পঞ্চগড়ে এক বিদ্যালয়ে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের দ্বন্দ্বে ৪ দিন পাঠদান বন্ধ

বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের দ্বন্দ্বের জেরে পাঠদান বন্ধ। বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে আটোয়ারী উপজেলার জুগিকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
ছবি: রাজিউর রহমান

পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার জুগিকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের দ্বন্দ্বে চার দিন ধরে পাঠদান বন্ধ আছে। সভাপতি ও তাঁর লোকজনের কথায় অভিভাবকেরা শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে না পাঠানোর কারণে শিক্ষকেরা অলস সময় পার করছেন। তবে এ ঘটনার জন্য সভাপতি অনিল চন্দ্র পাল ও প্রধান শিক্ষক আঞ্জুমান আরা বেগম পরস্পরকে দুষছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা তিনটার দিকে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষার্থী না আসায় কক্ষগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ ছয় শিক্ষক অফিসকক্ষে বসে সময় কাটাচ্ছেন। তাঁদের সঙ্গে বসে আছেন বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম নৈশ্যপ্রহরীও। এতে ১৯৩২ সালে স্থাপিত প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে স্থবিরতা নেমে এসেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত সোমবার সকালে বিদ্যালয়ে এসে প্রধান শিক্ষক আঞ্জুমান আরা বেগম ও সহকারী শিক্ষক শামসুন নেহারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলেন পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিসহ কয়েকজন অভিভাবক। বিদ্যালয়ে ঠিকমতো পাঠদান হয় না এবং শিক্ষকেরা পাঠদান না করে নিজেদের খেয়ালখুশিমতো বিদ্যালয় পরিচালনা করেন বলে অভিযোগ তাঁদের। একপর্যায়ে তাঁরা বিদ্যালয়ে আসা শিক্ষার্থীদের বের করে নিয়ে যান। এতে সোমবার পাঠদান বন্ধ হয়ে যায়। পরদিন মঙ্গলবার কোনো শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসেনি। ওই দিন দুপুরে বিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে পঞ্চগড়-আটোয়ারী সড়কের এক পাশে দাঁড়িয়ে প্রধান শিক্ষক আঞ্জুমান আরা বেগম ও সহকারী শিক্ষক শামসুন নেহারের বদলির দাবি জানিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।

মানববন্ধনে বিদ্যালয়টির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি অনিল চন্দ্র পাল নেতৃত্ব দেন। মানববন্ধনে কয়েকজন অভিভাবক, শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় বাসিন্দারা অংশ নেন। মানববন্ধনে অভিযোগ করা হয়, প্রধান শিক্ষক আঞ্জুমান আরা বেগম দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ে থাকায় তিনি নিজের খেয়ালখুশিমতো বিদ্যালয় পরিচালনা করেন। কোনো কথা বলতে গেলে অভিভাবকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এতে দিন দিন বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় বর্তমানে কাগজে–কলমে শতাধিক শিক্ষার্থী থাকলেও প্রতিদিন সর্বোচ্চ ২০ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকে। এই দুই শিক্ষকের অনিয়ম বন্ধ করতে তাঁদের বদলি করা না হলে অভিভাবকেরা তাঁদের ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠগ্রহণে পাঠাবেন না বলে হুমকি দেন। গত বুধবার থেকে কোনো শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসছে না।

জুগিকাটা এলাকার বাসিন্দা ফুলেশ চন্দ্র বর্মণ ও পাতলী রানী দম্পতি বলেন, জুগিকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে তাঁদের বড় মেয়ে আর প্রথম শ্রেণিতে ছোট ছেলে পড়ে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও অপর একজন শিক্ষকের বদলির দাবিতে আন্দোলন চলছে। এ জন্য তাঁদের দুই সন্তানকে স্কুলে পাঠাচ্ছেন না। স্কুলের সভাপতি বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে এ ঘটনার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে নিষেধ করেছেন।

এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা বিদ্যালয়ের রুটিন মেইনটেন্যান্সের (রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা) জন্য ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ পাই। সেখান থেকে ভ্যাট বাদ দিয়ে ৩৪ হাজার ৮০০ টাকা উত্তোলন করে কাজ করানো হয়। ওই টাকা থেকে সভাপতি অনিল চন্দ্র পাল চার হাজার টাকা দাবি করছিলেন। ওই টাকা না দেওয়ায় তিনি আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে সোমবার লোকজন নিয়ে বিদ্যালয়ে এসে শিক্ষকদের হুমকি-ধমকি দিয়ে শিক্ষার্থীদের বের করে নিয়ে যান।’ এ ঘটনায় বুধবার আটোয়ারী থানায় এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি অনিল চন্দ্র পাল বলেন, শিক্ষকেরা ঠিকমতো পাঠদান করেন না। কোনো অভিভাবক কিছু বলতে গেলে শিক্ষকেরা অভিভাবকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। শিক্ষকেরা দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরীর কক্ষে অতিরিক্ত একটি বিছানা করে তাঁদের বাচ্চাদের ঘুমানোর কথা বলে নিজেরা ঘুমান। তাঁর অভিযোগ, সম্প্রতি বিদ্যালয়ের স্লিপ ও রুটিন মেইনটেন্যান্সের জন্য ৩ দফায় ৯০ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে। সেখান থেকে ৫০ হাজার টাকার মতো খরচ করে বাকি টাকা প্রধান শিক্ষক আত্মসাৎ করেছেন।

আটোয়ারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মাসুদ হাসান বলেন, বিদ্যালয়ের সভাপতির কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তিনি দাপ্তরিকভাবে অভিযোগ করতে পারতেন। কিন্তু তিনি শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসতে বাধা দিতে পারেন না। প্রধান শিক্ষককে থানায় অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় বিষয়টি নিয়ে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।