ঝালকাঠিতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন শতাধিক গ্রামের মানুষ

প্লাবিত হয়েছে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণ। আজ সোমবার দুপুরেছবি: সংগৃহীত

ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে ঝালকাঠিতে দুই শতাধিক গাছপালা ভেঙে পড়েছে। জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন শতাধিক গ্রামের মানুষ। বিদ্যুৎহীন আছে অনেক এলাকা। মুঠোফোনের নেটওয়ার্কও প্রায় বিচ্ছিন্ন।

আজ সোমবার দুপুরে ঝালকাঠি শহরের পৌরসভা খেয়াঘাট এলাকার বাসিন্দা সুলতান হোসেন বলেন, ‘আমার বসতঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। রাতে আমরা আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েছি। সকালে এসে দেখি, ঘরের মালামাল সব পানিতে ডুবে আছে। এখনো পানি নামছে না। সব মালামাল নষ্ট হয়ে যাবে মনে হচ্ছে।’

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঝোড়ো বাতাসের সঙ্গে জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে জেলার নদীতীরবর্তী শহর ও গ্রামের অধিকাংশ এলাকা। জেলা শহরের সুগন্ধা নদী পাড়ের পৌরসভা খেয়াঘাট, কাঠপট্টি, কলাবাগান, সুতালড়ি এলাকায় কোমরসমান পানি। নদীর পানি বেড়েছে ৫ থেকে ৭ ফুট।

ঝালকাঠি শহরের ব্যবসায়ী আমির হোসেন বলেন, ‘আমার বসতঘর ও দোকানে পানি উঠে গেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছুই বন্ধ। এখন ঘরেও কোনো খাবার নেই। পরিবার-পরিজন নিয়ে কোথায় যাব?’

এদিকে বিষখালী নদীর পানি উপচে কাঁঠালিয়া উপজেলার অনেক বাড়িঘর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। রাজাপুর উপজেলার চরাঞ্চলের বাসিন্দাদের ঘরে ঘরে এখন কোমরপানি। বিষখালী নদীর পাঁচ কিলোমিটার অংশে বেড়িবাঁধ না থাকায় কাঁঠালিয়া, আউরা, জয়খালী, চিংড়াখালী, বড় কাঁঠালিয়া, আওরাবুনিয়া, রগুয়ারচরসহ অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কাঁঠালিয়ার রাস্তাঘাট, বসতঘর, মাছের ঘের ও ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে। স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, লাখ লাখ টাকার মাছ পানিতে ভেসে গেছে।

কাঁঠালিয়া উপজেলার লঞ্চঘাট এলাকার বাসিন্দা নুরুল হক বলেন, রাতেই তাঁর ঘরে পানি উঠেছে। এখানে কোনো বেড়িবাঁধ নেই, তাই জোয়ার হলেই ঘরে পানি ওঠে। ঘরে এখন কোমরসমান পানি। ঘরের মালপত্র নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি।

আরও পড়ুন
পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন লোকজন। সোমবার দুপুরে ঝালকাঠি শহরের কৃষ্ণকাঠি এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো
আরও পড়ুন

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলার শতাধিক গ্রামের মানুষ এখন পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। ঘর থেকে বের হতে পারছেন না তাঁরা। জেলার ৭ হাজার ৩৭০ জন নারী-পুরুষ ও শিশু আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন। তাঁদের খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। রাত থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন আছে। মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ঝোড়ো বাতাসে বিভিন্ন স্থানে দুই শতাধিক গাছ উপড়ে পড়েছে। অনেক সড়কে চলাচল বন্ধ আছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে জেলার সব স্কুল-কলেজ বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে সব ধরনের পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে।

ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম নিলয় পাশা বলেন, সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ থেকে ছয় ফুট পানি বিপৎসীমার ওপর থেকে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিতে তলিয়ে আছে অসংখ্য বাড়িঘর। আজকের দিনের মধ্যে পানি কমলে মানুষের ক্ষতি কম হবে।

আরও পড়ুন

পৌরসভা খেয়াঘাট এলাকার মাসুম হোসেন বলেন, ঘরের মধ্যে পানি ঢুকে পড়েছে। ঘরের মালামাল রেখেই দিবাগত রাত তিনটার দিকে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেন। এখনো পানির কারণে ঘরের মধ্যে যাওয়া যাচ্ছে না।

নলছিটি উপজেলার মালিপুর গ্রামের মো. হাবিবুর রহমান বলেন, তিনি খেটে খাওয়া মানুষ। তাঁর ঘরের মধ্যে হাঁটুসমান পানি। এখন মালামাল সব ভিজে গেছে। রান্না, খাওয়াদাওয়ার কোনো ব্যবস্থা করতে পারেননি। কেউ সাহায্যও করেননি।
একই গ্রামের মোবারক হোসেন বলেন, ঘরের মধ্যে পানি ঢুকে পড়েছে। তাই গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এখন অন্যের বাড়িতে গরু রাখার জন্য চেষ্টা করছেন।

জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল বলেন, জেলার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। অনেকের ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে থাকবে জেলা প্রশাসন।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন