আমি পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির পরীক্ষার পক্ষে: গণপূর্তমন্ত্রী মোকতাদির চৌধুরী
গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেছেন, ‘এখন তো পাবলিক পরীক্ষা নেই বললেই চলে। উঠিয়েই তো দেওয়া হয়েছে। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির যে পরীক্ষা হতো, আমি এটার পক্ষে। এখনো পক্ষে। সরকার বা যাঁরা বড় বড় শিক্ষাবিদ আছেন, তাঁরা কেন এই পরীক্ষা উঠিয়ে দিয়েছেন, আমি জানি না। উঠিয়ে দেওয়ার অন্যতম কারণ হলো, এই বড় বড় শিক্ষাবিদের সংকীর্ণ মানসিকতা।’
আজ শনিবার দুপুরে চিনাইর শিশু মেধাবৃত্তি ফাউন্ডেশন আয়োজিত ১৯তম শিশু মেধাবৃত্তি প্রদান ও শিশু মেলায় এসব কথা বলেন মন্ত্রী উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। এই ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার চিনাইর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব (অনার্স) কলেজে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা, এই মেধাবৃত্তি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে আগামী দিনে নতুন প্রজন্ম মেধাদীপ্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে উঠবে।’
মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ‘আমরা চাই, আমাদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে দেশপ্রেমী নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠুক। তারা দেশের জন্য অবদান রাখুক। সব ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান যাতে সুউচ্চে উঠিয়ে আনা যায়, তারা যেন সে চেষ্টা করে। এমন একটি আবহ ও পরিবেশ তৈরি করার জন্য ২০০৪ সালে প্রথম এই পরীক্ষামূলক বৃত্তি শুরু করি। এখন এটি পরীক্ষামূলক নয়, এর নিজস্ব তহবিল আছে। নিজস্ব গঠনতন্ত্র আছে, সবকিছু আছে। এটা একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। বাংলাদেশ পৃথিবীর এমন একটি দেশ, যে দেশটির সঙ্গে রক্তমূল্য লেখা আছে। ৩০ লাখ মানুষ রক্ত দিয়েছে। দুই থেকে আড়াই লাখ নারী সম্ভ্রম হারিয়েছে। এই চেতনাকে যুক্ত করে যে ভাবধারা ও সংস্কৃতি গড়ে উঠবে, সেটার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যাতে আমাদের নাগরিকেরা ভবিষ্যতে বেড়ে ওঠে, এ জন্যই আমাদের এই পদক্ষেপ।’
মন্ত্রী বলেন, ‘মেধাবৃত্তি পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা পরীক্ষা পদ্ধতির একটি মানদণ্ড দাঁড় করিয়েছি। এখানে কাউকে বলতে হয় না, তোমরা কেউ নকল করবা না। এমনিতেই তারা নকল করে না। এখানে ছোট যে শিশু ক্লাস ওয়ানে পড়ে, সে এসে পাবলিক পরীক্ষার মতো পরীক্ষা দিচ্ছে। একটি আনন্দঘন পরিবেশ রাখা সম্ভব হয়েছে। শিক্ষাকে আমরা ভীতিকর কোনো প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলিনি। শিক্ষা মানে আনন্দ, ফুর্তি। এর মধ্য দিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করা। আনন্দঘন পরিবেশে পরীক্ষা দিয়ে শিশুদের মন থেকে পরীক্ষাভীতি দূর হচ্ছে।’
মেধাবৃত্তি প্রদান ও শিশু মেলা অনুষ্ঠানে চিনাইর মেধাবৃত্তি ফাউন্ডেশনের সভাপতি, ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কোষাধ্যক্ষ ফাহিমা খাতুন সভাপতিত্ব করেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোছাইন।
আয়োজকেরা জানান, গত বছরের ৯ ডিসেম্বর সদর উপজেলার চিনাইর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব (অনার্স) কলেজে শিশু মেধাবৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় জেলার ৯টির মধ্যে ৮টি উপজেলার ১৩১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ৫৫৮ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। গত ৩১ ডিসেম্বর পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এ বছর প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়া ৭৯ জন শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ৩ হাজার টাকা করে ও সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পাওয়া ১৫৬ জন শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে এককালীন আড়াই হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের ক্রেস্ট ও সনদ প্রদান করা হয়। তা ছাড়া মেধাবৃত্তি পরীক্ষায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী একজনকে দেওয়া হয় উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ডেসটিনেশন অ্যাওয়ার্ড এবং এককালীন ১২ হাজার টাকা। শিশু মেধাবৃত্তি ও শিশু মেলাকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠানস্থলের আশপাশ এলাকায় লোকজ মেলা বসেছিল।