মালিকেরা জানেন না, আবাসন কোম্পানির মানচিত্রে তাঁদের জমি

রাজশাহীর আমানা গ্রুপের বিরুদ্ধে জমি দখলের চেষ্টা ও প্রতারণার অভিযোগে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে ক্যাবের স্মারকলিপি। বৃহস্পতিবার বিকেলে
ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীভিত্তিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আমানা গ্রুপ রাজশাহীতে ‘উত্তরায়ণ আমানা সিটি’ নামের একটি আবাসন প্রকল্পের কাজ করছে। প্রকল্পের মানচিত্রের ভেতরে স্থানীয় বাসিন্দাদের জমি রয়েছে। তবে বাসিন্দারা কিছুই জানেন না। এই মর্মে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-রাজশাহীর পক্ষ থেকে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আজ বৃহস্পতিবার একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।

ক্যাব রাজশাহীর সভাপতি কাজী গিয়াস ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা এই স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন। এতে বলা হয়েছে, সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে রাজশাহীতে আমানা গ্রুপ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তারা ইভ্যালি, ডেসটিনি, যুবক, এহসান ইত্যাদি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মতো রাজশাহীতে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রচুর টাকা বিনিয়োগের নামে প্রতারণা করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। বিষয়গুলো অনতিবিলম্বে তদন্ত করে যথোপযুক্ত ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছে ক্যাব।

স্মারকলিপিতে ক্যাব আরও বলেছে, ৭ ফেব্রুয়ারি মহান জাতীয় সংসদে সংসদ নেত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে কোনো তিন ফসলি জমি নষ্ট করে কোনো ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প বা আবাসন সৃষ্টি করা যাবে না। গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিপরিষদের গুরুত্বপূর্ণ সভায় একই বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়ে তা বাস্তবায়ন করার জন্য দেশের সব ডেপুটি কমিশনারদের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে রাজশাহীতে আমানা গ্রুপ নামের একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ‘উত্তরায়ণ আমানা সিটি’ নামে একটা আবাসন প্রকল্পের কাল্পনিক ম্যাপ বা নকশা তৈরি করে প্রায় ছয় হাজার বিঘা জমি দেখাচ্ছে। এভাবে প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এই ছয় হাজার বিঘা জমির সিংহভাগই তিন ফসলি জমি, কোনোটি আবার দুই ফসলি।

নগরের ষষ্ঠিতলা এলাকার জাকির খানের ১০ কাঠা ও ১৪ কাঠার দুটি প্লট এবং তাঁর বাবা চিকিৎসক শাহজাহান খানের ১০ কাঠা জমি সেই উত্তরায়ণ আমানা সিটির মানচিত্রের মধ্যে আছে। তাঁরা ওই জমি বিক্রি করেননি। এ থেকে তাঁদের আশঙ্কা, জমি জবরদখল করা হতে পারে।

এই ছয় হাজার বিঘা জমিকে কেন্দ্র করে বা দেখিয়ে যে আবাসন প্রকল্পের কথা বলা হচ্ছে, সেই জমির অধিকাংশ মালিকই জানেন না, কীভাবে আমানা গ্রুপ তাঁদের জমিকে অন্তর্ভুক্ত করে কথিত আবাসন প্রকল্পের নামে জমি বিক্রি করছে। এদিকে যেসব গ্রাহক উত্তরায়ণ আমানা সিটি আবাসন প্রকল্পের নামে শুধু নকশা দেখেই প্লট বুকিংসহ মাসে মাসে কিস্তি প্রদান করছেন, তাঁরা প্রতারিত হবেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে ক্যাব।

উত্তরায়ণ আমানা সিটি প্রকল্পের লিফলেট
ছবি: সংগৃহীত

নগরের ষষ্ঠিতলা এলাকার জাকির খান নামের একজন ভুক্তভোগী প্রথম আলোকে বলেন, প্রকল্পের মানচিত্র দেখিয়ে আমনা গ্রুপ প্লট বিক্রি করছে। সেই মানচিত্র নিয়ে তিনি দেখেন, তাঁর দুটি প্লট এর মধ্যে পড়েছে। একটি ১০ কাঠা ও অপরটি ১৪ কাঠার। সঙ্গে সঙ্গে তিনি এর প্রতিবাদ করেছেন। পরে আমানা গ্রুপকে একটি উকিল নোটিশ পাঠান। জবাবে তাঁদের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী আনোয়ারুল কাদির জানিয়েছেন, তাঁরা এই জমি কিনতে চান। তিনি বলেছেন, সরকার অধিগ্রহণ করলে যে দাম দেবে, সেই দাম দিলে তিনি জমি বিক্রি করতে রাজি আছেন। কিন্তু পরে আর তাঁর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। এ থেকে তিনি আশঙ্কা করছেন, তাঁর জমি জবরদখল করা হতে পারে।

জাকির খান আরও বলেন, তাঁর বাবা চিকিৎসক শাহজাহান খানের ১০ কাঠা জমিও সেই মানচিত্রের মধ্যে আছে। এ রকম অনেকের জমিই আছে। তাঁরা বুঝতে পারছেন না যে তাঁদের কী করা উচিত।

রাজশাহীতে আমানা গ্রুপের জমি কেনাসংক্রান্ত দায়িত্ব পালন করেন প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী আনোয়ারুল কাদির। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কারও জমি তাঁরা জোর করে দখল করেননি। যেটুকু কিনেছেন, বাজারমূল্যের চেয়ে একটু বেশি দাম দিয়েই কিনেছেন। যেসব জমি প্রকল্পের মানচিত্রে দেখানো হয়েছে, এসব তাঁদের প্রকল্প সম্প্রসারণের ‘মাস্টারপ্ল্যান’-এর অংশ বলে উল্লেখ করেন।

জাকির খানের জমির বিষয়ে আনোয়ারুল কাদির বলেন, ওই জমির দিকে তাঁদের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য আছে। তাঁরা জমিটি কিনতে চেয়েছেন বলে উকিল নোটিশের জবাবে বলেছেন। কিন্তু জাকির খান অতিরিক্ত দাম চান। ওই দামে তাঁরা এখন ওই জমি কিনতে চান না। তবে গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করার ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন।


জানতে চাইলে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার দেওয়ান মুহাম্মদ হ‌ুমায়ূন কবীর বলেন, ক্যাবের একটি স্মারকলিপি পেয়েছেন। তিনি জেলা প্রশাসককে তদন্তের জন্য একটি নির্দেশনা দেবেন। কোনো অনিয়ম থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।