খ্রিষ্টীয় নববর্ষকে বরণ করে নিতে সাগরকন্যা কুয়াকাটায় পর্যটকের ঢল

বছরের শেষ দিনে পর্যটকেরা সমুদ্রে স্নান করছেন। শনিবার দুপুরে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে
ছবি: প্রথম আলো

খ্রিষ্টীয় নববর্ষকে স্বাগত জানাতে ও থার্টি ফার্স্ট নাইট উদ্‌যাপন করতে হাজারো পর্যটক চলে এসেছেন কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে। স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ীদের মতে, গত বছরের তুলনায় এবার পর্যটকের সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি। দূরদূরান্তের পর্যটকদের পাশাপাশি বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ আশপাশের এলাকার দর্শনার্থীদের ভিড়ও চোখে পড়ার মতো।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খ্রিষ্টীয় নতুন বছর বরণ বা থার্টি ফার্স্ট নাইট উদ্‌যাপনের জন্য কুয়াকাটায় বড় রকমের কোনো আয়োজন নেই। তবে কুয়াকাটার অভিজাত হোটেল সিকদার রিসোর্ট অ্যান্ড ভিলা, ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা (টোয়াক), কুয়াকাটা শিল্পীগোষ্ঠী, কুয়াকাটা মাল্টিমিডিয়া, হোটেল খান প্যালেস ও নির্ঝর পিকনিক স্পটে আলাদাভাবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এসব সাংস্কৃতিক আয়োজনে ঢাকা, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা ও কলাপাড়া-কুয়াকাটার শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করবেন।

বছরের শেষ দিনে আজ শনিবার সৈকতের জিরো পয়েন্ট, জাতীয় উদ্যান, লেম্বুর চর, শুঁটকি পল্লি, রাখাইন মহিলা মার্কেটসহ আকর্ষণীয় সব পয়েন্টেই পর্যটক-দর্শনার্থীদের ঘুরে-ফিরে সময় কাটাতে দেখা গেছে। এ ছাড়া প্রতিটি খাবারের রেস্তোরাঁ, আবাসিক হোটেলগুলোতেও অতিরিক্ত ভিড় দেখা যায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীতের আমেজ কাটিয়ে অসংখ্য পর্যটক সমুদ্র স্নানে নেমেছিলেন। কেউ কেউ সৈকতে ফুটবল খেলেছেন। কেউ আবার ঘোড়ার পিঠে সওয়ার হয়ে কিংবা ঘুড়ি উড়িয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।

ভ্রমণকন্যা নামে একটি নারী দলের ৪০ জন সদস্য এসেছেন কুয়াকাটা সৈকতে। এ দলের সব সদস্যই দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা করেন। সংগঠনটির দলনেতা নুসরাত জাহান বলেন, ‘পুরোনোকে বিদায় ও নতুনকে বরণ করতে আমরা কুয়াকাটায় এসেছি। দুই দিন ধরে বেশ মজাই করছি আমরা। আমরা বছরের শেষ দিনটিতে কুয়াকাটার আকাশে ঘুড়ি উড়িয়েছি। আতশবাজি-ক্যাম্প ফায়ার করে নতুন বছরকে বরণ করার মধ্য দিয়ে আমাদের আগামীর পথচলা শুরু হবে।’

খ্রিষ্টীয় নববর্ষকে স্বাগত জানাতে অনেক পর্যটক ভিড় করছেন কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে
ছবি: প্রথম আলো

কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, কুয়াকাটায় ১৬০টি আবাসিক হোটেল-মোটেল আছে। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণির আবাসিক হোটেলের সংখ্যা ১৫। পর্যটকদের চাপে প্রতিটি হোটেলই এখন পরিপূর্ণ। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে নতুন নির্মিত হোটেলগুলো মূল্যছাড়ও দিয়েছে।

অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মোতালেব শরীফ বলেন, বিগত কয়েক বছর কুয়াকাটার হোটেল-মোটেলগুলো এমন সময়ে অনেকটা ফাঁকা ছিল। তবে এবার ব্যতিক্রম বলা যায়। এর একমাত্র কারণ হচ্ছে, যোগাযোগব্যবস্থা। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় পর্যটকদের উপস্থিতি বিগত বছরগুলোর চেয়ে কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। মৌসুমের এই সময়ে পর্যটকের ব্যাপক উপস্থিতিতে পর্যটন ব্যবসায়ীরা ক্ষতি কাটিয়ে লাভের মুখ দেখতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি।

তবে সৈকতে রাতের আলোর ব্যবস্থা না থাকা ও মোটরসাইকেলচালকদের নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন অনেক পর্যটক। মৌসুমী কবীর নামের একজন পর্যটক বলেন, ‘কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা পর্যটকদের নিরাপদ চলাফেরার জন্য এসব বিরক্তিকর পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটানো দরকার। আশা করি স্থানীয় প্রশাসন ভবিষ্যতে এসব ব্যাপারে নজর দেবে।’

কুয়াকাটা পর্যটন পুলিশের পরিদর্শক হাসনাইন পারভেজ প্রথম আলোকে বলেন, বিগত বছরের তুলনায় এবার কুয়াকাটায় পর্যটক-দর্শনার্থীদের সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি। পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। হোটেল-মোটেল এলাকাসহ সৈকত এলাকার সার্বিক নিরাপত্তারক্ষায় কয়েকটি দলে ভাগ করা হয়েছে। এ ছাড়া পর্যটকেরা সমুদ্র স্নানে নেমে যেন দুর্ঘটনায় না পড়েন, সে জন্য পর্যটন পুলিশের পক্ষ থেকে বারবার মাইকিং করে সবাইকে সতর্ক করা হচ্ছে।