বিদেশে পাঠানোর নামে টাকা নেওয়ার অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যান অবরুদ্ধ

সখীপুরের কালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জামাল হোসেন মিয়াকে পাওনাদারেরা অবরুদ্ধ করে রাখেন। বুধবার দুপুরে ইউপি কার্যালয়েছবি: প্রথম আলো

টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিদেশে লোক পাঠানোর কথা বলে টাকা নেওয়ার অভিযোগে এক ইউপি চেয়ারম্যানকে তাঁর কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনা ঘটেছে। আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কমপ্লেক্সে এ ঘটনা ঘটে। পাওনাদারেরা ওই ইউপির চেয়ারম্যান জামাল হোসেন মিয়াকে সাড়ে তিন ঘণ্টা তাঁর কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখেন। ২২ মে টাকা ফেরত দেবেন, এমন শর্তে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে নিরাপদে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে।

এর আগে ১০টি অভিযোগ তুলে ৩ মে চেয়ারম্যান জামাল হোসেন মিয়ার বিরুদ্ধে পরিষদের ১০ জন ইউপি সদস্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে অনাস্থা প্রস্তাব দিয়েছেন। এর মধ্যে বিদেশে লোক পাঠানোর কথা বলে টাকা নেওয়ার অভিযোগও ছিল। পরে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের কাছেও এই অনাস্থা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে এখনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি।

জামাল হোসেন মিয়া গত বছরের ১৭ জুলাই অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য।

পাওনাদারেরা ঘিরে রাখায় বেলা তিনটা পর্যন্ত চেয়ারম্যান ও তাঁর ছেলে ইউপি কার্যালয়েই অবরুদ্ধ ছিলেন।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী, ভুক্তভোগী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিদেশে লোক পাঠানোর কথা বলে ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে কমপক্ষে ৮৭ জনের কাছ থেকে কোটি টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন বলে পাওনাদারেরা অভিযোগ করেন। ইউপি সদস্যরা অনাস্থা প্রস্তাব দেওয়ার পর আজ বেলা ১১টার দিকে ৩০-৩৫ পাওনাদার ইউপি কার্যালয়ে এসে চেয়ারম্যানের কাছে পাওনা টাকা ও পাসপোর্ট ফেরত চান। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে দুপুর ১২টার দিকে ইউপি চেয়ারম্যানকে কার্যালয়ের ভেতরে রেখে তালা দেন পাওনাদারেরা। খবর পেয়ে চেয়ারম্যানের ছেলে ও ৫ জুন অনুষ্ঠেয় সখীপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আলমগীর হোসেন সেখানে আসেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ এসে তালা খুলে দেয়। তবে পাওনাদারেরা ঘিরে রাখায় বেলা তিনটা পর্যন্ত চেয়ারম্যান ও তাঁর ছেলে ওই কার্যালয়েই অবরুদ্ধ ছিলেন। পরে পুলিশ, পাওনাদার ও চেয়ারম্যানের সঙ্গে সমঝোতা বৈঠকে ২২ মে টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। পরে পুলিশ চেয়ারম্যান ও চেয়ারম্যানের ছেলেকে উদ্ধার করে বাড়ি পৌঁছে দেয়।

কালিয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কচুয়া গ্রামের মেহেদী হাসান, আমজাদ হোসেন, সাকিব মিয়া—তাঁরা তিনজনই চেয়ারম্যানের কাছে সরাসরি জনপ্রতি এক লাখ করে টাকা দিয়েছেন বলে প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেছেন। একই গ্রামের আবদুল আলিম একজন ইউপি সদস্যের মাধ্যমে চেয়ারম্যানের হাতে ৭২ হাজার টাকা দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। ছয় মাস পার হলেও চেয়ারম্যান ভিসা দিচ্ছেন না, এমনকি টাকাও ফেরত দিচ্ছেন না বলে তাঁরা জানান।

এ ব্যাপারে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চেয়ারম্যান জামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি সরাসরি কোনো টাকা নিইনি। মেম্বারদের মাধ্যমে ৩০-৪০ জনের কাছ থেকে ৫০ হাজার করে টাকা নেওয়া হয়েছে। ২২ মে এ বিষয়ে পুনরায় পাওনাদারদের সঙ্গে বসা হবে।’

সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ শাহিনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পাওনাদারেরা চেয়ারম্যানকে অবরুদ্ধ করেছেন, এমন খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। শিগগিরই টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে পাওনাদারদের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে।