ঘরের সঙ্গে স্বপ্নও ভেসে গেছে রোজিনা বেগমের

ভেঙে যাওয়া ঘরের পাশে মাচা বানিয়ে অবস্থান করছেন রোজিনা বেগম। লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার পশ্চিম কেরোয়া গ্রামের তুলাতলি এলাকায় গত শনিবার বিকেলেছবি: প্রথম আলো

নিজের ভিটায় একটা ঘর তোলার স্বপ্ন ছিল রোজিনা বেগম ও তাঁর রিকশাচালক স্বামী আকবর হোসেনের। ঋণ করে দোচালা ঘর তুলে সেই স্বপ্ন পূরণও করেছিলেন। তবে আকস্মিক বন্যা বাড়িটিকে ডুবিয়ে দিয়েছিল।

চারদিকে এত দিন ছিল থইথই পানি। পানি সরে যাওয়ার পর মাটি নরম হয়ে পড়ায় সেই ঘরের ওপর উপড়ে পড়ে বড় একটি কড়ইগাছ। তাতে ঘরটি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়। তাঁদের দেড় বছরের ছেলেও আহত হয় তখন। এমন দুর্যোগের মধ্যে আকবর হোসেনের রিকশার ব্যাটারিটিও চুরি হয়ে যায়। রোজিনাদের স্বপ্ন যেন এই বন্যায় আক্ষরিক অর্থেই ভেসে গেছে। ঘুরে দাঁড়াবেন, সেই সামর্থ্যও নেই তাঁদের।

লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার পশ্চিম কেরোয়া গ্রামের তুলাতলি এলাকায় রোজিনাদের বাড়ি। এখন বিধ্বস্ত ঘরের পাশে মাচা বানিয়ে ছেলেমেয়ে নিয়ে থাকছেন তিনি। কিছুদিন আগেও ছোট হলেও নিজের একটা ঘর ছিল, ছিল কিছু সহায়–সম্পদও। সেসব কথা ভেবে এখন কেবলই চোখ মোছেন তিনি।

গতকাল রোববার কেরোয়া গ্রামে গেলে রোজিনার সঙ্গে কথা হয়। ভেজা চোখে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, অভাব–অনটনের সংসার। স্বামী আকবর হোসেন রিকশা চালান। বন্যার পানির কারণে রিকশাটি বাড়ির ভেতরে আনতে পারেননি। বাড়ির সামনে রেখেছিলেন। ১০ দিন আগে রিকশার ব্যাটারি চুরি হয়ে যায়। সেই থেকে স্বামীর আয়রোজগার বন্ধ। রোজিনা আক্ষেপ করে বলেন, ঘর গেল, রিকশাও গেল। আর বাকি রইল না কিছুই।

আকবর হোসেন বলেন, চারদিকে বন্যার পানি। বিদ্যুৎ-সংযোগ ছিল না। বাসায় জ্বলেনি আলোও। টানা বৃষ্টি ছিল। এক রাতে হঠাৎ গাছটি ঘরের ওপর ভেঙে পড়ে। কোনো রকমে ঘর থেকে বের হয়ে জীবন বাঁচিয়েছেন। কিন্তু ঘরের একটি কাঠ পড়ে ছেলের ওপর। এতে পেট কেটে যায়।

আকবর হোসেনের মা শম্পা বেগমের বয়স ষাট ছুঁই ছুঁই। তিনি বলেন, ‘হানিতে ভাসি গেছে সব। তিন দিন কিছুই খাই ন। একদিকে হেডের ভোক, আরেক দিকে ঘরের শোক। ঘরের শোকে মনেরে তো বুজ দিতাম হারি ন।’ (পানিতে ভেসে গেছে সব। তিন দিন কিছু খাইনি। একদিকে পেটের ক্ষুধা, অন্যদিকে ঘরের শোক। ঘরের শোকে মনকে বোঝাতে পারছি না।)

ভারী বর্ষণ আর ফেনী ও নোয়াখালী থেকে আসা ঢলে ১৯ আগস্ট ফেঁপে ওঠে রহমতখালী, মেঘনা নদী-খালের পানি। পানির তোড়ে প্লাবিত হয় লক্ষ্মীপুর সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি ও কমলনগর উপজেলার কয়েক শ গ্রাম। গত শনিবার থেকে লক্ষ্মীপুরে বন্যার পানি কিছুটা কমতে শুরু করছে। তবে পানি কমার গতি খুবই ধীর। ভুলুয়া ও রহমতখালী নদীসহ খালগুলো দখলে সংকুচিত হয়ে গেছে। এ কারণে পানি নামতে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় খাল খনন ও দখলমুক্ত জরুরি।

জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খান প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, বন্যার পানি কমছে। তবে ধীরগতিতে। প্রতিদিনই উন্নতি হচ্ছে। বৃষ্টি না হলে দু-তিন দিনের মধ্যে পানি অনেক কমে যাবে। দৃশ্যমান পরিবর্তন হবে বলে আশাবাদী।