বঙ্গোপসাগর থেকে টেকনাফের ৬ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি
গভীর সাগরে মাছ ধরে ফেরার পথে একটি ট্রলারসহ কক্সবাজারের টেকনাফের ছয় জেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে সেন্ট মার্টিনের দক্ষিণে ছেঁড়াদিয়ার নিকটবর্তী এলাকা থেকে তাঁদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।
টেকনাফ পৌরসভার কায়ুকখালিয়া ঘাট ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি সাজেদ আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গভীর সাগরে মাছ ধরে টেকনাফে ফিরছিলেন জেলেরা। ছেঁড়াদিয়া এলাকায় আসার পর তাঁদের আরাকান আর্মির একটি দল অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের একটি খালে নিয়ে যায়। আজ বুধবার সকাল ১০টা পর্যন্ত ওই ছয় জেলের সন্ধান মেলেনি। বিষয়টি নিয়ে জেলে পল্লিগুলোতে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
মাছ ধরার ট্রলারটির মালিক টেকনাফের বাসিন্দা জাকির হোসেন। তিনি বলেন, গত শনিবার আবদুল করিম মাঝিসহ ছয়জন জেলে তাঁর ট্রলারটি নিয়ে মাছ ধরতে গিয়েছেন। গতকাল ফেরার পথে বিপুল পরিমাণ মাছসহ ট্রলারটিকে আরাকান আর্মির সদস্যরা নিয়ে গেছেন। ট্রলারে থাকা এক জেলে বিষয়টি মুঠোফোনে তাঁকে জানিয়েছেন বলে দাবি করেন জাকির হোসেন।
জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘আবারও ট্রলারসহ কয়েকজন জেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার খবর পেয়েছি। বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’
টেকনাফ সদর, জালিয়াপাড়া, শাহপরীরদ্বীপ ও সেন্ট মার্টিনের আট শতাধিক ট্রলার নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরে মাছ আহরণ করে। বিজিবির দেওয়া তথ্যমতে, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে গতকাল পর্যন্ত নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে আরাকান আর্মি ৩৪৭ বাংলাদেশি জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে। এর মধ্যে বিজিবির প্রচেষ্টায় কয়েক দফায় ১৮৯ জেলেসহ ২৭টি নৌযান ফেরত আনা হয়েছে। অবশিষ্ট আরও ২১টি ট্রলারসহ ১৫৮ জনকে ফেরত আনার চেষ্টা চলছে।
সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, দীর্ঘ প্রায় ১১ মাসের যুদ্ধের পর মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীকে হটিয়ে ২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপসহ ৮০ শতাংশ এলাকার দখলে নেয় আরাকান আর্মি। এখনো সীমান্তে সংঘাত চলছে। অপহরণ ও গুলি আতঙ্কে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন রুটে দুই বছর ধরে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়। নাফ নদী দিয়ে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ কিংবা বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার সময় গুলি ছোড়া এবং অপহরণের অভিযোগ রয়েছে রাখাইন রাজ্যের সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে।