ফরিদপুরে ট্রাকে আগুন দেওয়ার ঘটনায় মামলা, বাসে আগুন নিয়ে ধূম্রজাল

গত রোববার দিবাগত রাতে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পুড়ে যাওয়া বাসটি। সোমবার সকালে ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায়
ছবি: আলীমুজ্জামান

ফরিদপুরে গত রোববার সন্ধ্যায় ও গভীর রাতে একটি ট্রাক ও একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। ট্রাকে আগুন দেওয়ার ঘটনায় ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় মামলা হলেও বাসে আগুন নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি।

ট্রাকে আগুন দেওয়ার ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে কোতোয়ালি থানায় ট্রাকের মালিক মো. আসাদুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা সাত-আটজনকে আসামি করে একটি মামলা করেছে। বাদী আসাদুর রহমান বলেন, ‘আমি আসামির সংখ্যা চার-পাঁচজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চেয়েছিলাম। পুলিশের পরামর্শে আসামির সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।’

আরও পড়ুন

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল প্রথম আলোকে বলেন, ট্রাকে আগুন দেওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। তবে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। বাসমালিককে মামলা করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এর আগে গত রোববার সন্ধ্যায় শহরের ধলার মোড় এলাকায় সড়কের পাশে দাঁড় করে রাখা একটি ট্রাকে (ফরিদপুর ট-১১-০৩৪১) আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ট্রাকচালক মাহবুবুর রহমান ট্রাকটি বাড়ির সামনে রেখে নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন। ট্রাকের সামনের দরজা খোলা অবস্থায় ছিল। এ ঘটনায় গতকাল ট্রাকের মালিক আসাদুর রহমান বলেছিলেন, ডিক্রিরচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অফিসের কয়েক মিটার দূরেই ধলার মোড়ে ট্রাকটি দাঁড় করানো ছিল। এর ফলে তাঁর প্রায় তিন লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

বাসে আগুন নিয়ে ধূম্রজাল

রোববার দিবাগত রাতে ফরিদপুরের নতুন বাসস্ট্যান্ডের উত্তরে টার্মিনালের পেছনের দিকে দাঁড় করে রাখা সাউদিয়া পরিবহনের ৫২ আসনের একটি বাসে (ফরিদপুর-ব-১১-০০২৪) আগুন দেওয়া হয়। ওই বাসের সামনের দিকে চালকের সহযোগী বাঁকা মাতুব্বর (৪৫) মশার কয়েল জ্বালিয়ে¦ঘুমাচ্ছিলেন। কিন্তু আগুন লাগে বাসের পেছনের দিকে।

ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা আকতার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বাসের পেছনের দিকে জানালার কাচ ভাঙা ছিল। চালকের সহযোগী বাসে ঘুমাচ্ছিলেন, কিন্তু তিনি কিছুই টের পাননি বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বাসের ইঞ্জিন ও টায়ার অক্ষত ছিল। শুধু আসনগুলো পুড়ে গেছে। বাসের ভেতরে পেট্রল বা বিস্ফোরক দ্রব্যের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। কেউ শত্রুতামূলকভাবে বাসে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সাউদিয়া পরিবহনের ওই বাসটি ফরিদপুরের অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচল করত। বাসটির মালিক ছিলেন আমিন হোসেন। তাঁর মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার সূত্রে তাঁর স্ত্রী, তিন ছেলে ও তিন মেয়ে মালিক হন। আমিনের বড় ছেলে মাজহারুল ইসলাম মারা গেছেন। জেলা মালিক সমিতিভুক্ত বাসটি দেখাশোনা করতেন প্রয়াত আমিনের দুই ছেলে ফরহাদ হোসেন ও মুরাদ হোসেন। মুরাদ বিএনপির রাজনীতি করেন। তিনি জেলা কৃষক দলের সদস্যসচিব।

ফরহাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তাঁকে শ্রমিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দিতে হচ্ছে। বাসটি টার্মিনালের ভেতরের দিকে। সেখানে কেন আগুন দেওয়া হবে। বাসের অন্যতম মালিক মুরাদ বিএনপির রাজনীতি করেন। এ জন্য বাসটিতে আগুন দেওয়া হলো কি না, বুঝতে পারছেন না। মামলাসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাসটি মালিক সমিতিভুক্ত। মামলা করলে সমিতি করবে। পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁরা মামলা করবেন না। সমিতি মামলা না করলে তাঁরা পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে পারেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা বিএনপির দুজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, বাসটির অন্যতম মালিক বিএনপির রাজনীতি করেন। এ জন্য বাসটি টার্মিনালের পেছনের দিকে থাকলেও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘটনাটিকে সরকারি দলের ‘নোংরা রাজনীতি’ বলে মন্তব্য করেন তাঁরা।