কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে গুলিতে নিহত খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী টিপুর (৫৪) লাশ বাড়িতে পৌঁছেছে। আজ শনিবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে লাশ খুলনা নগরের দৌলতপুর এলাকার দেয়ানার হোসেন শাহ রোডের নিজ বাড়িতে লাশটি পৌঁছায়।
এর আগে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে তাঁর লাশ নিয়ে খুলনার পথে রওনা হন স্বজনেরা। রব্বানীর লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স বাড়িতে পৌঁছানোর পর তাঁকে শেষবারের মতো দেখতে ভিড় করেন বন্ধু-স্বজন, প্রতিবেশী, সহকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, রব্বানীর এমন মৃত্যু মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে তাঁদের। এলাকার একজন জনপ্রিয় কাউন্সিলরকে হারিয়ে তাঁরা শোকাহত।
দেয়ানা উত্তর পাড়ার বাসিন্দা মুন্না গাজী সাবেক কাউন্সিলর রব্বানীর সঙ্গেই থাকতেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আজ ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে লাশ এসেছে। রব্বানী জনপ্রিয় কাউন্সিলর ছিলেন। ছোট-বড়, মুরব্বি—এমন কোনো লোক নেই, যাঁকে তিনি ভালোবাসতেন না। তাঁর জনপ্রিয়তাই কাল হয়েছে। এখন অসংখ্য লোক আসছেন তাঁকে শেষবারের মতো দেখতে।
আজ সকাল পৌনে ৯টার দিকে নিহত গোলাম রব্বানীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির মূল ফটকের বাইরে রাস্তার পাশে অনেক মানুষের ভিড়। রাস্তায় ছোট ছোট দল নিচু স্বরে কথা বলছেন নিজেদের মধ্যে। বাড়ির উঠানে থাকা গ্যারেজের পাশে একটি খাটিয়ার ওপর চাদরে ঢাকা লাশ রাখা। কেউ এলে মুখটা দেখানো হচ্ছে। খাটিয়া ঘিরে বসে আছেন কয়েকজন। মাথার কাছে তাঁর ১৩ বছরের ছেলে রাহাত বসে আছে। সে একদম নির্বাক। সাত বছরের মেয়ে অধরা বুঝতেই পারছে না, তার বাবা আর ফিরবেন না।
এলকায় মাইকিং করে জানানো হচ্ছে, আজ দুপুরে উত্তর দেয়ানা মাঠে সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রব্বানীর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর সরকারপাড়া কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।
রব্বানীদের প্রতিবেশী মো. সোহাগ সরদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাগে বড় ভাই, জানের চাইতে প্রিয় বড় ভাই। খবর যখন শুনলাম, কষ্টে বুকটা ফাইটে যাচ্ছে। কলজেটা ফাইটে যাচ্ছে। আমাগে ভাই চলে গেল। দুই–তিন মাস আগে শেষবার কথা হয়েছে ভাইয়ের সঙ্গে। এর পর ওই ফেসবুকে দেখতাম। আওয়ামী লীগ করত তো। হাসিনা পলায়ে যাওয়ার পর বাইরে বাইরে থাকিছে। এই এলাকায় যদি থাকত, ভাইয়ের কিছু হতো না।’
রব্বানীর বাবা গোলাম আকবর বারান্দায় বসা ছিলেন। একদম চুপচাপ। আক্ষেপ করে বললেন, ‘আমার সামনে আমার ছেলে মারা যাবে, এটা কখনো ভাবিনি। দুয়েকজন নাকি ধরা পড়েছে। যারা এই কাজ করেছে, তাদের বিচার হোক, তারা সবাই ধরা পড়ুক। আমাদের এলাকার লোকই এটা করেছে। আর কীই–বা বলার আছে!’
স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, ছাত্রজীবনে গোলাম রব্বানী ছাত্রমৈত্রীর রাজনীতি করতেন। পরবর্তী সময়ে চরমপন্থী দলে সম্পৃক্ত হন। আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তিনি এলাকায় ফিরে স্বাভাবিক জীবন যাপন শুরু করেন। যোগ দেন স্বেচ্ছাসেবক লীগে। একপর্যায়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতির পদ পান। ২০১৫ সালে দৌলতপুরে খুন হন বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির নেতা শেখ শহীদুল ইসলাম ওরফে হুজি শহীদ। এ মামলায় গোলাম রব্বানীকে প্রধান আসামি করা হয়।
গত বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সিগাল পয়েন্টে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয় গোলাম রব্বানীকে। তিনি খুলনা সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। গত ২৬ সেপ্টেম্বর দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরের সঙ্গে তাঁকেও অপসারণ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
হত্যার ঘটনায় খুলনা সিটি করপোরেশনের সদ্য অপসারিত ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ হাসান ইফতেখার এবং কক্সবাজারের স্থানীয় এক বাসিন্দাকে আটক করেছে র্যাব। গোলাম রব্বানীকে মাথায় গুলি করে হত্যার ঘটনা পরিকল্পিত বলে ধারণা করছে পরিবার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ঘটনায় শুক্রবার বিকেলে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা করেছেন নিহত গোলাম রব্বানীর ভগ্নিপতি মো. ইউনুস আলী সেখ।