‘আমি কেন বেঁচে থাকলাম, সবাই এক সঙ্গে মরতাম’

বজ্রপাতে বজ্রপাতে স্ত্রী ও ছেলেকে হারানো বাস চালক ছাদেক মিয়ার আহাজারি। আজ ভোরে খাগড়াছড়ির দীঘিনালার মেরুং ইউনিয়নের মধ্য বেতছড়ি গ্রামেছবি: সংগৃহীত

মুঠোফোনে গতকাল শনিবার রাত নয়টার দিকে স্ত্রী ও ছেলেদের সঙ্গে কথা বলেন বাস চালক ছাদেক মিয়া। তিনি তখন ঢাকা থেকে বাস নিয়ে খাগড়াছড়ির পথে। চালকদের ব্যস্ততার জীবন। তাই প্রায় সময় বাড়িতে থাকা হয় না তাঁর। কিন্তু মুঠোফোনে সব সময় কথা হয় স্ত্রী ও ছেলেদের সঙ্গে। ফোনে ছোট ছেলে আবদার করেছিল, আপেল আঙুর, বিস্কুট আর চিপস আনতে। কথা দিয়েছিলে, সব কিছু আনবেন বাড়িতে আসার সময়। ভোরে খাগড়াছড়ি পৌঁছে খবর পেলেন বাড়িতে বজ্রপাতে আগুন ধরে গেছে। তখনও জানতেন না কী ঘটেছে। সকালে বাড়িতে পৌঁছে দেখলেন সব শেষ। স্ত্রী আর ছোট ছেলেকে চেনারও উপায় নেই।

খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার মেরুং ইউনিয়নের মধ্যবেতছড়ি এলাকায় ছাদেক মিয়ার বাড়ি। আজ রোববার ভোরে হঠাৎ বজ্রপাতে পুরো বাড়িই বিধ্বস্ত হয়। পুড়ে অঙ্গার হয়ে মৃত্যুবরণ করেন বাড়িতে ঘুমিয়ে থাকা ছাদেকের স্ত্রী হাসিনা বেগম(৩০) ও ছেলে হানিফ মিয়া(৮)। বাড়ি ফিরেই সকাল থেকে ধ্বংসস্তূপের পাশে নির্বাক হয়ে বসে ছিলেন ছাদেক মিয়া। মাঝে মাঝে বিলাপ করছেন আর বলছিলেন, ‘মারা যাবে জানলে আমি কখনো গাড়ি নিয়ে যেতাম না। আমি বাড়িতে থাকলে অন্তত তাদের বাঁচাতে পারতাম। বাঁচাতে না পারলেও একসঙ্গে সবাই মরতে পারতাম। বড় ছেলেকে এখন কে দেখবে?’  

বজ্রপাতের ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় লোকজন নিহত মা ও ছেলেকে উদ্ধার করেন। আজ ভোরে খাগড়াছড়ির দীঘিনালার মেরুং ইউনিয়নের মধ্য বেতছড়ি গ্রামে
ছবি: সংগৃহীত

এমন দুর্ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে বেতছড়ি এলাকায়। এই এলাকার মানুষজন বজ্রপাতে এমন ধ্বংসযজ্ঞের কথা কখনো শোনেননি। বাড়িতে থেকেও বজ্রপাতে কারও মৃত্যু হতে পারে এটা ভাবতেই পারছেন না কেউ। নিহত হাসিনা বেগমের প্রতিবেশী রোকেয়া বেগম (৬৭) বলেন, তাঁর জীবনে তিনি কোনদিন এমন ঘটনা দেখেননি বা শোনেননি। মহূর্তের মধ্যে মানুষসহ বাড়িঘর পুড়ে ছাই। নিহত হাসিনা বেগম সম্পর্কে তার নাতনি হয়। খুব নরম স্বভাবের ছিলেন তিনি। কখনো কোনদিন কারও সঙ্গে জোরে কথা বলেনি। গত শুক্রবার বিকেলেও হাসিনার সঙ্গে গল্প করেছেন রোকেয়া। সেদিন ছেলেদের পড়ালেখা, চাকরি নিয়ে কত স্বপ্নের কথা বলল। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে তিনি এভাবে মারা গেছেন।    

স্থানীয়রা বলেন, শুক্রবার ভোরে বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন বলে বজ্রপাতে মারা যান হাসিনা বেগম ও তাঁর ছেলে হানিফ মিয়া। এ সময় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গেলে বড় ছেলে মো. হাফিজুর রহমান(১০) প্রাণে বেঁচে যায়। তাঁর চিৎকার শুনে ও আগুন দেখে প্রতিবেশিরা ছুটে আসেন। ফায়ার সার্ভিসেও খবর দেন। পরে দুজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।

মেরুং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান লাকী বেগম বলেন, ঘটনার পরপরই ফায়ার সার্ভিসের লোকজন আসে। কিন্তু তার আগেই বাড়ির সব কিছু পুড়ে যায়। পুলিশের আইনী প্রক্রিয়া শেষে লাশ নিয়ে আসা হবে। লাশ এলাকায় কবরস্থানে দাফন করা হবে।