১১ প্রজাতির আম চাষে সফল জাহাঙ্গীর

আমের বাগান করার জন্য তাঁর ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এসব জাতের আমের চারা সরকারি নার্সারিসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করেছেন তিনি।

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার মো. জাহাঙ্গীর আলমের বাগানে ১১ জাতের আম চাষ করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার পৌর সদরের শ্রীরামদী এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার মো. জাহাঙ্গীর আলম তাঁর বাগানে ১১ প্রজাতির আম চাষ করেছেন। বাড়ির সামনের পরিত্যক্ত ডোবা ভরাট করে সেখানে সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে এসব আমের চাষাবাদ করছেন তিনি। জাহাঙ্গীরের আশা, আমের মৌসুম শেষ হওয়ার পর এসব আম বাজারে উঠবে। তখন প্রতি কেজি আম বিক্রি হবে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়।

পাকুন্দিয়া পৌর সদরের শ্রীরামদী গ্রামে জাহাঙ্গীর আলমের (৫৬) বাড়ি। বাড়ির সামনের পরিত্যক্ত ৯ শতাংশ জায়গায় তিনি এ আমের বাগান গড়ে তুলেছেন। গত মঙ্গলবার জাহাঙ্গীরের আমবাগান ঘুরে দেখা যায়, গাছে ঝুলছে নানা রঙের বিভিন্ন প্রকারের আম। কাঁচাপাকা আমে ভরে গেছে বাগান। থোকায় থোকায় ঝুলছে হালকা খয়েরি, হালকা কাঁচা হলুদ ও সবুজ রঙের আম। পোকামাকড় থেকে রক্ষা করতে কিছু আম ফ্রুট ব্যাগে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে। 

জাহাঙ্গীর বলেন, তাঁর বাগানে বারি-৪, থাই বানানা ম্যাঙ্গো, আমেরিকান রেড পালমার, কিং অব চাকাপাত, পালমার, বারি-১১, তাইওয়ান গ্রিন, কিংসটোন প্রাইড, কিউজাই, মিয়াজাকি ও থাই বারোমাসি আম আছে। আমের বাগান করার জন্য তাঁর ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এসব জাতের আমের চারা সরকারি নার্সারিসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করেছেন তিনি।

জাহাঙ্গীর বলেন, তাঁর লক্ষ্য একটাই, শুধু মৌসুমের কয়েক মাস নয়, যেন সব সময় মানুষ চাইলে আম খেতে পারেন। দেশে সাধারণত মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত এ চার মাসকে আমের মৌসুম হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে এই বাগান থেকে বছরজুড়েই আম মিলবে। প্রথমবারই তিনি ভালো ফলন পাওয়ার আশা করছেন। এলাকায় এখন তাঁর বাড়িটি ‘আমবাগান বাড়ি’ হিসেবে পরিচিত হয়ে গেছে।

কীভাবে এ বাগান করার পরিকল্পনা মাথায় আসল?- এর জবাবে জাহাঙ্গীর বলেন, আগে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঢাকায় থেকে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা শেষ করে যে যার মতো ব্যস্ত হয়ে যায়। এরপর স্ত্রীকে নিয়ে তিনি গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন। এ সময়টা কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সেটা ভাবছিলেন তিনি। একদিন ইউটিউবে আমবাগান দেখে এর প্রতি আগ্রহ জাগে তাঁর।

পরে নিজ বাড়ির আঙিনার ডোবা আগাছা পরিষ্কার করে প্রায় ৯ শতাংশ জমিতে আমবাগান গড়ে তোলেন। বাগানে চার জাতের আম থাকলে আশপাশে বাড়ির উঠান ও আঙিনায় আরও ছয়-সাত ধরনের আমগাছ রোপণ করেন। এভাবে তাঁর মূল বাগানসহ আশপাশে ১১ প্রজাতির আমগাছ রয়েছে। 

জাহাঙ্গীর আরও বলেন, ‘অনেকেই আগে থেকে অর্ডার দিয়ে রেখেছেন আম নেওয়ার জন্য। মনে হয় আমবাজারে নিয়ে বিক্রি করতে হবে না। বাগান থেকেই মানুষ নিয়ে যাবেন। এক সপ্তাহের মধ্যে আমি আম বিক্রি শুরু করব।’

পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নূর-ই-আলম বলেন, জাহাঙ্গীরের বাগানের আম বিষমুক্ত। কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী জাহাঙ্গীর কোনো কীটনাশক ব্যবহার করেননি। অথচ ফলবাগানগুলোয় কৃষকেরা অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করেন। এতে ফলের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যায়, যা দেহের জন্য ক্ষতিকর। এ ছাড়া বাগানে প্রচুর পরিমাণে ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহার করা হয়েছে। যাঁরা নিরাপদ আম উৎপাদনের চেষ্টা করছেন, তাঁরা কীটনাশক ব্যবহার না করে ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহার করতে পারেন। 

নূর-ই-আলম আরও বলেন, এই বাগানে বেশ কয়েক প্রজাতির আম চাষ করা হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে। বাজারে যখন মৌসুমের আম থাকবে না, তখন এই আমগুলো পাকবে ও বাজারে যাবে। ফলে জাহাঙ্গীর লাভবান হবেন। জাহাঙ্গীরের এ আমবাগানের ফলন দেখে এখন এলাকার অনেকেই আম চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।