অধ্যক্ষের অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল চায় ছাত্রলীগ, অধ্যক্ষ বলছেন ‘জীবন ঝুঁকিতে’

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর কলেজের অধ্যক্ষের অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল চেয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সংবাদ সম্মেলনছবি: প্রথম আলো

‘গুলি করে উড়িয়ে দেওয়ার’ হুমকি দেওয়ায় কুষ্টিয়ার দৌলতপুর কলেজের অধ্যক্ষ ও আওয়ামী লীগ নেতা ছাদিকুজ্জামান খান সুমনের দুটি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের দাবি জানিয়েছে ছাত্রলীগ। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এই দাবি জানান উপজেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

গতকাল বুধবার দুপুরে কলেজের অধ্যক্ষের দেহরক্ষী, ব্যক্তিগত সহকারীসহ কর্মকর্তারা ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের ‘শটগান দিয়ে গুলি করে উড়িয়ে দেওয়ার’ হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠে। এর জেরে দৌলতপুর কলেজে ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়ে অধ্যক্ষের প্রাইভেট কার ভাঙচুর করেন। ঘটনার পর কলেজ ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সংবাদ সম্মেলন করে উপজেলা ছাত্রলীগ।

এদিকে এই সংবাদ সম্মেলনের পর আজ রাত পৌনে আটটায় কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে অধ্যক্ষ ছাদিকুজ্জামান খান বলেন, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিরোধের কারণে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। কলেজে ছাত্রলীগের হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রেজাউল হক চৌধুরী ও তাঁর ভাই বুলবুল আহম্মেদ টোকেন চৌধুরীর নির্দেশে হয়েছে। অধ্যক্ষের জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

ছাত্রলীগের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন দৌলতপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আমানউল্লাহ আমান। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত মঙ্গলবার দৌলতপুর কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভর্তি ফি এবং অনার্স কোর্সের ফরম পূরণের অতিরিক্ত খরচ কমানো, কলেজ ক্যাম্পাসে স্থায়ী ক্যান্টিন নির্মাণ এবং ৭ জুন ছয় দফা দিবস উপলক্ষে কলেজে অনুষ্ঠান করার অনুমতিসহ বেশ কয়েকটি দাবি নিয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় অধ্যক্ষ শিক্ষার্থীদের অপমান করেন। কলেজে কোনো ছাত্রলীগের রাজনীতি চলবে না বলে জানান অধ্যক্ষ।

আরও পড়ুন

উপজেলা ছাত্রলীগের অভিযোগ, গতকাল দৌলতপুর উপজেলা ছাত্রলীগের নেতারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে দাবিগুলো আবারও পুনরায় বিবেচনা করার জন্য অধ্যক্ষ ছাদিকুজ্জামান খানকে অনুরোধ করেন। এ সময় অধ্যক্ষ ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর লাইসেন্স করা অস্ত্র দিয়ে শিক্ষার্থীদের গুলি করতে যান। এর প্রতিবাদে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা কলেজ ক্যাম্পাসে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করতে গেলে অধ্যক্ষের অনুগত রাজু, বিদ্যুৎ, ছোটন খা, মমিনুর রহমান মোহন তাঁদের ওপর চড়াও হন। সাধারণ শিক্ষার্থীসহ ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা দিগ্‌বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন।

কুষ্টিয়া দৌলতপুর কলেজের অধ্যক্ষের গাড়ি ভাঙচুর করা হচ্ছে। বুধবার দুপুরে
ছবি: সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে নেওয়া

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগের নেতারা অভিযোগ করেন, ছাদিকুজ্জামান খান তাঁর বৈধ অস্ত্র দিয়ে গুলি করতে যাওয়ার ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও কলেজের ভূগোল বিষয়ের প্রদর্শক জহুরুল আলমকে গুলি করতে গিয়েছিলেন। সেই সময় জহুরুল আলম দৌলতপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেছিলেন। তাই প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জোর দাবি, এই অধ্যক্ষের অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলসহ তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হোক।

কলেজের কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছাদিকুজ্জামান দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। নিজস্ব নোয়া গাড়িতে তিনি কলেজে যান। তাঁর দুটি আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। একটি শটগান। আরেকটি পিস্তল। কলেজে যাওয়ার পর শটগান গাড়িতে রেখে পিস্তল পকেটে নিয়ে কার্যালয়ে যান।

এদিকে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবে রাত পৌনে আটটায় সংবাদ সম্মেলন করেন ছাদিকুজ্জামান খান। এ সময় তাঁর সঙ্গে কলেজের কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। দৌলতপুর কলেজের ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অধ্যক্ষ বলেন, দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি নৌকার মনোনীত প্রার্থী আ ক ম সরোয়ার জাহানের নির্বাচনী প্রধান এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন। এ নিয়ে বর্তমান সংসদ সদস্য রেজাউল হক চৌধুরী এবং তাঁর ভাই টোকেন চৌধুরী ক্ষিপ্ত ছিলেন তাঁর প্রতি। সম্প্রতি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে টোকেন চৌধুরী নির্বাচিত হওয়ার পর আরও ক্ষিপ্ত হন।

জীবনের ঝুঁকিতে আছেন উল্লেখ করে অধ্যক্ষ বলেন, গতকালের ঘটনায় দুই ভাইয়ের নির্দেশে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে লাঠি, হকিস্টিক, রামদা, হাত কুড়াল, চাপাতিসহ দেশি অস্ত্র নিয়ে বেআইনিভাবে কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। অধ্যক্ষের নাম ধরে গালিগালাজ এবং দোতলা থেকে নিচের দিকে আসতে বলেন। তাঁরা মারধর করেন। গাড়ি ভাঙচুর করেন। এই ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে মিথ্যাচার করে মিথ্যাকে সত্য বানানোর চেষ্টা করছে ছাত্রলীগ।