রাঙ্গাটুঙ্গীর খুদে ফুটবলারদের পাশে কিশোর আলো

কিশোর আলোর ১২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার রাঙ্গাটুঙ্গী মহিলা ফুটবল একাডেমির খুদে খেলোয়াড়রা কেক কাটছে। সঙ্গে ছিলেন কিশোর আলোর সম্পাদক ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক। মঙ্গলবার সকালেছবি: মঈনুল ইসলাম

মাঠজুড়ে বল নিয়ে খুদে শিক্ষার্থীদের কাড়াকাড়ি। কোচ বাঁশিতে ফুঁ দিলেই থেমে যাচ্ছে বল। আবার কোচের বাঁশি। আবার মাঠে গড়াচ্ছে বল। হঠাৎ সেখানে এল সাদা রঙের একটি মাইক্রোবাস। সেদিকে এগিয়ে এলেন কোচ। গাড়ি থেকে নামলেন কিশোর আলোর একদল কর্মী।

মঙ্গলবার সকালে ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার রাঙ্গাটুঙ্গী গ্রামের জঙ্গলবিলাশ মাঠে রাঙ্গাটুঙ্গী ইউনাইটেড মহিলা ফুটবল একাডেমির খুদে ফুটবলারদের সঙ্গে এভাবে সাক্ষাৎ করতে আসেন সম্পাদক আনিসুল হকের নেতৃত্বে কিশোর আলোর একদল কর্মী।

এ সময় একাডেমির পরিচালক তাজুল ইসলাম, কোচ সুগা মুরমুসহ কিশোর আলো পরিবারের সদস্য, প্রথম আলোর দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও জেলা বন্ধুসভার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার রাঙ্গাটুঙ্গী মহিলা ফুটবল একাডেমির খুদে খেলোয়াড়দের হাতে বৃত্তির প্রথম কিস্তির টাকা তুলে দিচ্ছেন কিশোর আলোর সম্পাদক আনিসুল হক। মঙ্গলবার সকালে
ছবি: মঈনুল ইসলাম

‘যত দূর যেতে চাও তত দূর তোমার’ স্লোগানকে সামনে রেখে খুদে শিক্ষার্থীদের নিয়ে কিশোর আলোর ১২তম বর্ষপূর্তির কেক কাটা হয়। এ সময় ৪০ জন খেলোয়াড় উপস্থিত ছিলেন। পরে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ফুটবল নিয়ে বিভিন্ন খেলার আয়োজন করা হয়। ফাঁকে তারা নৃত্য পরিবেশন করে। এ সময় কিশোর আলোর পক্ষ থেকে খেলোয়াড় বৃত্তিসহ উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছে টি-শার্ট ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী।

আয়োজকেরা জানান, ইতিমধ্যে রাঙ্গাটুঙ্গী গ্রামের খুদে খেলোয়াড়েরা দেশে প্রশংসা কুড়িয়েছে। কিশোর আলোর সম্পাদকসহ প্রথম আলো পরিবারের সদস্যরা আজ তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। ভবিষ্যতে কিশোর আলো পরিবার এই খুদে খেলোয়াড়দের পাশে থাকবে। ইতিমধ্যে তাদের জন্য বছরব্যাপী খেলোয়াড় বৃত্তির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। পরে আনিসুল হক খেলোয়াড়দের হাতে বৃত্তির প্রথম কিস্তির টাকা তুলে দেন।

রাঙ্গাটুঙ্গী মহিলা ফুটবল একাডেমির খুদে খেলোয়াড়রদের হাতে কিশোর আলোর পক্ষ থেকে উপহারসামগ্রী তুলে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার সকালে
ছবি: মঈনুল ইসলাম

কিশোর আলো সম্পাদককে কাছে পেয়ে খুশি খেলোয়াড়সহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। জাতীয় দলের সাবেক খেলোয়াড় সোহাগী কিসকু বলেন, ‘কিশোর আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আমরা অনেক কিছু উপহার পেলাম। এতে আমরা অনেক খুশি।’

জবা রানী রায় নামের এক খুদে খেলোয়াড় বলে, ‘আমাদের জন্য কিশোর আলো বৃত্তির ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এই বৃত্তি আমাদের বড় খেলোয়াড় হতে অনুপ্রেরণা দেবে। আমরা কিশোর আলোর প্রতি কৃতজ্ঞ।’

ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার রাঙ্গাটুঙ্গী গ্রামের আলপথ দিয়ে খুদে খেলোয়াড়দের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছে কিশোর আলোর প্রতিনিধি দল। মঙ্গলবার সকালে
ছবি: মঈনুল ইসলাম

রাঙ্গাটুঙ্গী ইউনাইটেড মহিলা ফুটবল একাডেমির পরিচালক তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। এই বৃত্তি আমাদের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। এই একাডেমির খেলোয়াড়েরা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিশু। এই বৃত্তি তাদের জন্য অনেক উপকারে আসবে। এই টাকা দিয়ে খুদে খেলোয়াড় পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে পারবে। কিশোর আলো এই একাডেমির পাশে দাঁড়ানোয় আমরা কৃতজ্ঞ।’

কিশোর আলো সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, কিশোর আলো প্রতিষ্ঠার পেছনে উদ্দেশ্য ছিল, শিশু-কিশোরের জগৎটাকে বড় করে দেওয়া। গ্রামগঞ্জ থেকে যেসব মেয়ে ফুটবলার উঠে আসছে, তারা আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড়। রাঙ্গাটুঙ্গী ইউনাইটেড মহিলা ফুটবল একাডেমি অবাক করা কাজ করেছে। এখান থেকে ২৩ জন খেলোয়াড় ঢাকায় খেলে। দেশের মেয়েদের স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন ও পুষ্টির সমস্যা আছে। তবে তারা দেখিয়ে দিয়েছে, সুযোগ পেলে তারা পারে। এ জন্য তাদের সুযোগ করে দিতে হবে। এ জন্য তাঁরা একাডেমির ৭০ জন খেলোয়াড়কে বৃত্তির ব্যবস্থা করেছেন। সামান্য হলেও এই বৃত্তি তাদের অনুপ্রেরণা বাড়াবে।

খুদে ফুটবলারদের সঙ্গে খেলায় মেতেছেন কিশোর আলোর সম্পাদক ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক। মঙ্গলবার সকালে
ছবি: মঈনুল ইসলাম

প্রতি মাসে ৪০০ বৃত্তির টাকা দেওয়া হবে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের উপাচার্য রুবানা হকের সৌজন্যে। উপহারসামগ্রী ও আয়োজনের স্পনসর মীর আক্তার হোসেন লিমিটেডের চেয়ারম্যান সোহেলা হোসেন। পাশাপাশি সেনোরার পক্ষ থেকে কিশোরীদের উপহারসামগ্রী দেওয়া হয়।