বিশ্বকাপের উন্মাদনা নেই কয়রার নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে

বিশ্বকাপের উন্মাদনা নেই খুলনার কয়রা উপজেলার নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে। কয়রার গোবরা এলাকার লেয়াকত ঢালী প্রস্তুতি নিচ্ছেন নদীতে মাছ ধরতে যাওয়ার
ছবি: প্রথম আলো

খুলনার সর্বদক্ষিণের কয়রা উপজেলার গোবরা গ্রাম। গ্রামের পাশ দিয়ে এঁকেবেঁকে বয়ে গেছে কপোতাক্ষ নদ। কপোতাক্ষের বেড়িবাঁধ ধরে সামনে এগোতেই দেখা হয় লেয়াকত ঢালীর সঙ্গে। বাঁধের পাশেই তাঁর বাস। বিশ্বকাপে কোন দল পছন্দ?—এমন প্রশ্ন শুনে স্থানীয় ভাষায় তিনি বলছিলেন, ‘বিশ্বকাপ দিয়ে কি পেট ভরবে? একদিন গাঙে মাছ না ধরলি প্যাটে ভাত যায় না। তাই বিশ্বকাপ খেলা নিয়ে মাতামাতি করার সময় নেই আমার।’

লেয়াকত ঢালীর এমন জবাবে সহজেই বোঝা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মতো সুন্দরবনসংলগ্ন উপকূলীয় উপজেলা কয়রার জনপদে নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে আনন্দের আতিশয্য নিয়ে আসতে পারেনি কাতার বিশ্বকাপ।

বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে এ নিয়ে কথা হয় উপকূলীয় কয়রার কয়েকজনের সঙ্গে। তাঁদের একজন খুটিঘাটা গ্রামের শ্রমিক মো. আবদুল্লাহ বলেন, ‘বিশ্বকাপ নিয়ে মাতামাতি শহরের দিকে আছে। আমাদের গ্রামগুলোতে নেই। সারা দিন পরিশ্রম করে মজুরি নিয়ে বাড়ি ফিরতে রাত হয়ে যায়। এরপর খাওয়াদাওয়া শেষ করে ঘুমানোর সময় চিন্তা করতে হয় পরের দিনের খাবারের জন্য। সে জায়গায় বিশ্বকাপ নিয়ে ভাববার সময় কই?’

কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে যখন সর্বত্র আলোচনা, তখন উপকূলের দিন এনে দিন খাওয়া মানুষদের ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে দুই বেলা খাবার জোগাড়ে। কাকডাকা ভোর থেকে সন্ধ্যা নামা পর্যন্ত, প্রায় বিরামহীন খেটে যান তাঁরা। বিশ্বকাপ তাই তাদের কাছে গুরুত্বহীন।

উত্তর বেদকাশী এলাকার ভ্যানচালক আক্তারুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্বকাপ খেলার কথা শুনে ছেলে জার্সি কিনতে চাইছিল। একটা জার্সির দাম দুই থেকে আড়াই শ টাকা। সারা দিনে আয় হয় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। তরকারি তো দূরের কথা, এক বেলার জন্য যে দেড়-দুই কেজি চাল প্রয়োজন, সেটাও ঘরে নেই। দিনের রোজগার দিনেই শেষ হয়ে যায়। জার্সি কেনার সামর্থ্য কই আমার?’

কপোতাক্ষের বুকে খেয়া পারাপারের মাঝি জালাল উদ্দীন যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কপোতাক্ষের এক পাড়ে কয়রা সদর ইউনিয়ন, অন্য পাড়ে শ্যামনগরের পদ্মপুকুর ইউনিয়ন। এক-দুইজন যাত্রী হলেই ছোট্ট নৌকাটি এক পাড় থেকে অন্য পাড়ে নিয়ে যান জালাল। দিনভর নৌকা চালিয়ে ২০০ কিংবা ২৫০ টাকা মেলে। এ দিয়েই কোনোমতে চালিয়ে নিতে হয় সংসার। জালাল বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষের দিন কাটছে কষ্টে। রাত জেগে বিশ্বকাপ খেলা দেখার সময় নেই তাদের।

উপকূলের মানুষের অবস্থা নিয়ে জানতে চাইলে কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নদীভাঙনকবলিত কয়রায় বিশ্বকাপ নিয়ে উল্লাস করার তেমন সময় পায় না এখানকার মানুষ। তারপরও খেটে খাওয়া এসব মানুষের একটু বিনোদনের জন্য বেশ কিছু মফস্বল এলাকায় প্রজেক্টরের ব্যবস্থা রয়েছে খেলা দেখার জন্য।’