চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে দলীয় প্রার্থী পুনর্বিবেচনার দাবিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে চিঠি দিয়েছেন দলটির চার নেতা। গত বুধবার চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির প্যাডে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ চিঠি দেওয়া হয়। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বিষয়টি জানাজানি হয়। চিঠিতে এই চারজন দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনেছেন।
চিঠিতে স্বাক্ষর করা বিএনপির এই চার নেতা হলেন পটিয়া আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য গাজী মোহাম্মদ শাহজাহান, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোহাম্মদ ইদ্রিচ মিয়া এবং দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ রেজাউল করিম ও সাইফুদ্দিন সালাম।
পটিয়া আসনের বিএনপির দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে এনামুল হককে। তিনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ও উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনেও বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচন করেছিলেন তিনি।
জানতে চাইলে দলীয় প্রার্থী পুনর্বিবেচনা চেয়ে চিঠি দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইদ্রিচ মিয়া। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এনামুল হকের সঙ্গে যাঁরা রয়েছেন তাঁদের অনেকেই চাঁদাবাজির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এটি বিভিন্ন পত্রিকায় এসেছে আবার এলাকার লোকজনের মধ্যে মুখে মুখে আলোচনা হচ্ছে।
ইদ্রিচ মিয়া আরও বলেন, এস আলম গ্রুপের জন্য বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এনামের। এ কারণে দলের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তাই তাঁরা প্রার্থী পুনর্বিবেচনার দাবি করেছেন। তবে দল যাঁকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেবে, তাঁরা তাঁর পক্ষে কাজ করবেন।
এস আলমের গাড়ি-কাণ্ড নিয়ে যত আলোচনা
গত বছরের সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রামের একটি কারখানা থেকে বিলাসবহুল কয়েকটি গাড়ি বের হওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেখা যায়, একটি কারখানা থেকে একের পর এক দামি গাড়ি বের হচ্ছে। সেখানে কয়েকজন ব্যক্তি তা তদারক করছেন।
যাঁরা ভিডিওটি শেয়ার করেছেন, তাঁদের ভাষ্য, গত বছরের ২৯ আগস্ট সন্ধ্যার পর গাড়িগুলো বের হয়। এগুলো বিতর্কিত শিল্প গ্রুপ এস আলমের গাড়ি এবং যাঁরা তত্ত্বাবধানে আছেন, তাঁরা বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত।
এ ঘটনা নিয়ে সমালোচনা হওয়ার পর বিএনপির তিন নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় কেন্দ্র। এতে তৎকালীন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হকও ছিলেন। তাঁর সদস্যপদ স্থগিত করা হয়। এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলমের (মাসুদ) মেয়ের শ্বশুর মীর গ্রুপের আবদুস সালাম সম্পর্কে এনামুল হকের মামাতো ভাই। কারখানাটি থেকে যে গাড়িগুলো বের হয়েছিল, সেটি মীর গ্রুপের। এ ঘটনার প্রায় ৪ মাস পর ২৫ ডিসেম্বর এনামুল হকসহ তিন নেতার পদ ফিরিয়ে দিয়েছিল কেন্দ্র।
তবে এস আলম–সংশ্লিষ্টতা নিয়ে চার নেতার অভিযোগ অস্বীকার করেন এনামুল হক। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জামায়াতের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। ৩ নভেম্বর তাঁকে মনোনয়ন দেওয়ার পর পটিয়ার জনগণ উৎফুল্ল।
এনামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মনোনয়ন দেওয়ার আগে অনেক যাচাই–বাছাই ও জরিপ করে যাঁর জনপ্রিয়তা রয়েছে, তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছেন। মনোনয়ন দেওয়ার আগে সবাইকে ডেকে বলেছেন, প্রত্যেকের দলের মধ্য অবদান রয়েছে; কিন্তু দল যাকে মনোনয়ন দেবে, তাঁর সঙ্গে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এ সময় উপস্থিত সবাই একমত পোষণ করেছেন। এর পরও অনেকের মান–অভিমান থাকতে পারে।’