দীর্ঘদিনে পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় হতাশা

সম্মেলনের দীর্ঘদিন পরেও চারটি উপজেলা ও একটি পৌর কমিটির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়নি। এতে  নেতা–কর্মীরা নিরাশ হয়ে পড়েছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলার মানচিত্র

দীর্ঘ ১৮ বছর পর চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন গত বছরের ১৪ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলন ঘিরে পদপ্রত্যাশী নেতা–কর্মীদের উৎসাহ–উদ্দীপনা দেখা দেয়। কিন্তু ওই সম্মেলনের ১৫ মাস পরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। এতে এই উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত না হওয়ায় দলীয় কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জীবননগরের মতো দামুড়হুদা,  আলমডাঙ্গা, সদর উপজেলা ও চুয়াডাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের দীর্ঘদিন পরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। এতে এসব কমিটির পদপ্রত্যাশী অনেকে নিরাশ হয়ে পড়েছেন। এই নিরাশার প্রভাব পড়েছে নেতা–কর্মীদের মধ্যে। জেলা কমিটি অনুমোদন না দেওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে এসব ইউনিটের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। জেলার সভাপতি চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ও সাধারণ সম্পাদকের আজাদুল ইসলামের মধ্য দূরত্ব থাকায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এই বিভেদের কারণে জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটিও গঠন করা সম্ভব হয়নি। এসব ইউনিটে পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকার নেতিবাচক প্রভাব আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। 

দলীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, জেলা, চার উপজেলা ও চুয়াডাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত না হওয়ায় পদপ্রত্যাশী ও বঞ্চিত নেতারা একত্র হয়ে একটি কমিটি গঠন করেছেন। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘নৌকা মঞ্চ’। ৮ জুলাই ওই রাজনৈতিক কমিটির আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। চুয়াডাঙ্গা-১ (সদর ও আলমডাঙ্গা উপজেলা) নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের তৃণমূল পর্যায়ের ত্যাগী, অবহেলিত ও বঞ্চিত নেতা-কর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি ইতিমধ্যে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

 গত বছরের ১৪ মার্চ জীবননগর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক সম্মেলন শেষে নজরুল ইসলামকে সভাপতি এবং আবু মোহাম্মদ আবদুল লতিফকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নাম ঘোষণা করেন।

প্রধান অতিথি নবনির্বাচিত সভাপতি–সাধারণ সম্পাদককে ১৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে অনুমোদনের জন্য জেলা কমিটির কাছে জমা দিতে বলেন। সে সময় পদপ্রত্যাশী অনেকেই ভেবেছিলেন এবার প্রতীক্ষার অবসান হবে। ১৫ দিনে পূর্ণাঙ্গ কমিটি চূড়ান্ত হওয়ার কথা থাকলেও গত ১৫ মাসেও তা হয়নি।

একই অবস্থা দামুড়হুদা ও আলমডাঙ্গা উপজেলায়ও। এই দুটি উপজেলায় সম্মেলনের ১৫ মাস পর এবং সদর উপজেলা ও চুয়াডাঙ্গা পৌরসভায় সম্মেলনের ১০ মাস পরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। এসব কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকেরা জানান, উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের কমিটির অনুমোদন দেয় জেলা আওয়ামী লীগ। তাঁদের দাবি, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ও সাধারণ সম্পাদক আজাদুল ইসলাম আজাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হওয়ায় তাঁদের কমিটির অনুমোদন মেলেনি।  

দলীয় নেতা-কর্মীরা জানান, গত বছরের ১২ ডিসেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতারা দুই নেতাকে (সভাপতি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ও সাধারণ সম্পাদক আজাদুল ইসলাম) আগের পদে বহাল রাখলেও মতবিরোধের কারণে তাঁরা গত আট মাসেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেননি। জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি না থাকায় এর অধীন ইউনিটগুলোতেও কমিটির অনুমোদন ঝুলে রয়েছে। ফলে ক্ষমতাসীন এই দলের গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি ইউনিট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ছাড়াই চলছে। 

কমিটি না থাকার প্রভাব প্রসঙ্গে আজাদুল ইসলাম বলেন, ‘পাঁচ মাসের মাথায় জাতীয় নির্বাচন। এবারের নির্বাচন হবে চ্যালেঞ্জিং। কমিটি থাকলে ফ্রেমওয়ার্কের মাধ্যমে সবকিছু পরিচালিত হয়। কমিটি না থাকায় আমি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সাংগঠনিকভাবে তা পারছি না। তবে একটি পক্ষ বা বিশেষ অংশ নিয়ে বা সহযোগী সংগঠন নিয়ে করতে হচ্ছে। ওনারাও (সভাপতি) আলাদা করছেন। আমরাই এখন প্রতিপক্ষ।’

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার জানান, পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় সাংগঠনিকভাবে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে নির্বাচনের আগেই জেলা কমিটি গঠন অনুমোদনসহ বাকি বিষয়গুলোর নিষ্পত্তি হয়ে যাবে।