আছেনই, সেই সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে জাতীয় পার্টি। সবকিছু মিলে শেষ পর্যন্ত তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী মাঠে থেকে গেলে অবশ্যই আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফরিদুল হক খান প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক। তাঁরা কখনো নৌকার বিপক্ষে ভোট দেন না। সবকিছুর পরও বঙ্গবন্ধুর সৈনিকেরা নৌকায় ভোট দেবেন। ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কারণে চ্যালেঞ্জে পড়ার কোনো আশঙ্কা নেই।

স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জানান, যাচাই-বাছাইয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম শাহীনুজ্জামান, জিয়াউল হক ও শাজাহান আলী মণ্ডলের প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যায়। এরপর নির্বাচন কমিশনে আপিল করে জিয়াউল হক ও শাজাহান আলী মণ্ডল প্রার্থিতা ফেরত পান। কিন্তু ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থী শাহীনুজ্জামানের প্রার্থিতা বাতিলই থাকে। শাহীনুজ্জামান না থাকায় এই আসনে ভোটারদের মধ্যে তেমন কোনো উত্তাপ ও উৎসাহ ছিল না। তবে হাইকোর্ট থেকে শাহীনুজ্জামান প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার পর এলাকায় ভোটারদের মধ্যে ভোট নিয়ে উৎসাহ দেখা যাচ্ছে।

ইসলামপুর উপজেলার চরগোয়ালিনী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মো. আলিনুর ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থী এস এম শাহীনুজ্জামন। সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে, তিনজনই নির্বাচনের মাঠে থেকে যাচ্ছেন। এতে ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অনেক আগে থেকেই দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে দলীয় নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে কাজ করছেন।