আয় কমলেও মাহাবুব আরার সম্পদ বেড়েছে আড়াই গুণের বেশি

মোছা. মাহাবুব আরা বেগম ওরফে গিনি

জাতীয় সংসদের হুইপ মোছা. মাহাবুব আরা বেগম ওরফে গিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে গাইবান্ধা-২ (সদর) আসনে টানা তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। এবারও তিনি এ আসনে দলের মনোনীত প্রার্থী। ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনের আগে তাঁর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ছিল মোট ১ কোটি ৬৫ লাখ ১ হাজার ৫৫৯ টাকার। এবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে তাঁর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৪৬ লাখ ৮০ হাজার ৮৭৭ টাকার। শেষ ১০ বছরে তাঁর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে আড়াই গুণের বেশি। অথচ গত পাঁচ বছরে তাঁর বার্ষিক আয় প্রায় অর্ধেক কমে গেছে।  

১০ বছর আগে মাহাবুব আরা ৪২ লাখ ১০ হাজার টাকা মূল্যের গাড়িতে চড়তেন। এখন চড়ছেন ৯৭ লাখ ৩২ হাজার ৮০০ টাকার গাড়িতে। ২০১৪ থেকে দাখিল করা তাঁর তিনটি হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

দশম সংসদ নির্বাচনে মাহাবুব আরা হলফনামায় বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন ১২ লাখ ৩৯ হাজার ৪২৪ টাকা। এর মধ্যে কৃষি খাতে আয় দেখান ১৭ হাজার টাকা, বাড়ি ভাড়া থেকে ৫ লাখ ৬২ হাজার ৩৪৬ টাকা, ব্যবসা থেকে আয় ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা, শেয়ার থেকে আয় ৫ হাজার ৭৮ টাকা, সংসদ সদস্য হিসেবে সম্মানী ভাতা ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে হলফনামায় মাহাবুব আরার বার্ষিক আয় বেড়ে হয় ৪২ লাখ ৫৬ হাজার ৭৩২ টাকা। এবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় মাহাবুব আরা বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ২৪ লাখ ৮০ হাজার ৭১ টাকা।

দশম নির্বাচনের আগে হলফনামায় মাহাবুব আরার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ দেখানো হয় মোট ১ কোটি ৬৫ লাখ ১ হাজার ৫৫৯ টাকার। এর মধ্যে অস্থাবর সম্পদের হিসাবে দেখিয়েছিলেন নগদ ৯২ হাজার ৭০ টাকা, ব্যাংকে জমা ১০ লাখ ৪৬ হাজার ৫৫৯ টাকা, বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয় ৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ৪২ লাখ ১০ হাজার টাকা মূল্যের গাড়ি, ১০ ভরি সোনা (প্রতি ভরি সোনার তৎকালীন বাজারমূল্য ৫০ হাজার টাকা হিসাবে ৫ লাখ টাকা)। স্থাবর সম্পদের হিসাবে কৃষিজমির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি, তবে মূল্য দেখানো হয়েছে ১০ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। অকৃষি জমির পরিমাণও উল্লেখ করা হয়নি, তবে মূল্য দেখানো হয়েছে ৩২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ছিল ৫৪ লাখ ৫ হাজার টাকা মূল্যের বাড়ি।

একাদশ নির্বাচনে মাহাবুব আরার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ দেখানো হয় ২ কোটি ৪৬ লাখ ৭৯ হাজার ৬৫৮ টাকার। এর মধ্যে অস্থাবর সম্পদের হিসাবে দেখানো নগদ ১২ লাখ ৬ হাজার ৯৫১ টাকা, ব্যাংক জমা ৫ লাখ ৬০ হাজার ৮২৭ টাকা, শেয়ার ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা, বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র ৫৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ৬৯ লাখ ৮ হাজার ৮৮০ টাকা মূল্যের গাড়ি, ১০ ভরি স্বর্ণালংকার, যা বিবাহের দান হিসেবে উল্লেখ করেন। স্থাবর সম্পদের হিসাবে কৃষিজমির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি, তবে মূল্য দেখান ১০ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। অকৃষিজমির পরিমাণও উল্লেখ করা হয়নি, তবে মূল্য দেখান ৩২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ৩৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা মূল্যের অ্যাপার্টমেন্ট ও ১৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা মূল্যের বাড়ি দেখানো হয়।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় মাহাবুব আরার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ দেখানো হয়েছে ৪ কোটি ৪৬ লাখ ৮০ হাজার ৮৭৭ টাকার। এর মধ্যে অস্থাবর সম্পদের হিসাবে দেখিয়েছেন নগদ ১১ লাখ ২৮ হাজার ৪০৯ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৭ লাখ ১৩ হাজার ৫৪ টাকা, বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র ৩৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা, ৯৭ লাখ ৩২ হাজার ৮০০ টাকা মূল্যের গাড়ি, ১০ ভরি স্বর্ণালংকার, যার মূল্য অজানা বলে উল্লেখ করেছেন। অন্যান্য খাতে অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন ৩৭ লাখ ৯১ হাজার ৬৬৪ টাকা এবং স্থাবর সম্পদ হিসেবে নিজ নামে ২৭৪ দশমিক ৫ শতাংশ কৃষিজমি দেখিয়েছেন, যার মূল্য ১ কোটি ২ লাখ ৩৪ হাজার ৯৫০ টাকা। অকৃষিজমি ২০ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ দেখানো হয়েছে, যার মূল্য দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৩৭ লাখ ১৫ হাজার টাকা। সঙ্গে ১৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা মূল্যের ঢাকার ধানমন্ডিতে একটি ফ্ল্যাট দেখানো হয়েছে।

দশম সংসদ নির্বাচনের আগে হলফনামায় মাহাবুব আরা তাঁর স্বামীর বার্ষিক আয় দেখাননি। একাদশ সংসদ নির্বাচনে তাঁর নির্ভরশীলের নামে বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন মোট ৫ লাখ ১৮ হাজার ৪০০ টাকা। ওই নির্বাচনে তাঁর নির্ভরশীলের নামে অস্থাবর সম্পদ দেখান ৪৫ লাখ টাকা। কিন্তু কোনো স্থাবর সম্পদ দেখাননি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় মাহাবুব আরার স্বামীর আয়, স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ কোনোটাই দেখাননি।

তিন মেয়াদে সংসদ সদস্য থাকাকালীন সম্পদ বৃদ্ধির বিষয়ে কথা বলতে মাহাবুব আরা বেগমের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।