র‌্যাগিংয়ের দায়ে ছাত্রলীগের কর্মীসহ ১৬ শিক্ষার্থী হল থেকে বহিষ্কৃত

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
ফাইল ছবি

র‌্যাগিংয়ে জড়িত থাকার দায়ে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ শিক্ষার্থীকে সব হল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। গত বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. কামরুজ্জামান চৌধুরী প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সাজাপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা ব্যবসায় প্রশাসন (বিবিএ) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষ প্রথম সেমিস্টারে পড়েন। তাঁদের মধ্যে পাঁচজন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এর আগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ মুজতবা আলী হলের ১১১ নম্বর কক্ষে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের প্রথম বর্ষ প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থীদের ডেকে নিয়ে র‌্যাগ দিয়েছিলেন অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা।

একই সিন্ডিকেট বৈঠকে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র জীবন চন্দ্র সেনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়। কিছুদিন আগে ওই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে প্রকাশ্যে চড় মারেন। পরে এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি অভিযোগের সত্যতা পান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. কামরুজ্জামান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, র‌্যাগিংয়ের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ১৬ শিক্ষার্থীকে এ শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তাঁদের হলে ঢোকার ক্ষেত্রেও স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এ ছাড়া ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেকোনো শৃঙ্খলাবিরোধী কাজে জড়িত হলে কঠোর শাস্তি প্রদান করা হবে মর্মে তাঁদের নোটিশ দেওয়া হবে।

বহিষ্কারের তালিকায় থাকা শিক্ষার্থীরা হলেন মো. পাবন মিয়া, মো. রিয়াজ হোসেন, পায়েল আহমদ, মো. খালেদ সাইফুল্লাহ, রামিম আহমদ, মো. রাকিব হোসেন, অশেষ চাকমা, সৌরভ নাথ, শরিফুল ইসলাম, অনিক দাস, মো. ফাহিম মিয়া, নয়ন চন্দ্র দে, মো. তোহা মিয়া, মো. আশিক হোসেন, মো. আল আমিন ও মো. আপন মিয়া।
এদিকে র‌্যাগিংয়ের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ২২ ফেব্রুয়ারি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়ে পাঁচ শিক্ষার্থীকে তখন সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছিল। পরে তদন্ত কমিটি ঘটনার সঙ্গে সাময়িকভাবে বহিষ্কৃত পাঁচজনসহ সর্বমোট ১৬ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে।

সাময়িকভাবে তখন বহিষ্কৃত পাঁচজন শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গেছে। তবে তাঁদের দলীয় পদ নেই। এই পাঁচজন হলেন মো. আপন মিয়া, মো. আল আমিন, মো. পাবন মিয়া, মো. রিয়াজ হোসেন ও মো. আশিক হোসেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতারা জানিয়েছেন, আরও যাঁরা এ ঘটনায় জড়িত, তাঁদের মধ্যে অন্য ছাত্রসংগঠনের কর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থী আছেন।

প্রক্টর মো. কামরুজ্জামান চৌধুরী প্রথম আলোকে জানান, বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। তাঁরা একত্রে সৈয়দ মুজতবা আলী হলে ১০ নবীন শিক্ষার্থীকে র‌্যাগ দিয়েছিলেন। এসব নবীন শিক্ষার্থী যখন র‌্যাগ দেওয়ার জন্য ডাকা হয়েছিল, তখন তাঁরা বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানায়নি। তাই ভবিষ্যতে প্রক্টরিয়াল বিধি কঠোরভাবে মেনে চলার জন্যও তাঁদের সতর্কীকরণ নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।